আবহমান কাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ঘুরি উড়ানোর চলন শুরু হয়েছে। বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দখিণা হাওয়ায় শহর কিংবা গ্রামের কিশোর যুবকরা বিকেলে হলেই রঙিণ ঘুরি নিয়ে চলে যেতো বিল্ডিংয়ের ছাঁদ কিংবা ফসলের ক্ষেতের পাশে খোলা আকাশে।
কালের বিবর্তনে শহর কিংবা গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে গেছে সেই ঘুরি উৎসব। আধুনিকতা আর যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় শহরে যুবক থেকে শুরু করে গ্রামীণ যুবক-কিশোরদের মাঝে এখন আর দেখা মেলেনা আগেরকার সেই ঘুরি উৎসব। সারাদিন মোবাইল ফোন আর যান্ত্রিকতা নিয়ে ঘুরে বেরানো যুবক-কিশোররা এখন শত বছর পর ফিরে আসা করোনা নামক মহামারী থেকে বাঁচতে সরকারী নির্দেশনামতে এখন অনেকটাই ঘরবন্ধী। যুবক ও কিশোরদের পাশাপাশি বয়স্ক-অর্ধবয়স্করা রয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে।
তাই করোনার এই অবসর সময়ে ঘরে বন্দি না থেকে যান্ত্রিক জীবনকে ছুটি দিয়ে গ্রীষ্মের বিকেলকে উপভোগ করতে যুবক ও কিশোর থেকে শুরু করে অর্ধ বয়স্করাও ঘুরি নিয়ে ছুটে চলেছেন গ্রামীণ ফসলের মাঠ কিংবা দালানের ছাঁদে। করোনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বন্ধু হিসেবে তারা বেঁছে নিয়েছে বিভিন্ন রং বেরঙের ডানা মেলা বাহারী রংয়ের ঘুরি। ঘুরি আর নাটাই নিয়ে করোনা আতংকের প্রতিটা বিকেল একটু হলেও আনন্দে পার করছে গ্রামীণ যুবকরা। ফলে গ্রামীণ জনপদে এখন ঘুরি বানানোর ধুম পরেছে।
করোনার অবসরের বিকেলে ঘুরি আর নাটাই নিয়ে ফসলের মাঠে বসে ঘুরি উড়াতে যাওয়া জেলার একটি কলেজের অধ্যক্ষ কামাল হোসেন কবি সুফিয়া কামালের লেখা একটি কবিতার দুই লাইন উচ্চারণ করে বলেন- “আমাদের যুগে আমরা যখন আকাশের তলে উড়িয়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের লাঙল চালাও গগন জুড়ি”। তিনি বলেন, শৈশবে বন্ধুদের নিয়ে ঘুড়ি উড়িয়েছি। গ্রীষ্মের সেই বিকেলের কথা আজও মনে পরে। যখন বন্ধুরা মিলে ঘুরি উৎসবে মেতে উঠতাম। বিকেল হলেই রং বেরংয়ের ঘুরি নিয়ে আসতো সবাই। একেকটা ঘুরির ভিন্ন ভিন্ন নাম থাকতো। কখনো কখনো ইচ্ছে করেই একটি ঘুরির সুতা দিয়ে অন্য ঘুরির সুতা কেটে আনন্দে মেতে উঠতাম। কিন্তু যান্ত্রিকতা আর কর্মজীবন আমাদের কাছ থেকে শৈশবের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমন এড়াতে কলেজগুলো বন্ধ রয়েছে। তাই এই সুযোগে শৈশবের সেই পুরনো স্মৃতিতে ক্ষনিকের জন্য ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। যদিও পুরনো সেই বন্ধুরা এখন আর পাশে নেই। অধ্যক্ষ কামাল হোসেনের ন্যায় করোনার অবসরে গ্রীষ্মের গগণে রঙিন ঘুরি উড়িয়ে সময় পার করতে দেখা গেছে বিভিন্ন বয়সের যুবক ও কিশোরদের।