ভোলার দৌলতখানে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হাসনাইন এর নেতৃত্বে জাটকা বিরোধী অভিযানে বিপুল সংখ্যক ইলিশের বাচ্চা(জাটকা) সহ ৩০ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫মে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হাসনাইন এর নেতৃত্বে কোস্টগার্ড এর সহযোগিতায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় মদনপুর ও হাজীপুর চরের মাঝে অবস্থিত বিভিন্ন ডুবোচরে অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি ইলিশের বাচ্চা (২ মন জাটকা ও ৫ মন অন্যান্য প্রজাতির পোনা), ১ টি পাই ও ৩ টি মশারি জাল (৩০ হাজার মিটার) সহ দুইটি ট্রলার জব্দ করা হয়। এ সময় কাউকে আটক করা যায়নি।
সরেজমিনে মেঘনার ডুবোচরে গিয়ে দেখা যায়, প্রথমে দূরত্ব বজায় রেখে পুরো চরকে হাজার হাজার খুটি দিয়ে ঘেরাও করা হয়। এরপর এসব খুটির সাথে ২-৩ হাজার হাত লম্বা মশারি জাল দিয়ে ফাঁদ পাতা হয় পুরো চরকে ঘিরে। নদীতে জোয়ার আসালে জালের উপর দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আবদ্ধ স্থানে ঢুকে পরে। যখন ভাটার টানে নদীর পানি কমতে শুরু করে তখন মাছগুলো আবদ্ধ স্থানে মশারি জালের ভেতর আটকে পরে। জালের ফাঁদ ছোট হাওয়ায় ছোট-বড় কোন মাছই রক্ষা পায় না এ জাল থেকে। জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে আনতে না পারলে তা পঁচে জাল থেকে ছুটে যায়। এভাবে নষ্ট হয় কোটি কোটি মাছের পোনা।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হাসনাইন জানান,জাটকারক্ষায়১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা নদীতে মশারি সহ অন্যান্য জালের মাধ্যমে জাটকা ও ছোট মাছ নিধন করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৫ মে) মদনপুর ও হাজীপুর চরের মাঝে অবস্থিত বিভিন্ন ডুবোচরে অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি ইলিশের বাচ্চা (জাটকা), পাই জাল ও মশারি জাল (৩০ হাজার মিটার)এবং২ টি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। অভিযান শেষে জব্দকৃত মাছ বিভিন্ন এতিমখানায় ও গরীরদের মাঝে বিতরণ করা হয়, জব্দকৃত জাল ধ্বংস ও পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয় এবং ট্রলার ২টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জীতেন্দ্র কুমার নাথ এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।কারো বিরুদ্ধে জাটকানিধনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সে যে কেউই হোক না কেনোতার বিরুদ্ধে আমি কঠিন ব্যবস্থা নেবো। তিনি জাটকা সহ অন্যান্য মাছ সংরক্ষনে সাংবাদিক সহ সাধারণ জেলেদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য, দৌলতখানে কতিপয় অসাদু জেলেদের কারণে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মৎস্য ভান্ডার রক্ষা। বিশেষ করে জাটকা নিধনে অপ্রতিরোধ্য হাজিপুর ইউনিয়নের বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী মিজান মেম্বার। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে তার ৫-৭ টি আড়ত এর জেলেদের মাধ্যমে রাতের আঁধারে জাটকাসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছের কোটি কোটি রেনু পোনা নিধন করছেন। এরপর এসব মাছ আড়ৎএ এনে বিক্রি করছেন হাকডাক দিয়ে। বিভিন্ন অভিযানেও থেমে থাকেনা তার মা ইলিশ, জাটকা সহ অন্যান্য মাছ ধরা। পুরো মেঘনা জুড়েই চলে তার রাজত্ব। তার ক্ষমতার দাপটে মুখ খুলতে পারছেন না কেউই। কোন অভিযানে বাতাস লাগেনি তার গায়ে। অভিযানের আগে থেকেই সব কিছু রাখেন ম্যানেজ করে। মেঘনায় মাছ ধরার ব্যবসায় জড়িয়ে মিজান সহ একাধিকব্যবসায়ী ও জেলে এখন কোটি কোটি টাকার মালিকহয়ে গেছেন। এ যেন রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ।
সাধারণ জেলেরা জানান, প্রভাবশালীদের হাত থেকে জাটকা ইলিশ রক্ষা করতে না পারলে সরকার জাটকা ইলিশ রক্ষায় যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা পুরোপুরি ভেস্তে যাবে। এভাবে জাটকা ইলিশ নিধন চলতে থাকলে মেঘনা একসময়ে ইলিশ শূন্য হয়ে পরবে। তখন আমাদের মত সাধারণ জেলেরা না খেয়ে মারা যাবে।