মেসার্স ফাতেমা ফার্মেসির মালিক আবু বকর সিদ্দিক। চিকিৎসাশাস্ত্রে কোনো ডিগ্রি না থাকলেও চিকিৎসক পরিচয়ে দীঘদিন ধরে রোগী দেখে আসছেন তিনি। গত রোববার সন্ধ্যায় তার ভুল চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থেকে ওই ফার্মেসি মালিক আত্মগোপন করেছেন। কথিত এই চিকিৎসক নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের ওমর আলীর ছেলে।
নিহত ব্যক্তির নাম নিবারণ চন্দ্র দাস (৪৫)। তিনি সাবাই বাজার সংলগ্ন হঠাৎপাড়া গ্রামের তারাপদ দাসের ছেলে। তার মৃত্যুর খবরে স্বজন ও এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। অভিযুক্ত হাতুড়ে চিকিৎসক আবু বকর সিদ্দিকের শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
নিহত রোগীর স্বজন সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সকাল ১০টার দিকে নিবারণ চন্দ্র নিজের বাড়ির উঠানে কাজ করতে গিয়ে অসতর্কতাবশত কাঁচের টুকরো লেগে বাম পায়ের সামান্য কেটে যায় এবং কাটা অংশ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য বাড়ির অদুরে সাবাই বাজারের মেসার্স ফাতেমা ফামের্সির মালিক আবু বকর সিদ্দিকের নিকটে যান। ফার্মেসির মালিক আবু বকর সিদ্দিক রোগীর ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ কিংবা পরিচর্যা না করে তার শরীরে একটি ইনজেকশন পুশ করেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই নিবারণ চন্দ্র অস্বস্তিবোধ ও ছটফট করতে শুরু করেন। এ সময় নিবারণের স্ত্রী তার সঙ্গে ছিলেন। ইনজেকশন করার পর নিবারণ শরীর খারাপ হয়ে পড়ায় ফার্মেসির মালিক আবু বকর সিদ্দিক তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিবারণের স্ত্রী সীমা রাণী জানান, গত রোববার সকালে বাড়িতে কাজ করার সময় কাঁচ টুকরো লেগে স্বামী নিবারণের পা কেটে যায়। চিকিৎসার জন্য তাকে বাজারের ফাতেমা ফামের্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ওষুধের দোকান মালিক আবু বকর সিদ্দিক নিবারণের হাতে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। এর কিছু পরেই নিবারণ বমি-বমি ভাব অনুভব করছিলেন এবং তার শরীর প্রচ- ঘামতে শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। হামার স্বামী কখনও বাদ্যিকর, আবার কখনও দিনমজুরের কাজ করে। জ্বর-সর্দি-কাশির মতো ছোটখাট ব্যারাম (অসুখ) হলে হামরা পরিবারের ছোটবড় সবাই বক্কর (ফার্মেসির মালিক আবু বক্কর) ডাক্তারের কাছেই চিকিৎসা লেই। তার কোনো ডাক্তারি পাশ আছে কিনা হামরা তাও জানি না। এখন এলাকার মানুষজন বলোছে বক্কর ডাক্তারের নাকি কোনো ডাক্তারি পাশ কাগজ নাই। আগে জানলে ওই ডাক্তারের চিকিসা লিতাম না। মানুষজন বলোছে, বক্কর ডাক্তারের ভুল ইনজ্যাকশনের কারণেই হামার বাড়ি মানুষ (স্বামী) মারা গেছে।’
তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আবু বকর সিদ্দিকের কোনো ডাক্তারি ডিগ্রি নেই। এমনকি তার পল্লী চিকিৎসক হওয়ার লাইসেন্স নাই। অথচ তিনি নিজেকে চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এর আগেও নাকি তার ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি খুবই গুরুতর। এ ধরণের হাতুড়ে ডাক্তারকে আইনের এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।’
জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি ছাড়া একজন ফার্মেসির মালিকের চিকিৎসা দেয়ার এখতিয়ার নেই। চিকিৎসাশাস্ত্রের কোনো কিছু না জেনে চিকিৎসা দেয়া অপরাধ। তবে কেউ এ ধরণের অপরাধ করলে আমাদের তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেয়া ছাড়া শাস্তি দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু হলে থানায় অভিযোগ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহের ময়নাতদন্ত করলে কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেত।
মান্দা থানার পরিদর্শক তদন্ত তারেকুর রহমান সরকার জানান, এ ধরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।