জেলায় গত ১৪ এপ্রিল একজন চিকিৎসক, একজন সেবিকা ও দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী, ১৭ এপ্রিল একজন চিকিৎসক ও একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর দেহে করোনা জীবাণু সনাক্ত হয়। ১৮ এপ্রিল রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় জেলায় নতুন করে আরও তিনজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এরপর ১৯ এপ্রিল রাতে আরও একজন ইর্ন্টান চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে এক চিকিৎসক দম্পত্তিও রয়েছেন।
মাত্র ছয়দিনের ব্যবধানে বরিশালে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত মোট ১০ জন ব্যক্তিকে আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের করোনা আক্রান্ত হবার ঘটনায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। বরিশাল বিভাগে একমাত্র করোনা পরীক্ষাগার ও চিকিৎসা কেন্দ্র শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম)। সেখানকার কর্মরতরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন। এমনটাই দাবি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বরিশাল অঞ্চলের সংগঠক ডাঃ শিরীন সাবিহার।
এমন অবস্থার জন্য রোগীদের তথ্য গোপনের প্রবণতা ও চিকিৎসা কর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাবকে দায়ী করেন তিনি। এই চিকিৎসক জানান, করোনার পরিচিত উপসর্গ সম্পর্কে দায়িত্বরত চিকিৎসকে অবহিত না করেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা। তাই অসচেতন ভাবে রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে ঝুঁকিতে পরছেন চিকিৎসকসহ অন্যান্যরা। এ ছাড়া করোনা প্রতিরোধক যেসব ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী (পিপিই) দেয়া হচ্ছে সেগুলো কার্যকর ও পর্যাপ্ত নয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জেলা শাখা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের করোনা আক্রান্তের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটির সভাপতি ডাঃ ইশতিয়াক হোসেন জানান, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া অদৃশ্য ঘাতক করোনা জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রধান যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত মানুষেরা। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে গিয়ে সারাবিশ্বেই স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্টরা এই রোগে উদ্বেগজনক হারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বরিশালেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। বরিশালে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের করোনায় আক্রান্ত হবার পিছনে ব্যাক্তিগত সুরক্ষার অভাবকে দায়ী করেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের চিত্রটা আমাদের কাছে নতুন। ঠিক কতটুকু সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুললে সংক্রামিত হবার ঝুঁকি কম হবে এটা কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। তবু যতটুকু সুরক্ষা চিকিৎসকদের জন্য নিশ্চিত করা হচ্ছে সেটা পর্যাপ্ত নয়।
তবে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের নিরাপদ রাখতে প্রশাসনিক পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ডাঃ ইশতিয়াক হোসেন। তিনি বলেন, গত রোববার জেলা পর্যায়ের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীলদের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সবার জন্য করোনা প্রতিরোধক কার্যকর নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিকিৎসা কর্মীরা যেন আরো সাবধানতা অবলম্বন করে সে ব্যাপারে আমরা আহবান জানিয়েছি।
সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা কর্মীদের কম গুরুত্ব দেবার ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরামের নেত্রী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্তগুলো যথাযথ ছিলোনা। সর্বশেষ তাদের জন্য যে ধরণের পিপিই প্রদান করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্মমানের। তিনি আরও বলেন, করোনা যুদ্ধের সম্মুখভাগের যোদ্ধা হচ্ছেন চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িত সকলে। তাদের ব্যাপারে এখনও যদি উদাসীন থাকা হয় তবে পুরো দেশের অবস্থাই ভয়াবহ হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসের এক ছাত্রের দেহে করোনা জীবাণু শনাক্ত হয়। ওই ছাত্রাবাসের ৪০ ইন্টার্ন চিকিৎসককে হাসপাতালের সেবা প্রদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে। হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ বাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বরিশালে গত ১০ দিনে মোট ২২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ছয়জন চিকিৎসক, একজন মেডিকেল কলেজের ছাত্র, একজন সেবিকা ও দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী।