পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা যুবলীগ কর্মী তাপস দাস হত্যার ঘটনায় তাপসের ভাই পংকজ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলসহ ৩৫জনকে নামীয় এবং ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত নামীয় আসামি করে বাউফল থানায় অভিযোগ করেন। আজ ২৫ মে ১১টায় তাপসের খুণিদের গ্রেপ্তারের দাবীতে বাউফল পৌর এলাকায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ছয় সহ¯্রাধিক নেতা কর্মীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহড় জুরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জানা গেছে, এ ঘটনায় কার্তিক ও সোহাগ নামের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে বাউফল থানা পুলিশ।
সুত্রে জানা গেছে, বাউফল থানা ও জেলা পরিষদ বাংলোর সামনে তোরণ নির্মানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরে সাবেক চিফ হুইপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসম ফিরোজের সমর্থিত নেতা কর্মীদের সাথে বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আসম ফিরোজ সমর্থিত যুবলীগ কর্মী তাপস দাস (২৯)কে ধারালো অ¯্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে মেয়র সমর্থিত কর্মীরা। এ ঘটনায় সাবেক চীফহুইপ সমর্থিত ১৫ নেতা কর্মী আহত হয়। ওই দিনই গুরুতর আহত অবস্থায় তাপস ও ইমাম নামের আরেক যুবলীগ কর্মীকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসারত অবস্থায় ওই দিনই সাড়ে ৭টায় তাপসের মৃত্যু হয়। নাজিরপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ইয়ার উদ্দিন খান মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে বাউফল হাসপাতালে ভর্তি হয়। বাকীদের বাউফল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। সোমবার সকালে তাপসের খুণিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস জনতা ভবন থেকে ছয় শহা¯্রাধিক নেতা কর্মী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন শেষে থানা ডাক বাংলোর সামনে ইলিশ চত্বরে সমাবেশ করে। এ সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওয়াদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাউফল পৌর আওয়ামলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফারুক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, যুবলীগের সাধারন সম্পাদক কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ফয়সাল আহম্মেদ মনির হোসেন মোল্লা প্রমুখ। বক্তারা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে বিভিন্ন জাতীয় উৎসব উপলক্ষে সরকারের শুভেচ্ছাসহ সচেতনতা মূলক তোরণ নির্মাণ হয়ে আসছে। বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল তার সমর্থিত কর্মীদের নিয়ে ওই স্থানে পরিকল্পিত ভাবে তোরণ নির্মাণের চেষ্টা করে। এ সময় তোরণ নির্মানের নিষেধ করলে পুলিশ প্রশাসনের সামনে তাদের উপর সশ¯্র হামলা চালায়। এ ঘটনায় জড়িত পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা না হলে বাউফলের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে বলে হুশিয়ার করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওয়াদার বলেন, পৌর মেয়র জুয়েলের উপস্থিতি ও সরাসরি নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে তাপকে হত্যা করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় মেয়র সহ জড়িতদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, এ হত্যার সাথে তিনি বা তার কোন নেতা কর্মী জড়িত না। সে করোনা ভাইরাসের উপর সচেতনতা মূলক একটি সৌজন্য তোরণ করতে গেলে চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক ও তার লোকজন তাদের বাধা দেয়।
বাউফল থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। অভিযোগ হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি কিনা তা বলা মুসকিল। তাপসের পরিবার ও বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানায়, তাপস হত্যার ঘটনায় তাপসের ভাই পংকজ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে বাউফল পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলসহ ৩৫জনকে নামীয় এবং ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বাউফল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নিহত তাপসের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে তার পরিবার।