নড়াইলের শাহাবাদ মাজীদিয়া কামিল মাদরাসার ৭০ বছর পূর্তিতে নবীন-প্রবীন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা, আলোচনা সভা ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) দিনব্যাপী মাদরাসা চত্বরে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে ও বর্তমান অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান, মাদরাসার সহ-সভাপতি যশোরের নওয়াপাড়ার পীর সাহেব খাজা শাহ ওয়ালিউজ্জামান, উপাধ্যক্ষ বায়েজীদ হোসেন, আবদুর রকিব, নজরুল ইসলাম, ডক্টর খিজির আহমদ জাফরী, মাদরাসার সাবেক শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর আ ফ ম আকবর হোসাইন, অধ্যাপক ডক্টর এম এম শরীফুল বারী, অধ্যাপক ডক্টর আবু সিনা, ডক্টর কামরুজ্জামান, মাওলানা জিল্লুর রহমান, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির রিন্টু প্রমুখ।
মিলনমেলায় নবীন-প্রবীন বন্ধুরা একে-অপরকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হন এবং কুশল বিনিময় করেন। সন্ধ্যার পর মাদরাসার সাবেক শিক্ষার্থী দেশবরেণ্য আলেম-ওলামাদের অংশগ্রহণে তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে শাহাবাদ এলাকায় প্রতিটি গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় আনন্দণ্ডউৎসব সৃষ্টি হয়। আত্মীয়-স্বজনসহ প্রায় প্রতিটি বাড়িতে জামাই-মেয়ের আগমন ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৭০ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে শাহাবাদ মাজীদিয়া কামিল মাদরাসা। এই মাদরাসার কল্যাণেই এলাকারটি নামকরণও করা হয়েছে-‘শাহাবাদ’। মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা যশোরের নওয়াপাড়ার পীর সাহেব মরহুম খাজা আবদুল মাজীদ শাহ। ১৯৫০ সালে খাজা আবদুল মাজীদ শাহ কর্তৃক এলাকাটি ‘আবাদ’ তথা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ায় ‘শাহাবাদ’ নামকরণ করা হয়।
মাদরাসাটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এখানে দাখিল পর্যায়ে সাধারণ বিভাগসহ বিজ্ঞান, মুজাব্বিদ ও হিফজুল কোরআন চালু আছে। এ ছাড়া আলিম পর্যায়ে সাধারণ বিভাগ, বিজ্ঞান ও মুজাব্বিদণ্ডই মাহির, ফাজিল পর্যায়ে (স্নাতক) বিএ ও বিটি আইএস এবং কামিল পর্যায়ে (স্নাতকোত্তর) হাদিস, তাফসির, ফিকহ ও আদব বিভাগ রয়েছে। এ ছাড়া আবাসিক ও অনাবাসিক হেফজখানা এবং লিল্লাহ বোডিংয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছে।
বর্তমান পরিচালক হিসেবে আছেন-নওয়াপাড়ার পীর সাহেব খাজা শাহ রফিকুজ্জামান। সভাপতি হিসেবে আছেন নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হাফিজুর রহমান ও সহ-সভাপতি নওয়াপাড়ার পীর সাহেব খাজা শাহ ওয়ালিউজ্জামান। শিক্ষক-কর্মচারী ৪৯জন। এর মধ্যে শিক্ষক আছেন ৩৬। এক্ষেত্রে পাঁচজন শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এক হাজার ৭০০। এখানে রয়েছে-জেডিসি, দাখিল, আলিম ও কামিল পরীক্ষা কেন্দ্র। পাঁচটি পাকা ভবন আছে এবং একটি চারতলা ভবন নির্মাণাধীন। মাদরাসা মার্কেটে ৩৪টি দোকান রয়েছে। সুবিশাল খেলার মাঠ ও একটি পুকুর রয়েছে। জমির পরিমাণ ১৬ দশমিক ৪৪ একর। এ ছাড়া চার একর জমিতে বনায়ন রয়েছে। গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৫০। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে কম্পিউটারের সংখ্যা ১৩টি। এদিকে নড়াইল পৌর এলাকার দুর্গাপুর ক্যাম্পাসে এক একর জমি রয়েছে। এখানে পাকা ভবনে ১৬টি কক্ষ আছে।
৭০ বছরের ঐহিত্যবাহী এ মাদরাসা থেকে অনেক শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জন করে সরকারি-বেসরকারি চাকুরিতে কর্মরত আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন অনেকেই। খুলনা ও ঢাকা বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ছাত্রছাত্রীরা ঐহিত্যবাহী এ মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বর্তমানেও শিক্ষাগ্রহণ করছেন।
মাদরাসা অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন বলেন, ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মাদরাসা চত্বর মিলনমেলায় পরিণত হয়।