লক্ষ্মীপুরে করোনাভাইরাস সচেতনতায় জেলা পুলিশ,সামাজিক সংগঠন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে লিফলেট এবং মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার (২৩ মার্চ) সকাল থেকে শুরু করে জনসাধারণের মাঝে এসব বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া সদর হাসপাতালের ৫০ বেড এবং প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ২০ বেডসহ ১৫০ বেডের আইসোলেশন কর্ণার খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে চিকিৎসকরা। ১ জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সপ্তাহ ধরে কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের মেয়ে কাজী ওয়াফা ইসলাম এর পক্ষ থেকে রায়পুর উপজেলার বিভিন্নস্থানে হ্যান্ড সেনিটাইজার ও লিপলেট বিতরণ করা হয়। বিদেশ থাকলেও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের জনসাধারনের কথা চিন্তাকরে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল চিকিৎসকের সুরক্ষা থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পার এজন্য রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্য্র কর্মরত পোশাক প্রদান করার ঘোষনাদেন এবং সর্বসাধারণকে আতঙ্কিত না হয়ে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শের কথা জানান তিনি।
এছাড়া লক্ষ্মীপুর সদর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকের জন্য ১০০ পিছ ব্যাক্তিগত সুরক্ষা পোশাক প্রদান করেন সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের এমপি একে এম শাহজাহান কামাল।
এছাড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্চন চন্দ্র পাল,পুলিশ সুপার এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান ও লক্ষ্মীপুর সদর,রায়পুর,রামগঞ্জ,কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা দিন রাতে সুরক্ষা ও সচেতনায় কাজ করছেন।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান,রামগঞ্জ উপজেলার নুরপ্লাজা চত্বর, খাদ্যগুদাম চত্বর, সোনাপুরমোরগ বাজার, মাছ বাজার এলাকার শতাধীক অসহায় ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া
মানুষের মাঝে চাল-ডাল, তেল-নুনসহ একটি পরিবারের এক সপ্তাহের নিত্যপন্য বিতরন করেছেন।
এছাড়া পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনসহ প্রোটেক্টেড ফর কোভিড-১৯ গ্রুপ তৈরি করে সবার সহায়তায় কাজ করছে লক্ষীপুর সরকারি কলেজ,চট্টগ্রাম টেক্সটাইল কলেজ, সুমাইয়া খানম-গাহস্থ অর্থনীতি কলেজ, মাহমুদ হোসেন-সেন্ট জোসেফ কলেজ,ইন্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি কলেজ,নটরডেম কলেজের লক্ষ্মীপুরে বাড়ী নাজিম,সুমাইয়া,মাহমুদ,আরিফ,হিমেল,মামুন,নাজিম উদ্দিন মাহমুদ,আশরাফুল হিমেল,মোঃমামুনসহ এমন অর্ধশত ছাত্র-ছাত্রী। তাদের টিপিনের জমানো টাকা থেকে তারা সামাজিক দূরতœ থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্টেশনে,দরিদ্র রিকশাওয়ালা,ভিক্ষুকদের মাঝে জন্য টোটাল ৮০০টি পোস্টার,একটি করে সাবান, ১০০ কেজি চাল,৬০ কেজি ডাল,৬০ কেজি আলু ৬৮ জন মানুষের মাঝে বিতরণ করেন।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট এক লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছেন ওই এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকার শিল্পপতি ডা.আশ্রাফ আলী চৌধুরী সারু।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মোমিন। তিনি জানান, শিল্পপতি ডা.আশ্রাফ আলী সারুর দেয়া এ অনুদান দিয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি ও মাক্য্র বিরতণসহ স্বাস্ব্যসেবায় নিয়োজিতদেরকে নিরাপত্তাসামগ্রী দেওয়া হবে।
লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একে এম শাহজাহান কামাল জানান,বিশ্বব্যাপি করোণা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশে ও প্রবেশ করেছে। এই মহামারী থেকে বাঁচতে সকলকে সর্তক থাকবে হবে। এই রোগে আক্রান্তদের জন্য যারা চিকিৎসা দিবে তাদের ও সুরক্ষা দরকার। এজন্য তার ব্যাক্তিগত পক্ষ থেকে চিকিৎসকের জন্য ১০০ (পিপিই) পোশাক প্রদান করেন তিনি এবং তার পক্ষ থেকে জনসাধারণের জন্য ১০০০ মাক্স বিতরন করার হয়। এর রকম বিত্তবান লোকজনও এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গফ্ফার জানান,দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা স্বাস্থ্য বিভাগে কোন তথ্য না দিয়ে অনেকেই ৫টি উপজেলায় ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাড়িতে এসেছেন ৩ হাজার ৮শ ২জন। ২২ মার্চ পর্যন্ত তারা জেলায় ফিরেন। এরপরেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীকে কোন তথ্য না দিয়ে বেশিরভাগ প্রবাসী আত্মগোপনে চলে যায়। এসব প্রবাসীদের চিহিৃত করার জন্য আইশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনকে দিয়ে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন,তাদের খোঁজখবর নিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। তিনি আরো জানান,সদর হাসপাতালের ৫০ বেড এবং প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ২০ বেডসহ ১৫০ বেডের আইসোলেশন কর্ণার খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে চিকিৎসকরা। ১ জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রেদোয়ান আরমান শাকিল জানান, তিনি মঙ্গলবার দুপুর থেকে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় হোম কোয়ারেন্টাইনের থাকা প্রবাসীদের বসত ঘরের সামনে লাল পতাকা টানিয়ে দেন। এ সময় হোম কোয়ারেন্টাইনীদের কোন প্রয়োজনে সরাসরি ডাক্তার ও প্রশাসনকে ফোন করার জন্য বলা হয়। ইতোমধ্যে তিনি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে জেলা ব্যাপী ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান জানান,বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে নিতে ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব প্রদান করেছেন তিনি। তিনিসহ কর্মকর্তা ইনচার্জরা ইতোমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, নেয়া হচ্ছে সু রক্ষার ব্যবস্থা। যারা গোপনে রয়েছে,তাদের চিহিৃত করার কাজ চলছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা বলে হুশিয়ারী দেন তিনি।
জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা নিয়ে বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭ জন প্রবাসী আইন অমান্য করায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের জরিমানা আদায় করে সর্তক করা হয়েছে।অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ মানুষকে সচেনতন করতে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সকল সভা, সমাবেশ,ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।