করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ থাকার দীর্ঘ আড়াই মাস পর বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে রোববার বিকেলে আমদানি-রফতানি শুরু হয়েছে। দুই দেশের প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতাদের আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা নাসিদুল হক জানান, আড়াই মাস পর রোববার বিকেলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ২৪টি ট্রাকে মোটরসাইকেল পার্টসের একটি চালান রফতানি করেছে। সোমবার থেকে এই পথে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিকভাবে চলবে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমদানি-রফতানির জন্য একশটি পণ্যবাহী ট্রাক দিতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সম্মতি জানিয়েছেন। পরে পরিস্থিতি দেখে ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ভারতের বারাসাতের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয়েছে, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে চালু হয়েছে। এর আগে গত শনি ও শুক্রবার সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় দুই দেশের প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত হয়। তবে করোনার সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় সীমান্ত অতিক্রমের আগেই গাড়িচালকদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা হবে। ট্রাকগুলো উভয় দেশে স্যানিটাইজ করা হবে। শুধু চালকরাই পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। ট্রাক ড্রাইভাদের বাধ্যতামূলক পিপিই পরতে হবে। ফেরার সময়ও চালকদের শারীরিক পরীক্ষা করা হবে। আর দ্রুত পণ্য খালাস করে দিনের মধ্যেই ট্রাকগুলো ভারতে ফিরে যাবে। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করতে বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় চালকরা যাতে পোর্টের বাইরে যেতে না পারে সে ব্যাপারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২২ মার্চ থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গত ২৪ এপ্রিল আমদানি-রফতানি চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি না থাকায় দীর্ঘদিন সড়কপথে বন্ধ ছিল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বারবার চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্থলবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরুর অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। এ ছাড়া বনগাঁর সিন্ডিকেটের কারণেও বাণিজ্যে জটিলতা দেখা দেয়। পরে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়ায় স্থলপথে আমদানি-রফতানির ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকার শ্রমিকসহ ট্রাক মালিক ও চালকরা। বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসে আমদানি-রফতানি চালু করতে রাজি হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রশাসনসহ বনগাঁ সিন্ডিকেট।