বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন জেলা শহরে অফিস থাকা সত্বেও জনবল সংকট রয়েছে। বরিশালের কার্যালয় থেকে কর্মকর্তারাই জোড়াতালি দিয়ে ভোক্তা জণসাধারনকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কর্মকর্তা ও জনবল সংকট থাকা সত্বেও বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তাদের নিয়ে ভোক্তা ও নাগরিকদের জন্য বাজারের ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করতে চলছে তাদের কার্যক্রম।
সূত্রমতে, বরিশাল নগরীসহ বিভাগের জেলা শহর ও উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, শপিংমলে পণ্যের মোড়ক ইত্যাদি ব্যবহার না করা, ধার্যকৃত মূল্যের অধিক আদায় করা, খাদ্য পণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্য বিক্রি, ভেজাল মিশ্রন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, প্রতিশ্রুত পণ্য সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় না করার অপরাধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত আট মাসে বিভাগের ছয় জেলার ৬৪৪টি বাজারে তদারকিমূলক অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বিভিন্ন ধারা লংঘনের অপরাধে এক হাজার ৫১৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ লাখ ৫২ হাজার পাঁচশ’ টাকা অর্থ জরিমানা হিসেবে আদায় করেছে বরিশাল বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
অপরদিকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতরনার শিকার হওয়া ভোক্তারা অধিকার সংরক্ষণ দপ্তরে ৬৭টি প্রতিকারমূলক অভিযোগ দায়ের করেছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঠপর্যায়ে তদন্তে নেমে ভোক্তা কর্মকর্তারা ২২টি অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সে সকল প্রতিষ্ঠান থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের মাধ্যমে এক লাখ ৯৩ হাজার পাঁচশ’ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। এরমধ্যে জরিমানা আদায় করা অর্থ থেকে ৪৮ হাজার ৩৭৫ টাকা অভিযোগকারী ২২ জন ভোক্তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট আদায়কৃত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১৮টি অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। একইসময় অভিযোগ দায়ের করা সাতটি অভিযোগ উভয়ের মধ্যে আপোস-মীমাংসার মাধ্যমে নিস্পত্তি ও সমাধান করা হয়।
সূত্রমতে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা নিজেদের লোক ও জনবল সংকট থাকার পরেও বিভাগের ছয় জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতনতা সৃষ্টি করার কার্যক্রমের অংশহিসেবে প্রচার প্রচারনাসহ লিফলেট বিতরন অব্যাহত রেখেছেন। একইসাথে বণিক সমিতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিয়ে গণশুনানী ও ভোক্তা আইন সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর ৭৩টি সভা ও সেমিনার করেছেন।
এ বিষয়ে বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহ্ মোঃ শোহেব হোসাইন বলেন, প্রত্যেক জেলা শহরের দপ্তরগুলোতে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একজন করে সহকারী পরিচালকের প্রয়োজন। কিন্তু অনেক জেলা শহরে দপ্তর থাকলেই নেই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনবল। তাই অনেক ক্ষেত্রে কার্যক্রমের গতি থেকে যায়। তিনি আরও বলেন, পটুয়াখালী জেলার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক নিজ জেলা ও উপজেলার কাজের পরেও তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে বরগুনা জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তদারকিসহ অভিযান পরিচালনা করতে হয়। অন্যদিকে পিরোজপুর জেলা শহরে দপ্তর থাকলেও জনবল সংকটের কারণে ওই দপ্তরটি শুণ্য হয়ে পরে রয়েছে। ভোক্তাদের নাগরিক সেবার প্রয়োজনে বরিশাল বিভাগের জেলা শহরে সহকারী পরিচালক নিয়োগ প্রদানের পাশাপাশি উপজেলা শহরে জনস্বার্থে দপ্তরের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।