কুমিল্লার হোমনায় জুসের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে নবম শ্রেণির এক মাদরাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারী রাতে উপজেলার জয়পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে ধর্ষণের বিষয়টি পুলিশের নজরে এলে ঘটনার আটদিন পর শনিবার ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে সাত জনকে আসামি করে হোমনা থানায় একটি মামলা করেন। আসামিরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে পালিয়ে মেয়েটিকে অন্যত্র চিকি’সা করায় পরিবার। কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। আসামিরা হলো, জয়পুর গ্রামের জুয়েল রানা (২২), আল-আমিন(১৯), পারেভেজ মিয়া (১৯), জিয়া (১৭), জালাল উদ্দিন (১৭) সাকিব ((১৭) ও শাহপরান (১৭)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মেয়েটি উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের অনন্তপুর দড়িকান্দি হাজী মাজেদুল ইসলাম দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির একজন নিযমিত ছাত্রী। গত তিন মাস যাবত ওই ছাত্রী ও জুয়েল রানার মধ্যে গোপন প্রেম-ভালোবাসা চলছিল। বাবা বিষয়টি টের পেয়ে মেয়েকে জুয়েল রানার সঙ্গে মিশতে নিষেধ করেন। গত ২২ তারিখ ওই এলাকায় একটি বাৎসরিক ওরশ উপলক্ষে মেলা বসেছিল। রাত এগারোটার দিকে ওই ছাত্রী তার দুই বোন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে ওরশে গিয়ে মেলার বিভিন্ন কসমেটিকস দোকানে ঘুরাঘুরি ও কেনাকাটা করে। রাত বারোটার পরে ছাত্রীটি তাহার বোনদর সঙ্গে পূনরায় বাড়ির দিকে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে জয়পুর গ্রামের বেপারী বাড়ির মসজিদের সামনে জুয়েল রানা- “তোমার সাথে কথা আছে” বলে ডাক দেয়। দাঁড়াতে না চাইলে জুয়েল রানা জোড়াজুড়ি করে। ওই সময় তার বড় বোনের স্বামীর ফোন এলে মোবাইলে কথা বলতে বলতে দূরে চলে যায় বোন। এ সময় জুয়েল রানা সঙ্গী আল আমিনের সহায়তায় ছাত্রীটিকে দাঁড় করিয়ে তার হাতে একটি জুসের বোতল দিয়া তা খেতে বলে। ছাত্রীটি প্রথমে জুস পান করতে না চাইলেও জুয়েল রানা তাকে জোর করে জুস খাওয়ায়। এরপর সে স্বাভাবিক শক্তি ও চেতন হারিয়ে ফেলে। জুয়েল রানা তার সঙ্গী আল আমিনের সহায়তায় চাকুর ভয় দেখাইয়া মেয়েটিকে টানা-হেচড়া করে জয়পুর গ্রামের মো. আরিফুল ইসলামের একটি খালি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে অন্যরা উপস্থি ছিল। রাত সাড়ে বারোটার দিকে সেখানে ছাত্রীটিকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বিবরণে আরও জানা যায়, এ সময় মোবাইলে কথা বলা শেষ হলে তার বোনেরা তাকে পেছন ফিরে আর দেখতে পায়নি। না পেয়ে মেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে বাড়ি ফিরে পরিবারকে জানালে সবাই মিলে আবারও খোঁজাখুজি শুরু করে।
খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাঁচটার দিকে ওই গ্রামের মাহফুজ মাষ্টারের পুকুর পাড়ে রাস্তার পাশে লোকজন ওই ছ্রাতীটিকে মূমূর্ষ অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্বজনদের জানায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী তিতাস থানাধীন বাতাকান্দি বাজারের গোপাল ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসায় সে কিছুটা সুস্থ হইলে ঢাকার মহাখালীতে আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানো হয়। বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিস্তারিত জেনে এলাকার লোকজনের পরামর্শে ছাত্রীটিকে ২৭ তারিখ হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখান। দেরীতে মামলার দায়েরের কারণ হিসেবে, পরিবার দরিদ্র এবং আসামীদের ভয়ে চিকিৎসার জন্য মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
হোমনা থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, ‘ঘটনাটি প্রথমে ফেইজবুক থেকে জানতে পারি। পরে আমি নিজে ঘটনাস্থল যাই এবং ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিকটিমকে উদ্ধার করে মেডিকেল টেস্টের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। শনিবার মেয়েটির মা বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। আসামি গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যহত আছে।