বরিশালের মুলাদীতে বড় মসজিদের জমিতে উন্নয়ন কাজের পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। রোববার বেলা ১২টায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ মসজিদের বিপক্ষে এবং বেলা সোয়া ১২টায় মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি গ্রুপ মসজিদের পক্ষে মানববন্ধন করেন। মুলাদী বন্দর বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদের জমিতে মসজিদ কমিটি দোকানঘর নির্মাণ করতে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা ওই জমি তাদের কবরস্থানের জন্য বরাদ্দ বলে দাবী করলে বিরোধের সৃষ্টি হয়। মসজিদ কমিটির কাছে জমির কাগজপত্র থাকায় মুসুল্লিরা বিক্ষুদ্ধ হয় এবং গত ১৬ মে বিকালে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
জানাগেছে গত ১৫ মে মুলাদী বন্দর বড় মসজিদ কমিটি তাদের নিজস্ব সম্পত্তিতে ঘর নির্মাণ শুরু করে। ১৬ মে সকালে কে বা কাহারা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে থানা পুলিশকে জানায় যে, মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান দখল করে মসজিদ কমিটি ঘর নির্মাণ করছে। ওই সংবাদের ভিত্তিতে মুলাদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘর নির্মাণ বন্ধের চেষ্টা চালায়। কিন্তু মসজিদ কমিটি তাদের স্বপক্ষে কাগজপত্র দেখালে পুলিশ ফিরে আসে। ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ায় মুসুল্লিরা বিক্ষুদ্ধ হয় এবং ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ১৬ মে বিকালে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
অপরদিকে পুলিশ কাজ বন্ধ না করায় ১৭ মে বেলা ১২টার দিকে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহিম খান, সন্তান কমা- অলিউল্লাহ মিমনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে মানববন্ধন করে ওই জমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান নির্মাণের দাবী জানান। বেলা সোয়া ১২টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা শাহআলম খানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ মসজিদের সামনে জমি রক্ষার দাবীতে মানববন্ধন করেন।
মুলাদী বন্দর বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান রবিন জানান, ১৯৬২ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মুসুল্লি বৃদ্ধি পেলে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন খতিব হাফেজ মাও: মোঃ সাইফুল্লাহ (বড় হুজুর) আবেদনের প্রেক্ষিতে মসজিদের জন্য ৩০ শতাংশ জমি বরাদ্ধ হয়। মসজিদ ভবন নির্মাণের সময় বরাদ্দকৃত জমিটিতে অস্থায়ী ভাবে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিলো। বর্তমানে সেখানে উন্নয়নের জন্য মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তিতে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে কিন্তু একটি কুচক্রি মহল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থহাসিলের লক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করে ঘর নির্মাণে বাঁধা দিয়ে বিরোধ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল মজিদ মিয়া জানান মুলাদী বড় মসজিদের পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো জমি নাই। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করে কেউ মসজিদের জমি দখল করতে চাইলে আমরা তার প্রতিবাদ করবো। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার হাবিবুর রহমান হান্নান বলেন, ২০১৪ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন কিন্তু কোনো জমি বরাদ্দ দিয়েছেন বলে আমার জানা নাই।
এব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্রা দাস জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানের জন্য কোন লিখিত জায়গা আছে বলে আমার জানা নাই। তবে ওই জমিতে সরকারি কোনো জমি আছে কিনা সর্ভেয়ার দ্বারা তদন্ত করে দেখা হবে।