উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা কোন হাসপাতাল নেই! আছে শুধুমাত্র ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলোতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। যারা আছেন তারাও করোনা ভাইরাসের ভয়ে পালিয়েছেন। এ কারণে কোন উপয়ন্ত না পেয়ে রোগীরা ছুঁটছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোর সামনে তালা ঝুঁলছে। রোগীরা এসে এক এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে যাচ্ছেন অন্য এলাকায়। সেখানে গিয়েও দেখছেন একই অবস্থা। এভাবে হয়রানির শিকার হয়ে চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। এ কারণে রোগ নিয়ে ঘরেই কাতরাচ্ছে আনেকে রোগী। এমন চিত্র পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায়।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, গন্ডাদুলা কমিউনিটি ক্লিনিকটি বন্ধ। ঘরিকাটায় তখন বেলা ১০টা ২৫ মিনিট বাজে। সামনের দরজাতেই ঝুলছিল একটি তালা। বাহিরের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছিল অনেকদিন ধরে ক্লিনিকটি খোলা হচ্ছেনা। স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, করোনা ভাইরাসের আগে সপ্তায় দু’একদিন খোলা থাকতো। করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে ক্লিনিকটি খুলতে দেখা যায়নি। তবে মাঝে মাঝে রোগীরা এসে ঘুরে যায়। আর এখানে যারা চাকরি করেন তাদের কাউকে আসতেও দেখা যায়না।
অন্য আরেকটিতে গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। এটি হলো ‘কাজিরহাওলা কমিউনিটি ক্লিনিক’। এখানে গিয়েও তালাবন্ধ দেখা যায়। ঘরির কাটায় তখন বেলা ১০ টা ৪৫ মিনিট বাজে। আশে পাশের লোকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে এখানকার কর্মচারীরা প্রতিদিন আসেননা। তবে মাঝে মধ্যে আসেন। এছাড়াও বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ‘নেতা কমিউনিটি ক্লিনিক’এ গিয়ে বন্ধ দেখা যায়। সামনের দরজাতে ভিতর দিক থেকে তালা ঝুলানো আছে। স্থানীয়রা জানান, অনেক দিন আগ থেকেই ক্লিনিকটি বন্ধ রয়েছে। এখানে রোগরীরা এসে মাঝে মাঝে ফিরে যান। তবে এখানে যারা চাকরী করেন তাদেরকে আসতে দেখা যায়না। এদিকে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ফুলখালী কমিউটি গিয়ে বন্ধ দেখা যায়।
গত বুধবার রিয়ামনি নামের এক গর্ভবতী নারী চিকিৎসা নিতে যান গন্ডাদুলা কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে গিয়ে সকাল থেকে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু চিকিৎসক তো দূরের কথা! ওখানকার সংশ্লিষ্ট কাউকে পাননি। ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ থাকায় বাহিরে বসে আপেক্ষা করছিল সে। পরে কাউকে না পেয়ে দুপুর ২ পর্যন্ত অপেক্ষা করে পরবর্তিতে বাড়ি ফিরে যান। রিয়ামনির কাছে জানতে চাইলে সে বলেন, ‘আমি একজন গর্ভবতী মহিলা। ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন্য ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। সারাদিন অপেক্ষা করে আবার ফিরে এসেছি। কাউকে পাইনি। ক্লিনিক তালা দেয়া ছিল তাই ভিতরে ডুকতেও পারিনি। বাহিরেই বসে ছিলাম। মানুষ যেহেতু সেবাই পাইবেনা তাহলে ক্লিনিক করার কি দরকার ছিল? ’
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার জুগিরহাওলা গ্রামের শারমিন বেগম ঠান্ডা জ¦রের কারণে কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়েছিল। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যায়। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে অসেন। পরে ইউনিক ডায়াগনস্টিক নামের একটি প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা নেন। তার টাইফয়েড সনাক্ত হলে সেখানকার চিকিৎসক ডা.তাজুন নাহার চিকিৎসা দেয়। শনিবার খোঁজ নিয়ে জানাযায় শারমিন বেগম সুস্থ হয়েছেন।
রাঙ্গাবালী উপজেলার নেতা গ্রামে খোদেজা বেগম বলেন, ‘নেতা কমিউনিটি ক্লিনিকটি আগে মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকলেও বেশিরভাগ সময় খোলা থাকতো। তবে করোনা ভাইরাস আসার পরে গত এক মাস যাবৎ ক্লিনিকটি বন্ধ আছে। এখানে কেউ আসেননা। রোগীরা এসে মাঝে মধ্যে আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করে ডাক্তার আছে কিনা। আমরা ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ডাক্তারদের পাইনা।’
রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অ.দা.) ডা. মো. মনিরুল ইসলাম জানান, নিয়ম অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে করোনা ভাইরাসের এই সময়ে সরকারী ছুঁটি থাকায় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২ পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ক্লিনিক বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হবে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, রাঙ্গাবালীতে যেহেতু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। সেহেতু এখানকার মানুষ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকের ওপর নির্ভরশীল। তাই এগুলো বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই। আমি উর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।