বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকে গত এক বছরে বাংলাদেশের তিন ধাপ অবনতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের (ডব্লিউজেপি) ২০২০ সালের বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকে দেখা যায়- বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকের গত বছরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১২৬টি দেশের মধ্যে ১১২তম অবস্থানে ছিল। সংস্থাটির ২০১৮ সালের সূচকে বাংলাদেশ ১০২তম অবস্থানে ছিল। ২০১৭ সালে ১০২ ও ২০১৬ সালে তা ছিল ১০৩তম। অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর একই রয়েছে।
সারাবিশ্বে নির্ধারিত ১২৮টি দেশের ১ লাখ ৩০ হাজার খানায় জরিপ ও চার হাজার আইনজীবীর মতামত নিয়ে ডব্লিউজেপি এই সূচক ও প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার এক হাজার ব্যক্তির ওপরে তারা এজন্য জরিপ করে। জরিপকারী সংস্থা ওআরজি কোয়েস্ট সংস্থাটির হয়ে জরিপটি করে। ডব্লিউজেপির তথ্য অনুযায়ী, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারত বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। পেছনে রয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। নিম্নমধ্যম আয়ের ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২১তম। বাংলাদেশের আইনের শাসনের ক্ষেত্রে একমাত্র শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দিক থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতির অনুপস্থিতি, উন্মুক্ত সরকার, মৌলিক অধিকার, নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতার প্রয়োগ, নাগরিক ন্যায়বিচার এবং ফৌজদারি বিচারে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ মৌলিক অধিকারের দিক থেকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১২৮টি দেশের মধ্যে ১২২তম অবস্থানে রয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে নিচে, অর্থাৎ ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের পরে রয়েছে তুরস্ক, ভেনেজুয়েলা, মোজাম্বিক, চীন, মিসর ও ইরান। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। আর তলানিতে রয়েছে কঙ্গো, কম্বোডিয়া ও ভেনেজুয়েলা।
শীর্ষ অবস্থানে থাকা দেশগুলো উন্নত বিশে^র প্রতিনিধি। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের প্রাক্কালে বাংলাদেশের অবস্থান সন্তোষজনক নয়। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের শাসন নিশ্চিত করার ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা আইনের শাসন যদি না থাকে, অজর্ন যতই হোক সেগুলো বিফলে যাবে। ডব্লিউজেপির প্রতিবেদনে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দিক থেকে কিছুটা উন্নতি হওয়া আশার সঞ্চার করে। তবে মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবনতি উদ্বেগজনক। একথা সত্য যে, কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে দ্রুত বিচার পাওয়া গেছে, কিন্তু ব্যাতিক্রমই উদাহরণ হয়। তাই এই ব্যাতিক্রমগুলোকে অর্জন মনে করে সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। নাগরিক ন্যায়বিচার এবং ফৌজদারি বিচারে বাংলাদেশের অবস্থার যে অবনতি হয়েছে তা গুরুত্বসহকারে ভাববার বিষয়। আমরা আশা করি দায়িত্বশীলরা এটিকে বারবরের মতো ‘বাংলাদেশকে হেয় করার অপপ্রয়াস’ তকমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা না করে বরং বিষয়টি আমলে নিয়ে পর্যাপ্ত চিন্তাভাবনা করবেন এবং আইনের শাসন সুনিশ্চিতে মনযোগী হবেন।