করোনাভাইরাস নিয়ে গোটা বরিশাল নগরীসহ জেলাজুড়ে ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা যখন করোনা প্রতিরোধে গণসচেতনতা তৈরিতে মাঠে নানান উদ্যোগ নিয়ে প্রসংশিত হচ্ছেন, ঠিক সেইসময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা একপ্রকার অন্তর্ধানে চলে গেছেন।
তবে নগরীসহ জেলার দশটি উপজেলার মধ্যে একমাত্র আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলায় কতিপয় পদণ্ডপদবী বিহীন ছাত্রলীগ নেতাদের দিন-রাত একাকার করে গণসচেতনতার পাশাপাশি দিনমজুর পরিবারের পাশে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি হাতেগোনা কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ছাড়া সিংহভাগ প্রভাবশালী জনপ্রতিধিদের অদ্যবর্ধি কোথাও দেখা মেলেনি। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনবারের মেয়াদে যারা একচেটিয়াভাবে ক্ষমতার সাধ গ্রহণ করেছেন, যারা পদণ্ডপদবী আঁকরে ধরে প্রভাববিস্তার করে আসছিলেন, সেইসব আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাউকেই করোনা প্রতিরোধে গণসচেতনতা তৈরিতে কোন ভূমিকা রাখতে মাঠে দেখা যায়নি।
এমনকি অঘোষিতভাবে লকডাউন হওয়া বরিশালের অসহায় দিনমজুর পরিবারের জন্যও তারা কোন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি। এনিয়ে সর্বমহলে তুমুল সমালোচনার মধ্যে পরেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সিংহভাগ জনপ্রতিনিধিরা। বরিশালের সাধারণ মানুষের ভাষ্যমতে, করোনার ভয়ে ওইসব নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা কেউ কেউ অর্ন্তধানে আবার কেউ হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন।
খোঁজনিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা যেখানে মাঠে নেই, সেখানে বাসদের মতো একটি রাজনৈতিক দল বরিশালে যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠে নেমেছে তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা। ওই দলের জেলা শাখার সদস্য সচিব ডাঃ মণীষা চক্রবর্তী নিজ উদ্যোগে গোটা শহরের মাইকিং, লিফলেট ও মাস্ক বিতরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে তার অনুসারীদের নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে গণসচেতনতার সৃষ্টির প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন। রোববার দিনভর তিনি (মণীষা) সাধ্যমতো বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী কর্মীদের নিয়ে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। বাসদ নেত্রী ডাঃ মণীষা চক্রবর্তী বলেন, আমাদের এ কর্মসূচি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণসচেতনায় পিছিয়ে নেই বিএনপি। ওই দলের শীর্ষ নেতা ও বরিশাল মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার ও দক্ষিণ জেলা সভাপতি এবায়দুল হক চাঁনসহ তাদের কর্মীরা মাঠে নেমে লিফলেট বিতরণ করে নগরবাসীর সুরক্ষার উপায় বাতলে দিচ্ছেন। বিভিন্ন উপজেলায়ও বিএনপি নেতারা তাদের সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করছেন। নগরীতে একমাত্র আওয়ামী লীগ ঘরোনার মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মাহামুদুল হক খান মামুনকে শহরসহ সদর উপজেলায় লিফলেট বিতরণসহ সুরক্ষা উপকরণ যথসামান্য পৌঁছে দিতে দেখা গেছে।
বিভাগীয় শহর বরিশালের বাহিরে করোনা মোকাবেলায় দিনরাত একাকার করে এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পক্ষে গণসচেতনা বৃদ্ধি ও দিনমজুর পরিবারের দ্বারে দ্বারে সাধ্যমতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী চাল, ডাল, আলু, পেয়াজ, লবন, সাবান নিয়ে হাজির হয়েছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রইচ সেরনিয়াবাত, মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মুসা হিমু মুন্সী, গৌরনদীর মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ও নলচিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা।
এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহর পক্ষে সরকারী গৌরনদী কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা সুমন মাহমুদ, ছাত্রলীগ নেতা রাসেদুল ইসলাম সংগীত, শাহাদাত হাওলাদার. আতিক মিয়া, আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সাগর সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা মোকাবেলায় সরকারের নানা উদ্যোগের কথা প্রচার-প্রচারনার পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে দিনমজুর পরিবারের দ্বারে দ্বারে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। সাথে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীর সদস্য, র্যাব ও পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠণের নেতৃবৃন্দরা নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে নগরীসহ জেলাবাসীকে আতঙ্কমুক্ত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সুরক্ষার নির্দেশনা দিচ্ছেন।
বরিশালবাসীর মতে, করোনাভাইরাস আতঙ্ক যেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের বেশি পেয়ে বসেছে। ফলে তারা আতঙ্কিত। নতুবা সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সিংহভাগ জনপ্রতিনিধি এমনকি সদ্য গঠিত ওয়ার্ড পর্যায়ের কোন নেতাদেরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মতে, বাসদের নেত্রী ডাঃ মণীষা চক্রবর্তী, বিএনপির একাধিক নেতা, কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও পদণ্ডপদবী বিহীন ছাত্রলীগ নেতারা যদি দুর্যোগ মোকাবেলায় মাঠে থাকতে পারেন, তাহলে আওয়ামী লীগের এমপি থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতা ও সিংহভাগ জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি বড়ই বেমানান।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, দলের নেতাকর্মীরা সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষের সাথে সংযুক্ত রয়েছেন। তাই আলাদা কোন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি।