সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই রাতারাতি চলনবিলে ফসলি জমি কেটে পুকুর করা হচ্ছে। দিন দিন আবাদি জমিতে পুকুর খনন মহামারি আকার ধারণ করছে। কোন ভাবেই তা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। আর যত্রতত্র ভাবে পুকুর খননে ফলে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে চলনবিল। হুমকির মুখে পড়েছে চলনবিলের দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষক সূত্রে জানা যায়, নাটোর ও পাবনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই চলনবিল। বিশেষ করে সিংড়া উপজেলার অধিকাংশ স্থান জুড়ে এর অবস্থান। একসময় এই বিলের ঐতিহ্য ও দেশীয় মাছ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। চোখ-মন ছুঁয়ে যেত অতিথি পাখির কল কাকলিতে। আবার প্রশান্ত বুকের প্রাকৃতিক নৈসর্গকতায় দু’চোখ ভোরে যেত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও বিলের মাঝে যত্রতত্র ভাবে পুকুর খননের কারণে সংকুচিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী চলনবিল তার যৌবনকে হারিয়ে ফেলছে। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা পুকুর খনন।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সরোজমিনে চলনবিলের কলম ইউনিয়নের হিজলী বিলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রাতারাতি ৩২ বিঘা ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করছে কলিনগর গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি মো. সেন্টু মিয়া। আর পাশেই বিন্না ঘাসে পুকুর খননকারী ভেকু মেশিনটি লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সাজেদুল ইসলাম, রইচ উদ্দিন ও আবদুল হালিম এই প্রতিবেদককে বলেন, এটা হিজলী গ্রামের বড়গাড়ী বিল। জনৈক্য নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বিশাল এই ফসলি জমি লীজ নিয়ে রাতারাতি পুকুর খনন করছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতিজা মো. সেন্টু মিয়া। এতে বিলের পানি চলাচল বিঘœ ঘটবে এবং পাশবর্তী ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলনবিলের অভ্যন্তরে সিংড়া-বারুহাস রাস্তার দু’পাশে ও উপজেলার সর্বত্রই রাতারাতি অসংখ্য পুকুর খনন হয়েছে। কারণ ধানের চেয়ে মাছে লাভ বেশি হওয়ায় গত পাঁচ বছর ধরে তিন ফসলি জমি খুঁড়ে পুকুর তৈরি করছে এক শ্রেণির লোভি কৃষক। এছাড়াও কিছু অসাধু সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের দায়িত্বহীনতার কারণে চলনবিলে পুকুর খনন থামানো যাচ্ছে না। আর এভাবে অপরিকল্পিত ভাবে বিলের যেখানে, সেখানে পুকুর খননের কারণে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ক্ষতির মুখে পড়ছে বাড়ি-ঘর ও রাস্তা-ঘাট।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ নাসরিন বানু বলেন, অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে হিজলী বিলে পুকুর খনন বন্ধ ও ৫০হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তারপরও শুনছি রাতারাতি সেটি খনন করা হচ্ছে। তবে চলনবিলে পুকুর খনন বন্ধে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।