স্কুলের শিক্ষার্থীকে পিটানোয় পারদর্শী ও ম্যানেজ পটিয়সী প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম নিজের অপরাধ ঢাকতে অভিভাবক, এসএমসি সভাপতিকে ম্যানেজ করে পার না পেয়ে এখন ইউপি সদস্যকে ম্যানেজ করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দাপ্তরিক তদন্ত শেষে প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে পৌছে যাওয়ায় প্রমানিত অপরাধকে ঢাকতে তিনি শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
স্কুলে বেতের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। শিক্ষার্থীকে প্রহার, মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন, ভীতি প্রদর্শন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম স্কুলকে বেতের ব্যবহার ও শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকসুলভ আচরণ বহির্ভূত কর্মকান্ডের নরকরাজ্যে পরিণত করেছেন। তার অযাচিত ও নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো কার্যকলাপের কারণে স্কুলে যেতে অনীহা দেখাচ্ছে শিশুরা। অন্যদিকে সরকারের শিশুবান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে। অনেকবার তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও রূঢ় আচরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বিদ্যালয়ে। বাধ্য হয়ে কিছু অভিভাবক সন্তানের উপর অবিবেচিত মারপিট ও শাসনের নামে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টির কারণ জানতে গেলে ম্যানেজে পটিয়সী প্রধান শিক্ষক এসএমসি সভাপতি ও বন্ধু শিক্ষকদের কাজে লাগিয়ে অপরাধ মিটিয়ে নিয়েছেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্কুলের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী সোমাইয়া খাতুন জিবাকে কঞ্চির লাঠি দিয়ে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে জিবার হাতের তালু রক্তাক্ত জখম করেন তিনি। কিছুদিন আগে ৩য় শ্রেণির ছাত্র বর্তমানে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সাকিবকে নির্মমভাবে পিটিয়েছিলেন এই প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া স্কুলের মায়শা, মারিয়া. জুইসহ অনেক শিক্ষার্থী তার হাতে লাঠিপেটার শিকার হয়েছে। তার অপকর্মের খবর বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম দু’জন সহকারী শিক্ষা অফিসারকে সাথে নিয়ে স্কুল পরিদর্শন করেন। অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, পরিদর্শনকালে প্রহৃত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ঘটনার সত্যতা তুলে ধরেন। অভিযুক্ত শিক্ষকও প্রহার করার কথা স্বীকার করেন। এলাকার বহু অভিভাবক ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, পত্রিকায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থান পরিদর্শন শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন প্রদান করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, তদন্তকালে শিক্ষক ও বেত্রাঘাতের শিকার শিক্ষার্থী মারপিট ও বেতের ব্যবহারের কথা স্বীকার করেন। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস হয়ে খুলনা ডিডি অফিসে চলে গেছে। এরপর থেকে অপরাধের শাস্তি থেকে নিস্কৃতি পেতে প্রধান শিক্ষক, এসএমসি’র সভাপতিসহ সদস্যদের সাথে যোগাযোগ, নিজস্ব শিক্ষক ও নিকট জনদের দিয়ে তার আক্রোশের শিকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে আঁতাত সৃষ্টির জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। শেষমেষ স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু হাসান বাবুকে ম্যানেজ করে জিবার অভিভাবককে ভুল বুঝিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন বলে জানাগেছে। স্বাক্ষর করে নেওয়া কাগজে নিজেদের ইচ্ছামত বক্তব্য লিখে ডিডি অফিসে জমা দিয়ে শিক্ষককে রক্ষার কবজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য জোর তদবীর চালানো হচ্ছে। এলাকার অনেকে অভিযোগ করেছেন, এমনকি প্রধান শিক্ষক উচ্চৈঃস্বরে আস্ফালন করে বলে বেড়াচ্ছেন, “আমাকে কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে যাওয়া লাগবেনা, ডিডি অফিসে আমার খুবই সম্পর্ক ভাল। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে”। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু হাসান বাবু জানান, সভাপতি স্বজল ভাইয়ের কথামত আমি সাদা কাগজে অভিভাবক জাহাঙ্গীরের একটি স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছি। আপস মীমাংসার জন্য। অভিভাবক জাহাঙ্গীর জানান, মেম্বার বাবু আমার কাছে এসে স্বাক্ষর লাগবে বলে সাদা কাগজে একটি স্বাক্ষর নিয়েগেছে।
এলাকার সচেতন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ জানান, এভাবে দিনের পর দিন একজন প্রধান শিক্ষক অনৈতিক কার্যকলাপ চালাতে পারেননা। সরকারি নিয়ম নীতিকে বেমালুম ভুলে গিয়ে বা তুয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে অন্যায় করার পরও কেন তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন করবেন না? এভাবে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলবে? তারা অভিযুক্ত শিক্ষককে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।