মুলাদীতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্ণীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাজিরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ওই সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজী মোঃ শাহআলমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা, গাইড বই পাঠ্য করে কোম্পানি থেকে অর্থ গ্রহণ, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার আশ্বাসে টাকা আদায়, ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য সংগ্রহে অনিয়মসহ নানান দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দক্ষিণ কাজিরচর গ্রামের মৃত আবদুল আজিজ সিকদারের পুত্র, বিদ্যালয়ের দাতা কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারেক সিকদার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মোঃ শাহআলমের অনিয়ম, দূর্ণীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। জানাগেছে দক্ষিণ কাজিরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান ২০১৯ সালের মার্চ মাসে অবসরে গেলে সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজী মোঃ শাহআলম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি নানান অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বিদ্যালয়ের দাতা ও ইউপি সদস্য আবদুল বারেক সিকদার জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শ্কিষক ২০২০ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও পুনঃভর্তির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অবৈধভাবে জনপ্রতি ৫শত থেকে ৬শত টাকা আদায় করেছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি বই কোম্পানীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করে ওই কোম্পানীর বই শিক্ষার্থীদের পাঠ্য করে দিয়েছেন এবং গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করেছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের ক্লাস রুটিন, পরীক্ষার রুটিন, প্রশ্নপত্র ওই গাইড বই কোম্পানি করে দেয়। ফলে পরীক্ষার পাসের আশায় শিক্ষার্থীরা গাইড বই কিনছে। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্যরা জানান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ২০২০ সালের ১ লা আগস্ট শেষ হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রবিধানমালা অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ন্যূনতম ১৮০ দিন পূর্বে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করতে হবে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মোঃ শাহআলম মাত্র ১৪২ দিন আগে অর্থ্যাৎ গত ১০মার্চ দাতা সদস্য হওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করে দাতা সদস্য হওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেন। ফলে স্থানীয় কেহই বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হওয়ার জন্য টাকা জমা দিতে পারেন নাই। বিগত ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে ৫৬জন ব্যক্তি দাতা সদস্য হওয়ার জন্য ২০ হাজার করে ১১ লক্ষাধিক টাকা জমা দিয়েছিলো। চলতি বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের কারণে একদিকে স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দাতা হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অপরদিকে বিদ্যালয়টি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। এ ছাড়া কাজী মোঃ শাহআলম গোপনে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য করার নামে ৩ ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার করে ৬০ হাজার টাকা গ্রহণ করে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দাতা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারেক সিকদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ব্যাপারে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মোঃ শাহআলম অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য সংগ্রহের জন্য ভুলবশতঃ দেরিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিথিকা সরকার জানান অভিযোগের বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্রা দাস জানান দক্ষিণ কাজিরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।