দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি কেমন হবে তা বলা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে রমজান মাস শুরু হতে আর বেশি দেরি নেই। এই মাসটিকে কেন্দ্র করে ভোজ্য তৈল, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ বেশকিছু নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। আর এই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী বিভিন্ন পণ্যের মূল্যও বাড়িয়ে দেন এবং নানা অজুহাতে ভোক্তাদের বিপাকে ফেলেন। ইতোমধ্যে চলতি বছরের শুরুতেই দেশের বাজারে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর ঊর্ধ্বমুখী। পেঁয়াজ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে নানা ঘটনা ঘটেছে। এখন বাড়তি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তৈল, চিনি ও ডালের মতো পণ্য। আমন ধান উঠলেও বাজারে চালের দাম কমেনি। পুরো শীতকাল জুড়ে ছিলো সবজি বাজারের আগুন। তবে, ইতোমধ্যে আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ও ভেজালরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সুপারিশ করেছে। সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত খাদ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পঞ্চম বৈঠকে এই সকল সুপারিশ করা হয়।
ক্রেতাদের মধ্যে প্রতি বছর রমজানের আগেই শুরু হয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দুশ্চিন্তা। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকেও রোজায় বেশি চাহিদা হয় এমন পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে শুরু হয় নানা তোড়জোড়, বিশেষ অভিযান, আড়তদার-ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ-আলোচনা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দ্রব্যমূল্য ভোক্তাদের কাছে সহনীয় রাখতে ইতোমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি ১০টি সংস্থাকে মাঠে নামানো হয়েছে। এই ১০ সংস্থা নিয়মিতভাবে খুচরা বাজার, পাইকারি বাজার ও মোকামে অভিযান চালাবে। রমজানকে পুঁজি করে কেউ যেন অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কারসাজির মাধ্যমে ভোক্তাদের ঠকাতে না পারে, এসব সংস্থা তা নিশ্চিত করতে চায়। অভিযানে তারা অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এছাড়া ১৭টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলাসহ অন্যান্য কার্যক্রম দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সব ব্যাংককে নির্দেশনা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে এসব সংস্থা মাঠে নামার পরেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না ভোক্তারা। কেননা প্রতি রমজানেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আনায়াসেই ভোক্তাদের ঠকিয়ে আসছে বিভিন্ন চক্র। সরকারি সংস্থাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ হারায়, চোখ বন্ধ করে থাকে, কিংবা অসাধু ব্যবসায়ীদের সহযোগী হয়ে ওঠে। এবার যে তার ব্যতিক্রম ঘটবে, এমন নিশ্চয়তা কে দেবে! সঠিক তদারকি হলে অবশ্য জনসাধারণ এর সুফল পেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী জোরদার করা আবশ্যক, আর তার জন্য বাজারমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার বিকল্প নেই। আমাদের বেশির ভাগ সংস্থার কাজকর্ম দায়সারা গোছের, জনসেবার বদলে অবৈধ উপার্জনে নিজেদের পকেট ভরতে এবং আপন স্বার্থ নিয়েই তারা ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এবছরের করোনা ভাইরাসজনিত বিশেষ বিপদের কথা আমাদের সকলেরই মনে রাখা প্রয়োজন এবং সেই মোতাবেক অঙ্গীকারগুলি বাস্তবায়নে, প্রতিবারের ন্যায় বাগাড়ম্বরের বুদ্বুদ না ছড়িয়ে, কঠোর ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।