পৃথক দুই ঘটনায় গোপালগঞ্জে ২ জন নিহত আহত ২৮ জন। একটি হয়েছে মুকসুদপুরে আরেকটি গোপালগঞ্জ সদরে।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করা নিয়ে দুই বংশের মধ্যে সংর্ঘষে এক যুবক নিহত। গোপালগঞ্জে সদরে জুয়ার আসর ভেঙ্গে দেয়াকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নিহত-১, পুলিশসহ আহত-২৫ জন।
মুকসুদপুরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করার কথা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের মধ্যে সংর্ঘষে সুজন শেখ (২২) নামে এক যুবক নিহত হযেছে। নিহতের পিতা মজিবর শেখসহ এ সময় প্রতিপক্ষের আঘাতে দুইজন আহত হয়েছেন। আহতদেরকে ফরিদপুর মেডিকের কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার সকালে মুকসুদপুর উপজেলার পশ্চিম বাহাড়া গ্রামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সহকারী পুলিশ সুপার (কাশিয়ানী-মুকসুদপুর সার্কেল) আনোয়ার হোসেন ভূঞা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পশ্চিম বাহাড়া গ্রামে মুন্সী ও মাতুব্বর বংশের মধ্যে আগে থেকেই এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ ছিল। গতকাল রোববার ঈশার নামাজের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করাকে কেন্দ্র করে মজিবর শেখ ও মতি মাতুব্বরের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এরই জেল ধরে সোমবার সকাল ৭টায় দুই বংশের লোকজন দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংর্ঘষে লিপ্ত হয়। এ সময় মুন্সি বংশের সমর্থক ও মজিবর শেখের ছেলে সুজন শেখ পতিপক্ষের আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় নিহতের পিতা মজিবর শেখ ও তুষার শেখ আহত হন।
সহকারী পুলিশ সুপার (কাশিয়ানী-মুকসুদপুর সার্কেল) মোঃ আনোয়ার হোসেন ভূঞা জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রনে রযেছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় সবর সরদার নামে একজনকে পুলিশ আটক করেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হযেছে। দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মামলার প্রস্ততি চলছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বনগ্রামে জুয়ার আসর ভেঙ্গে দেয়াকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে আজর ফকির (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
এ সময় ১০ পুলিশসহ অন্ততঃ ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম ও বৌলতলী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সালাহউদ্দিন আহমেদ রয়েছেন। পরে পুলিশ শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
সোমবার সকাল ১০ টায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই ঘন্টা ধরে এ সংর্ঘষ চলে। সংঘর্ষে নিহত আজর ফকির ওই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মৃত হামেদ ফকিরের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, বেশ কিছু দিন ধরে বনগ্রাম মধ্যপাড়ায় বিলের মধ্যে জুয়ার আসর বসে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ার একদল যুবক ওই জুয়ার আসর উচ্ছেদ করে। তখন মধ্যপাড়া এলাকার জুয়াড়ীদের সাথে পশ্চিমপাড়ার যুবকদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে।
এরই জের ধরে সোমবার বনগ্রাম মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ও করপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিকদার শাহ সুফিয়ান এলাকায় মাইকিং করে মধ্যপাড়া ও পূর্বপাড়ার লোকজন একত্র করে দেশীয় অস্ত্র, ঢাল, সড়কি নিয়ে সড়কি নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়।
এ সংবাদ পেয়ে পশ্চিম পাড়ার ফিরোজ ফকিরের নেতৃত্বে ওই এলাকার লোকজন পাল্টা জবার দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এরই একপর্যায়ে এই দু’দল গ্রামবাসী বনগ্রাম বিলে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় আজর ফকির (৫০) নিহত হন। সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, বৌলতলী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সালাহউদ্দিন আহমেদ, পশ্চিমপাড়ার নতুন ফকির, আরিফ সিকদার, রাব্বী মোল্যাসহ ২৫ জন আহত হয়েছে।
আহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে পুলিশ ১০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসামীদের ধরতে এলাকায় অভিযান চালিয়েছেন। লাশ ময়না তদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাঈদুর রহমান খান পিপিএম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, সংঘর্ষের সংবাদ পেয়েই পুলিশ পাঠিয়ে শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে এলাকায় অভিযান চলছে।