খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যা নির্মাণাধীন হাসপাতালের ভবনের নির্মাণ কাজে ব্য্যপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুরনো কমপ্লে´ ভবন ভাঙ্গার ফলে যে ইট পরিত্যক্ত হয়ে গেছে সেগুলো ভবনের মূল পিলারে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েেেছ। ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় নিন্ম মানের বালু। চলছে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নির্মাণ কাজ। তবে তদারকিতে নেই কোনো প্রকৌশলী। এ অবস্থায় ৬ এপ্রিল সোমবার আকষ্মিকভাবে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হাসপাতালে গেলে নিন্ম মানের বালু দিয়ে কাজ করার দৃশ্য দেখে তাৎক্ষনিক কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। সিলেট সেন্ড (সিলেকশন বালু)
বালু দিয়ে কাজ করার কথা কিন্তু কেনো শুধু মাত্র স্থানীয় নিন্ম মানের বালু দিয়ে কাজ করছেন এমন প্রশ্নের উত্তর শ্রমিকরা দিতে পারেন নি। কিছুক্ষণ পরে একজন মিস্ত্রী এসে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত দুরবর্তি স্থানে মজুদ করে রাখা কিছ বালু দেখাতে নিয়ে যায়। কাজের সাইডে কোনো ইঞ্জিনিয়ার নাই কেনো এমন উপজেলা চেয়ারম্যান এমন প্রশ্ন করলে করোনার কারণে আসতে পারতেছে না। তাহলে এত বড় বিশাল ভবনের কাজ কে তদারকি করছে। ঘটনাটি তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ ইকবালকে চেয়ারম্যান অবহিত করেন। এর আগেও বেইজ ঢালাইয়ের আগে সলিং এর মধ্যে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ব্যবহার অনুপযোগী ইট দিয়ে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয় নি।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজি সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত সিভিল সার্জন বরাবরে দেয়া এক পত্রে বলা হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এ বিষয়ে লক্ষ্মীছড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কিছুই জানানো হয় নি কিংবা এমনকি ওয়ার্ক ওর্ডার, ড্রয়িং ডিজাইন সিউিলসহ এ বিষেয় কোনো কাগজপত্র অত্র দপ্তরে দেয়া হয়নি। যাহার ফলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিংবা দায়িত্বশীল কোনো সংস্থা তথ্য চাইলে তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি অবহিত এবং প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
পত্রটি প্রেরণ করা হয় ২৯/১২/২০২০খ্রী. স্বারক নংÑউপঃস্বাঃকমঃ/লক্ষ্মী/খা/১৯/২৭৭৬। অনুলিপি দেয়া হয় পরিচালক স্বাস্থ্য, চট্টগ্রাম বিভাগ, নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য প্রকেশৈল বিভাগ, চট্টগ্রাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, লক্ষ্মীছড়ি ও সহকারি প্রকৌশলী স্বাস্থ্য প্রকৗশল বিভাগ, রাঙ্গামাটি। ওই পত্র প্রেরণের ৩মাস অতিবাহিত হলেও ভবনের কাজ এগিয়েছে যাচ্ছে কিন্তু অনিয়ম থামছে না। এরপর গত ১২ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজি সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত সিভিল সার্জন বরাবরে আরো একটি পত্র দেয়া হয়। কাজের নিন্ম মান নিয়ে নানা মহল থেকে অভিযোগের বিষয়টিও পত্রে উল্লেখ করা হয়।
মূল ভবন শুরু করার আগে ২টি আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। অভিযোগ ওঠেছে পুরাতন ভবনের পরিত্যক্ত ইট ব্যবহার করা হয়েছে চলমান নির্মাণ কাজে। ব্যহার করা হচ্ছে নিন্ম মানের স্থানীয় ধুরুং খাল হতে উত্তোলন করা বালু। ব্যবহার অনুপযোগী ইটের কংকর ভেঙ্গে বেইজ ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে এমন অভিযোগও স্থানীয়দের।
৬ এপ্রিল সরেজমিনে গিয়ে জানতে চাইলে মিস্ত্রী জিয়াউর রহমান বলেন, সিলেট সেন্ড (সিলেটের বালু) দিয়েই আমরা কাজ করছি। আসলে সেটি একটু দুরে চেয়ারম্যান সাহেব দেখতে পায় নি। তবে স্থানীয় বালু মি´ করার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে কাজের তদারকিতে ইঞ্জিনিয়ার আসতে পারছে না। উল্লেখ করা যেতে পারে লক্ষ্মীছড়ি হাসপাতালে ৫০শয্যা ভবন নির্মাণ কাজে পুরনো ইট ব্যবহারের একটি ভিডিও চিত্র এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজি সাইফুল আলম প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে চিঠি দিয়েছি। এর বাইরে অবশ্য আর কিছু বলতে রাজি হন নি।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ ইকবাল বলেন, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। এর আগেও আমার কাছে বিভিন্ন দিক থেকে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি নজরে আনা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কাজের তদারকি কর্মকর্তা সহকারি প্রকৌশলী মো: মেহেদী হাসানকে মুঠোফনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায় নি।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ করছে। চট্টগ্রামের ম্যা´ কনস্ট্রাকশন ১৫ কোটি ৫লাখ ৯৯হাজার ৪৯১টাকা ব্যায়ে গত ৩০.১০.২০১৯ইং সালে ১৮মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করার শর্তে কার্যাদেশ পায়।