ইয়াসরিব থেকে মদিনা
মক্কায় ইসলাম প্রচার যখন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন সীমা অতিক্রম করে, তখন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-কে নিয়ে যখন মদিনায় প্রবেশ করেন, তখন আনসারের একটি বিরাট দল এই পবিত্র কাফেলাকে সাদর অভ্যর্থনা জানায়। পুরো মদিনা লোকে লোকারণ্য। পথে-ঘাটে, লোক চলাচলের রাস্তায়, ঘরের ছাদে, খিড়কিপথে ও দরজায় এককথায় মদিনার অলিগলিতে উৎফুল্ল মানুষ মহানবী (সা.)-কে একনজর দেখার আগ্রহে অধীর। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, মনিব-ভৃত্য সবার মুখেই অনুরণিত হচ্ছিল ‘তালাআল বাদরু আলাইনা...।’ ওই দিন থেকে ইয়াসরিবের লোকেরা তাদের শহরের নাম পাল্টে রেখেছে মাদিনাতুর রাসুল বা রাসুলের মদিনা।
এর অর্থ রাসুলের শহর। সেখান থেকে এসেছে মদিনা। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমাকে এমন এক নগরীতে বসবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা মর্যাদায় সব শহরকে ছাড়িয়ে যাবে। মানুষ তাকে ইয়াসরিব বলে। তার নাম হলো মদিনা। তা মন্দ চরিত্রের লোকদের এমনভাবে দূর করে দেবে, যেমন কামারের ভাট্টি লোহার ময়লা দূর করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৭১)
প্রাণের ভূমি মদিনা
মুসলমানদের প্রাণের ভূমি মদিনা। প্রিয় নবী (সা.) ও অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের বরকতময় স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র শহর মদিনা। এ পুণ্যভূমিতেই সবুজ গম্বুজের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব, সায়্যিদুল মুরসালিন, রাহমাতুল্লিল আলামিন (সা.)। তাঁর পবিত্র দেহ বুকে ধারণ করে মদিনা চিরধন্য। তাঁর নাম শোনামাত্রই হূদয়ের আয়নায় ভেসে ওঠে এক স্বর্গীয় নগরীর ছবি। প্রেম, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধে ভরে যায় মন। মুমিনের জীবনে আল্লাহর ঘর জিয়ারত ও প্রিয় হাবিবের রওজার পাশে দাঁড়িয়ে সালাম জানানোর চেয়ে বড় কোনো প্রাপ্তি হতে পারে না।
মদিনার মসজিদের রয়েছে সবিশেষ গুরুত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার এ মসজিদে নামাজ আদায় মক্কার মসজিদুল হারাম ছাড়া অন্য সব মসজিদে নামাজ অপেক্ষা এক হাজার গুণ বেশি সাওয়াব।’ (বুখারি, হাদিস : ১১৯০) অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার মিম্বর ও ঘরের মাঝখানের অংশটুকু জান্নাতের বাগিচাগুলোর একটি বাগিচা।’ (বুখারি, হাদিস : ১১৯৫)
পবিত্র রওজা জিয়ারত
মদিনা শরিফ যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্যই হবে রওজাপাকের জিয়ারত। হাদিস ও ফিকাহগ্রন্থগুলোতে এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। মদিনায় যাওয়া নিছক কোনো ভ্রমণ নয়; বরং তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর তা হতে হবে রওজা পাকের জিয়ারতের নিয়তেই। হাদিস শরিফে রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল, তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত।’ (দারাকুতনি, হাদিস : ২৬৯৫, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৮৬২) হাদিসটিকে ইমাম ইবনুস সাকান, আবদুল হক ও তাকি উদ্দিন সুবকি (রহ.) সহিহ বলেছেন। (নায়লুল আওতার : ৫/৯৫)
অন্য হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আমার কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে এবং এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই আমার জিয়ারতে আসবে, কিয়ামতের দিন তার সুপারিশ করা আমার ওপর জরুরি হয়ে পড়বে।’ (আল মুজামুল কাবির : হাদিস : ১৩১৪৯) হাদিসটিকে ইমাম ইবনুস সাকান ও ইরাকি (রহ.) সহিহ বলেছেন। (ওয়াফাউল ওয়াফা : ৪/১৭১, এলাউস সুনান : ৭/৩৬০৬)
অন্য হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার কবর জিয়ারত করবে, সে যেন আমার জীবদ্দশায়ই আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করল।’ (সুনানে দারাকুতনি, হাদিস : ২৬৯৪, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৮৫৫) ইমাম জাহাবি (রহ.)-এর মতে, হাদিসটির সূত্র ভালো। (জাইয়্যেদ)