নড়াইলের লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকার (৪০) হত্যা মামলার প্রধান আসামি লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল শিকদারকে (৪৫) ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে লোহাগড়া থানা পুলিশ। বুধবার (১১ মার্চ) গভীর রাতে ঢাকার ঝিগাতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সামাজিক বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকারকে কুপিয়ে হত্যা করে আসামিরা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে লোহাগড়া-নড়াইল সড়কের টি-চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে বদরকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে সন্ত্রাসীরা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ৯টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
বদর লোহাগড়া ইউনিয়নের চরবগজুড়ি গ্রামের ময়ের আলীর ছেলে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ধারালো অস্ত্রের কোপে বদর খন্দকারের বাম হাতের তিনটি আঙ্গুল এবং ডান হাতের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া দুই পায়ের হাটুর নিচ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। ঘটনার দিন বদর খন্দকার চরকালনা এলাকায় নিজের ইটভাটা থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় বদরের কাছে ইট বিক্রির সাড়ে ৪ লাখ টাকা থাকলেও আসামি আকবর খন্দকার ওই টাকা নিয়ে গেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বদর খন্দকারের স্ত্রী নাজমিন বেগম বাদী হয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে লোহাগড়া থানা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে-লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও লোহাগড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল শিকদারকে।
অন্য আসামিরা হলেন-নজরুল শিকদারের বড় ভাই ইবাদত শিকদার, ভাইপো জাকারিয়া শিকদার ওরফে গফফার, ভাগ্নে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আজাদ সুজন, চাচাতো ভাই এনায়েত শিকদারসহ ১৬জন।
লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস জানান, নজরুল শিকদারসহ এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যরা হলেন-মতিউর রহমান মুন্না মোল্যা, রুহুল আমিন, রফিক মোল্যা, আলী মিয়া মোল্যা ও বাবু মোল্যা। এর মধ্যে মুন্না মোল্যা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নড়াইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দীতে আ’লীগ নেতা বদর খন্দকার হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকার হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসির দাবিতে গত ১০ মার্চ বেলা ১১টার দিকে নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের টি-চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন এলাকাবাসী। এর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে একই দাবিতে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন এলাকাবাসী।