চীনের উহান শহর থেকে উৎপত্তি নোভেল করোনা তথা কভিড-১৯ নামক ভাইরাস জ্বরে বর্তমানে জর্জরিত প্রায় তামাম দুনিয়া। ইতোমধ্যে অদৃশ্য করোনাঘাতে মানবতার শহর ইতালি বাঁচার আকুতি নিয়ে আকাশপানে কাঁদছে, বাণিজ্যিক শহর চীন বিধ্বস্ত, মেডিসিনের শহর সুইজারল্যান্ড অসহায়, প্রযুক্তির শহর জার্মানি নিরুপায়, ক্ষমতার দেশ আমেরিকা দিশেহারা, শক্তিধর কানাডা নিঃসঙ্গ, ব্রিটিশের দেশ ইংল্যান্ড খোঁজে পাচ্ছেনা বাঁচার কোনো পথ, অস্ত্রের রাজাখ্যাত রাসিয়া- ফ্রান্সও নিস্তব্ধ, রক্ষণশীল সৌদি-ইরান- ইরাক-পাকিস্তান টালমাটাল, পোশাকের বাংলাদেশও অল্পতেই বেদশায় নিমজ্জিত। বলা যায়, চলমান বিশ্বকে কেযেনো থামিয়ে দিল। এগিয়ে যাওয়ার বিশ্ব যেনো চলছে এখন ব্যাক গিয়ারে।
পারমাণবিক অস্ত্রের বাহাদুরি ফিকে, বিজ্ঞান ব্যর্থ, সভ্যতার আস্ফালন স্তমিত, ক্ষমতার দম্ভ পরাজিত, মুক্তির সকল পথ রুদ্ধ; তার মানে আকাশের নিচের সকল কারামতি শেষ, একমাত্র আকাশে উপরের অধিপতির নিকট প্রার্থনা, হে জগত মালিক তুমি সহায় হও।
করোনার মহামারির কবল হতে আদম সন্তানকে বাঁচাবার একটিই উপায় চারিদিকে চাউর হচ্ছে ‘দূরত্ব থিওরি’। অর্থাৎ ‘দূরত্ব’ বজায় রাখা। মূলত একজন অপরজনের সাথে মধ্যকার নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থিওরিটির আবিষ্কারক। বিশ্বের সব দেশই থিওরিটি মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে চলছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারংবার ছবি এঁকে এবং রাস্তায় দাগ কেটে দূরত্বের সংজ্ঞা সম্পর্কে জনতাকে অবহিত করছেন। বাংলাদেশেও দূরত্বের বিষয়ে জনতাকে জানান দিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গোল চিহ্ন এঁকে দেওয়া হচ্ছে। প্রচার হচ্ছে গণমাধ্যমেও।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, দূরত্ব থিওটার গোড়ায় গলদ পরিলক্ষিত। মূলত হওয়ার দরকার ছিল ‘শারীরিক দূরত্ব’। তা না হয়ে বলা হচ্ছে, ‘সামাজিক দূরত্ব’! অথচ সংকটকালে একদিকে প্রয়োজন সামাজিক নৈকট্য বিধান। অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় শারীরিক দূরত্ব অনুশাসন। শব্দ চয়নে এখানে ভ্রান্তি ঘটেছে।
মরণব্যাধি করোনা রোগ হতে বাঁচতে সবাইকে স্বগৃহে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করতে বলা হয়নি। বরং এ দুঃসময়ে একে অপরের পার্শ্বে দাঁডানোর প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। এমনকি অবাধ মেলামেশার ফলে কীভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে, সেটাও একে অপরকে বুঝিয়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। অতএব দূরত্বটি সামাজিক নয়, বরং শারীরিক।
করোনা সংকটকালে একটি নির্দেশিকা শব্দযুগল বলতে চেয়েছে এক কথা, হয়তো অজান্তেই বলে ফেলেছে অন্য কথা। বলতে চেয়েছে ঘরের বাইরে নানান স্থানে দুজন মানুষ একটি নিরাপদ দূরত্বে থাকবেন, মানে ন্যূনতম একটি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখবেন, যাতে সংক্রমণ না ঘটে। কিন্তু যেহেতু সামাজিক কর্মকা- ও সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে এই দূরত্বের কথা বলা হয়েছে, তাই অনেকটা বিভ্রমেই এর নাম দেয়া হয়েছে সামাজিক দূরত্ব (ঝড়পরধষ ফরংঃধহপরহম) বিধান।
বাস্তবতা হচ্ছে, দুরত্ব থিওরিটিতে যা বোঝাতে চেয়েছে; তা বলতে পারেনি। আর যা বলতে চেয়েছে; তা বোঝাতে পারেনি। দূরত্বের সংজ্ঞা সম্পর্কে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্নভাবে জানান দেওয়া হচ্ছে। সিএনএন-এর রিপোর্টে সামাজিক দূরত্বকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তিনটি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে; ১. বাসায় থাকা, ২. ভিড় এড়িয়ে চলা এবং ৩. একে অন্যের স্পর্শ এড়িয়ে চলা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যেমন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করা, অপরিষ্কার অবস্থায় নাকে-মুখে-চোখে হাত না-দেওয়া, ঘরের বাইরে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা, সোস্যাল ডিসট্যান্স বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং কাশি শিষ্টাচার মেনে চলা প্রভৃতি। ‘সোস্যাল ডিসট্যান্স’ বা ‘সামাজিক দূরত্ব’ আইডিয়াটা হাওলাত করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথিবীর বিভিন্ন জার্নালসহ মিডিয়ায় প্রকাশিত করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জনপ্রিয় প্রেসক্রিপশন থেকে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণু-সংক্রামক বিভাগের সিনিয়র পরিচালক লিজা মারাগাকিস, তার ‘ঈড়ৎড়হধারৎঁং, ঝড়পরধষ উরংঃধহপরহম ধহফ ঝবষভ-ছঁধৎধহঃরহব’ প্রবন্ধে সামাজিক দূরত্বের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন চারভাবে : ১. অফিসের বদলে বাসায় কাজ করা, ২. স্কুলে ক্লাস না-নিয়ে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া, ৩. প্রিয় মানুষের কাছে স্বশরীরে না-গিয়ে ইলেকট্রনিক্স বস্তু তথা মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা, ৪. বড় ধরনের সভা-সমাবেশ বাতিল করা বা এড়িয়ে চলা।
দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত অহহব এঁষষধহফ-এর জনপ্রিয় নিবন্ধে সামাজিক দূরত্বের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে চারটি বৈশিষ্ট্য দিয়ে; ১. কেবলই প্রয়োজনে বাজার করা, ২. দিনে একবারের বেশি শরীরচর্চা না-করা, ৩. অসুস্থ্যতার প্রয়োজনেই কেবল বাইরে যাওয়া, ৪. যদি ঘরে বসে কাজ করা সম্ভব না-হয়, তখনই কেবল অফিসে যাওয়া।
উইকিপিডিয়া মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে জানা যায়, দূরত্ব হলো একটি সংখ্যাসূচক বিবরণ, যা বস্তু কতদূরে রয়েছে তা নির্দেশ করে। পদার্থ বা দৈনন্দিন ব্যবহারে, দূরত্ব ভৌতিক তথা বাস্তবিক দৈর্ঘ্য বোঝায়। গণিতে একটি দূরত্ব ফাংশন বা মেট্রিক শারীরিক দূরত্বের সামান্যকীকরণ ধারণা। একটি মেট্রিক হলো একটি ফাংশন যা একটি নির্দিষ্ট সেট অনুযায়ী আচরণ করে।
ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, মহামারি বা অতিমারি ঠেকাইতে দূরত্বের নিদানটি প্রাচীন। ১৯১৬ সালে যখন নিউ ইয়র্কে পোলিয়ো মহামারি ছড়িয়ে পড়ে, তখন যাবতীয় জনসমাবেশ ও বৈঠক স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। বন্ধ হয়েছিল প্রেক্ষাগৃহ, প্রমোদ উদ্যান, সুইমিং পুল, সমুদ্রসৈকত। পোলিয়ো হতে বাঁচতে সবাইকে স্বগৃহে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা অতিমারি ও ২০০৩ সালে সার্স-ও এভাবেই ঠেকাবার প্রচেষ্টা দেখা যায়। রোগীর সংখ্যা যাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষমতাকে অতিক্রম করে না যায়, সেকারণে এসব পরামর্শ। দেখা গিয়েছে, মেলামেশা বন্ধ হলে অসুস্থ্যের সংখ্যাবৃদ্ধির হারটিও হ্রাস পাবার সম্ভাবনা থাকে। প্রযুক্তি-পূর্ব যুগে শারীরিক দূরত্ব সামাজিকও ছিল বটে, তবে বর্তমানে আর যোগাযোগ স্থাপন করতে কারো সম্মুখে উপস্থিত হবার প্রয়োজন নেই। বরং উল্টা একটি বিষয় লক্ষণীয়। যে সমাজমাধ্যম চিরাচরিত বন্ধুত্ব ভেঙে দিতেছিল বলে এতো দিন অভিযোগ উঠত, করোনাভাইরাসের কালে তাই সকল বন্ধুর সাথে যোগাযোগের এক এবং একমাত্র নিরাপদ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। সর্বক্ষণের গৃহবন্দিত্ব সবার পক্ষেই দুঃসহ। বিশেষত, যাঁরা একাকী দিনযাপন করেন, তাঁদের মানসিক সঙ্কটও উপস্থিত হবার আশঙ্কা রয়েছে।
সুতরাং, দৈনন্দিন কাজের চাপে যে সব বন্ধু বা পরিজনের সাথে কথা বলবার অবকাশ মিলত না, ইতোপূর্বে তাঁদের সাথে আলাপ জমতেছে। মধ্যবিত্ত ঘরে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে। গৃহকর্মীদের ছুটি দেওয়ার ফলে গৃহের সকল দায়িত্বই আপনাপন সদস্যদের পালন করতে হচ্ছে। যাঁরা কোনো দিন রান্নাঘরের দিকে যেতেন না, কিংবা ঘর মুছবার কথা ভাবতেন না, তাঁরাই আজ সযতেœ ওইসব কাজে রত। সবাই মিলে এক আশ্চর্য যৌথযাপনের সূচনা ঘটেছে, যা সম্ভবত রূপকথারও অসাধ্য ছিল। অতএব, দূরত্ব বজায় রাখবার ফলে যেমন করোনাভাইরাসকে বধ করা যেতে পারে, তেমনই সামাজিক যোগও বাড়তে পারে।
মানবিক বলয়ে যখন ‘দূরত্ব’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তার একটি নেতিবাচক মাত্রিকতা আছে। আমরা প্রায়ই বলি, ‘তুমি অনেক দূরে সরে গেছো’ কিংবা ‘চিন্তার ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।’ আর জগন্ময় মিত্রের সেই বিখ্যাত গান, ‘তুমি আজ কত দূরে’ তো আছেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষে মানুষে দূরত্ব মানুষ চায় না, কিন্তু ওই দূরত্বের ব্যাপারটি আবার ফিরে এসেছে জোরেশোরে বর্তমান সময়ের করোনা কিংবা কভিড-১৯ ভাইরাস সংকটকালে।
বারবার বলা হচ্ছে যে, করোনা সংকট থেকে উত্তরণের জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। পথে-ঘাটে, দোকান-পাটে, বিদ্যালয়-পাঠাগারে অর্থাৎ সামাজিক মেলামেশার প্রতিটি স্থানেই একটি মানুষের সঙ্গে আরেকটি মানুষের ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বড় প্রয়োজন।
এটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে রাষ্ট্রের যেমন একটি বিরাট সামষ্টিক ভূমিকা আছে, তেমনি ব্যক্তিমানুষেরও। রাষ্ট্র মানুষকে নৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারে, প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করতে পারে এবং আইন প্রয়োগও করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে, যদি ব্যক্তিমানুষ দায়িত্বশীল না হয়, তাদের নিজেদের দায়িত্বের কথা বিস্মৃত হয়।
শারীরিক দূরত্ব রাখতে গিয়ে সামাজিকভাবে দূরে থাকাটা শুভ নয়। শারীরিক দূরত্ব মানে সামাজিক দূরত্ব নয়। আসলে সারা বিশ্বে যা ঘটছে, তাতে সামাজিক দূরত্ব নয়, বরং সামাজিক নৈকট্যই বেশি প্রয়োজন। সামাজিক বিভাজন নয়, সামাজিক বন্ধনই কাক্সিক্ষত। আমরা সবাই যেনো একই সামাজিক বৃত্তে থাকি; এমনটি কাম্য হওয়া চাই। সংকটের যে বিশাল ব্যাপ্তি এবং যে গভীর স্বরূপ, তাতে পরস্পরের খোঁজ নিতে হবে, পরস্পরকে সাবধান করতে জোগাতে হবে সাহস। এ কাজটি করতে হবে বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে। সংবাদ ও তথ্য সহভাগ করে নেব ঠিকই, কিন্তু তা যেনো বিশ্বাসযোগ্য সূত্র হয়। এই ধূসর বিষন্নতার সময়ে বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো সহভাগ করে না নেওয়াটা সমীচীন হবে না।
মনে রাখা দরকার, সামাজিক নৈকট্য ও সামজিক বন্ধন ভিন্ন অভাবিত সংকট আমরা উতরাতে পারব না। বধ করতে পারব না করোনা যুদ্ধকে। যূথবদ্ধতা ভিন্ন আমরা নিতান্তই অসহায়। শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস এক্ষেত্রে এক অপপ্রয়াস ভিন্ন আর কিছুই নয়, যা ব্যর্থ হতে বাধ্য। করোনা সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নানান প্রেসক্রিপশনেও ঘুরেফিরে সামাজিক দূরত্বের একই ‘মুলা’ ঝোলানো হয়েছে। কিন্তু পাশ্চাত্য দুনিয়ার সামাজিক সম্পর্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বাংলাদেশের মতো দেশের এক ‘অর্থ’ নয়। সামাজিক সম্পর্ক এবং সামাজিক দূরত্বের ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গকে উপলব্ধি না-করে পাশ্চাত্যের সমাজ-বাস্তবতায় নির্মিত কেবল অন্যের দেওয়া প্রেসক্রিপশন আনক্রিটিক্যালি আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় পুনরোৎপাদন করলে, ‘হিতে যে বিপরীত’ বা ‘ততোটা কার্যকর’ নাও হতে পারে, সেটা আমরা একবারও বিবেচনা করি না। ফলে, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ অন্যসব প্রেসক্রিপশন অর্থাৎ সাবান পানিতে হাত পরিষ্কার করা, অপরিষ্কার অবস্থায় নাকে-মুখে-চোখে হাত না-দেওয়া, সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা প্রভৃতি মেনে চলার চেষ্টা করলেও ‘সামাজিক দূরত্ব’ একেবারেই মানতে নারাজ। কেননা একজনের সঙ্গে অন্যজনের মধ্যে কমপক্ষে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাকে ‘সামাজিক দূরত্ব’ হিসেবে মানুষকে বোঝানো অনেকটাই মুশকিলই বটে!
ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানের সামনে ছয় ফুট অন্তর অন্তর গোলাকার মার্ক দিয়ে মানুষকে শেখাতে হচ্ছে কীভাবে করোনা সংক্রামক রোধে নিজেদের মধ্যে ‘শারীরিক দূরত্ব’ মেনে চলতে হবে, যাকে ‘সামাজিক দূরত্ব’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা মোটেও আমাদের সমাজ বাস্তবতায় সামাজিক সম্পর্ক এবং সামাজিক দূরত্বকে নির্দেশ করে না। ফলে, ‘শারীরিক দূরত্ব’-কে ‘সামাজিক দূরত্ব’ হিসেবে গেলানোর চেষ্টার কারণে বিষয়টি আমাদের সামনে এখনও বড় সমস্যা আকারে দেখা দিয়েছে।
তবে অবশেষে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এও জানাচ্ছে যে, দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ব্যবহৃত সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব পরিভাষাটি আর ব্যবহার না করাই শ্রেয়। কারণ সামাজিক দূরত্বের পরিবর্তে ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং বা শারীরিক দূরত্ব উপযুক্ত। সুতরাং সামাজিক দূরত্বের বদলে ‘শারীরিক দূরত্ব’ বজায় রেখে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক নৈকট্য। নিজে যেমন বাঁচতে হবে, তেমনই অন্যকেও বাঁচতে সুযোগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক নয়; বরং শারীরিক দূরত্বের বিকল্প নেই।
(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক)