‘আব্বু-আব্বু তুমি উঠো। তুমি এখানে ক্যানো। তুমি উঠো। আব্বু তুমি আমার সাথে কথা বলো।’ হাউ মাউ করে কাঁদছে আর কবরের মাটি তুলে গর্ত করছে হত্যাকান্ডের শিকার হবিবর রহমানের ৫বছরের শিশু পুত্র শামীম। আদরের ভাইয়ের পাশে একমাত্র বড় বোন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী উম্মে সায়মা ওরফে হ্যাপি(১২) বাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে। কখনো চিৎকার দিচ্ছে আবার কখনো মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে গোটা পরিবার আজ নিঃস্ব। ১৪মার্চ শনিবার বিকালে হত্যাকান্ডের শিকার হবিবর রহমানের বাড়ীতে গেলে হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। বাড়ীর উঠানে বসে অঝড়ে কাঁদছে তার বৃদ্ধা মা অবিরন বেগম(৫৫)। শোকে মুহ্যমান হয়ে ঘরের এক কোণে বসে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার স্ত্রী শাহিনা বেগম। কোলের শিশু দু’টো বাবার কবরে বসে হাউ মাউ করে কাঁদছে। ৩সপ্তাহ কেঁটে গেলেও মনে হয় হবিবরের তাজা রক্তের দাগ মুছে যায়নি এখনো। দেখে মনে হয়, হয়তো ক’দিন আগেই এ বাড়ীতে কেউ মারা পড়েছে।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের তালুক আষাঢ়ু গ্রামে ১৮ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দিন দুপুরে ওই গ্রামের হাসেন আলী ম-লের পুত্র ছমেদ আলীর(৪৫) সাথে একই গ্রামের মৃত শহীদ আলীর পুত্র সুলতান(৫৫) পূর্বে পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ধরে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সোমেদ আলীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে সুলতান আলীর লোকজনের উপর হামলা চালায়। এ সময় প্রতিপক্ষরা সুলতান আলীর শ্যালক হবিবর রহমান(৩৪) উপর হামলা চালিয়ে মাথায় দেশীয় কাস্তে দিয়ে কোপ মারে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার হবিবর রহমান(৩৪) মারা যায়। খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ শহিদুল ইসলাম(৩৫) পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ কুড়িগ্রাম সদর এলাকা থেকে তাকে আটক করে। এ ছাড়া ঘটনার পরদিন ১৯ফেব্রুয়ারী বুধবার রাতে রাজারহাট থানা পুলিশ ছমেদ আলী ম-ল(৪৫) ও এরশাদ আলী ম-ল (৪০)কে আটক করে কুড়িগ্রাম জেল হাজতে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় ১৯ ফেব্রুয়ারী রাজারহাট থানায় নিহতের মামাতো ভাই কাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে মারামারির একটি মামলা দায়ের করলে পরদিন হবিবর রহমান মারা যাওয়ায় মামলাটি হত্যা মামলায় পরিনত হয়। কিন্তু বাদীর অভিযোগ, হরিবর রহমান মারা যাওয়ার আগে তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশ মামলা রুজু করায় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনের নাম এজাহারভুক্ত করা হয়নি। ঘটনার সময় এজাহারভুক্ত নাম ছাড়াও তালুক আষাঢ়ু গ্রামের ফরমান আলী মন্ডলের পুত্র আলমগীর হোসেন(৩০), নজরুল ইসলাম(৪৫), মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মোছাঃ রংবানু বেগম, দুদু মিয়ার স্ত্রী হাফিজা বেগম(৪৮), সৈয়দ আলীর পুত্র হাকিম আলী(৫০), ছমেদ আলীর স্ত্রী জাহেদা বেগম(৩০) ও ইদ্রিস আলীর পুত্র মতি মিয়া(৩৫) হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা জানায় বাড়ীসহ এলাকাবাসীরা। এসব ব্যক্তির নাম পূণঃতদন্ত করে তাঁরা এজাহারভুক্ত করার দাবী জানান। এ ছাড়া হত্যাকান্ডের ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও পুলিশ অপর আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। ফলে অপর আসামিরা মামলা তুলে নিতে বাদী ও বাড়ীর পরিবারকে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করছে প্রতিনিয়িত। এ ঘটনায় হত্যাকান্ডের শিকার হবিবর রহমানের মা অবিরন বেগম(৫৫) ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসী দাবী করেন। তিনি তার মৃত্যুর আগে হত্যাকারীদের শাস্তি দেখে যেতে চান। তার কিশোরীকন্যা হ্যাপিও হত্যাকারীদের ফাঁসী চেয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, আমদের চোখের সামনেই হবিবর খুন। এটা আশ্চার্য্য। এরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে না। খুন করেও খুনিরা ক্যাসিনোর টাকার জোরে পার পেয়ে যেতে চায়। হায় আল্লাহ্, মানুষ বিচার করতে না পারলেও আল্লাহ্ তাদের বিচার করবে। এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরিফ উদ্দিন শেখ জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সুপারভেশন করছেন। এ ছাড়া সাক্ষ্যপ্রমানের ভিত্তিতে যদি কারো নাম চলে আসে তাদের চার্জশিটে দেয়া হবে। তবে তদন্তের খাতিরে কারো নাম সরাসরি বলা যাচ্ছে না।
১৪মার্চ শনিবার রাজারহাট থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ কৃষ্ণ কুমার সরকার নিশ্চিত করে বলেন, অপর আসামীদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।