করোনা ভাইরাসের কারণে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে লকডাউনের সঙ্গে দিনমজুরদের খাদ্যাভাব বাড়ছে। দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভর করে সংসার চালানো হতদরিদ্রের মাঝে হভাত অবস্থা বিরাজ করছে। খেটে খাওয়া কর্মহীন বেশিরভাগ মানুষের ভাগ্যে মিলছেনা সরকারি ও বেসরকারি বিশেষ ত্রাণ। করোনা দুর্যোগের এ অবস্থায় অনেকের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে।
উপজেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা যায়, করোনায় লকডাউনের কারণে ত্রাণের জন্য উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ ৭১ হজার ৩শ’ ৭১জন কর্মহীন অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্রের তালিকা দিয়েছেন। বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ওই তালিকা পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ে চার ধাপে বিশেষ বরাদ্দ এসেছে ৫৩ মেঃটন চাল ও এক লক্ষ টাকা। ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ১০ কেজি করে ত্রাণের চাল পর্যায়ক্রমে বিতরণ হয়েছে। ভুক্তভোগীদের তালিকার অনুকুলে বরাদ্দ সাপেক্ষে ধাপে ধাপে আরো ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
সরেজমিনে জানা য়ায়, খেটে খাওয়া হতদরিদ্রদের মধ্যে দিনমজুর, হোটেল শ্রমিক, রিকশাভ্যান চালক ও নির্মাণ শ্রমিকেরা খাদ্যাভাবে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। হঠাৎ কর্মহীন হয়ে তাদের রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। দু’একজনের ভাগ্যে সরকারি ত্রাণের ছিটাফোঁটা মিললেও অবশিষ্টরা জনপ্রতিনিধিদের নিকট ধর্ন্যা দিচ্ছেন। আবার চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল ত্রাণে জনপ্রতিনিরাও ভীষণ বেকাদায় রয়েছেন। এদিকে মধ্যবৃত্তরা অভাবের তাড়না পারছেনা সহতে, না পাড়ছেন কইতে।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাজেডুমরিয়া গ্রামের দিনমজুর মিঠুমিয়া, ইয়াছিন আলী, গাটিয়া বর্মণ ও জবেদ আলী জানান, ঘরে যেটুকু খাদ্য সামগ্রী ছিল ফুরিয়েছে। সরকারি কোন ত্রাণও পাচ্ছিনা। এভাবে লকডাউন চললে না খেয়ে মরতে হবে। বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ডুমরিয়া গ্রামের তেলীপাড়া গ্রামের হাফিজুল, নোবার, বাচ্চুতেলী ও হিন্দুপাড়ার অমৃত্য, তাপসী, রণজিৎ জানান, রোজগারের জন্য বাইরে কাজে যেতে পারছিনা। কেউ ত্রাণও দিচ্ছেনা। অনাহারে-অর্ধাহারে আর কতদিন থাকমো। এদিকে বাহাগিলী ইউনিয়নের যুগিপাড়া গ্রামের ফুরাব, কুদ্দুস, মতিয়ার ও নিতাই ইউনিয়নের গুয়াপাড়া গ্রামের নূরল, অমিছা, মকছুপাগলী খাদ্যাভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা জানান।
উপজেলা নির্মাণ শ্রমিকের সভাপতি তহুবার রহমান জানান, প্রায় এক মাস ধরে এলজিইডি’র সকল নির্মাণ কাজ বন্ধ। উপজেলার ২০০ নির্মাণ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এলজিইডি ও ইউএনও অফিসে তাদের তালিকা দেয়া হয়েছে। কোন প্রকার সাহায্য না পাওয়ায় তারা অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একধিক মধ্যবৃত্ত ব্যক্তি জানান, হতদরিদ্রদের মত ত্রাণও চাইতে পারছিনা। করোনার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা। হাট-বাজার বন্ধ থাকায় ফসল ও গরু-ছাগল বিক্রি না হওয়ায় বিপদে পড়েছি। এখন পরিবারের লোকজন কি খাবে এ নিয়ে চরম দুঃচিন্তায় ভুগছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরামের সভাপতি ও বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান ফজলার রহমান জানান, এই মহাদুর্যোগে হতদরিদ্র লোকজন অনেকে না খেয়ে আছে। কর্মহীন দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পেরে অসহাত্ববোধ করছি। চাহিদার তুলনায় সরকারি বরাদ্দ অতি নগণ্য, সাহায্যপ্রার্থীদের কোন জবাব দিতে পারছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বরাদ্দ ও বিতরণ চলছে। কেউ যেন না খেয়ে রাত্রিযাপন না করে এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ত্রাণের জন্য দেয়া তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় গত ৭ই এপ্রিল কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন প্রশাসন।