সরাইল সদরসহ উপজেলার গ্রামেগঞ্জে জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে বেড়ে গেছে জনদূর্ভোগ। গত ৩-৪ দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিস্কাশনের সরকারি খাল দখল ও আইন অমান্য করে শতাধিক পুকুর ভরাটই এ দূরাবস্থার মূল কারণ। এমনটি বলছেন ভুক্তভোগীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিনে জানা যায়, সরাইল সদর থেকে শুরূ করে গ্রামে গঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে চলছে সরকারি খাল দখল ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিযোগিতা। বিভিন্ন কৌশলে সমাজের এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই করছেন এ কাজটি। অনেক জায়গায় সরকারি খালের উপর নির্মিত ব্রীজও এখন ওঠানে পরিণত হয়েছে। নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রি দিয়ে লোক দেখানো নামমাত্র ড্রেন অথবা কমদামের প্লাষ্টিক পাইপ ব্যবহার করে খাল দখল অব্যাহত থাকলেও গড়ে ওঠেনি উল্লেখযোগ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা। সেই সাথে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ম্যানেজের সহায়তায় সমগ্র উপজেলায় প্রায় শতাধিক পুকুরও ভরাট করে ফেলেছেন আরেক শ্রেণির লোক। এসব কারণে আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে বিভিন্ন গুরূত্বপূর্ণ জায়গা ও বাড়িঘরের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা। এরই খেসারত গুণছে সরাইল সদর ও বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা লোকজন। গতকালের বৃষ্টির পর তলিয়ে গেছে বড়দেওয়ান পাড়ার উত্তর অংশের রাস্তা। পানিতে ডুবে গেছে গরূ বাজার ও বড্ডাপাড়া গ্রামের একাধিক সড়ক। আশেপাশে বসবাসকারী গরীব অসহায় লোকদের ওঠান ভেসে পানি প্রবেশ করেছে বসত ঘরে। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। আর গত শনিবার থেকে দীর্ঘস্থায়ী মুষলধারে বৃষ্টির কারণে সরাইল সদরের প্রধান সড়কে (অন্নদা স্কুল মোড়ের আশপাশে) লেগে গেছে হাঁটু পানি। প্রাইভেটকার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা সহ ছোট গাড়ি গুলোর বডি তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। আর পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রয়োজন মেটাতে সরাইলে আসা মহিলা পুরূষরা কাপড় ভিজিয়ে পার হচ্ছেন সড়ক। অসুস্থ্য লোকজন পড়েছেন বিপাকে। গত ২-৩ দিন আগে আশেপাশে সরকারি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বড্ডাপাড়া গ্রামের সড়কে পানি লাগার ছবি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। সেই সাথে পানির নীচে তলিয়ে গেছে সরাইল রাহমাতুল্লিল আলামীন মাদরাসার মাঠ। সরাইল বড়দেওয়ান পাড়ায় বৃষ্টির পানি আটকে পুকুর, মসজিদ ও কবরস্থান তলিয়ে গিয়েছিল। বিশুতারা গ্রামে প্রভাবশালীরা এমনভাবে খাল দখল করেছেন সরকারি ব্রীজকে বানিয়েছেন ওঠান। কুট্রাপাড়া মোড় থেকে কালিকচ্ছের ধর্মতীর্থ এলাকা পর্যন্ত সড়কের দোপাশের খাল দখলে নিয়ে মাটি ভরাট করেছেন অনেকেই। গড়ে তুলেছেন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একই অবস্থা শাহবাজপুর-মলাইশ-শাহজাদাপুর সড়কের দু’পাশে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বাড়িউড়া থেকে আখিঁতারা পর্যন্ত। সরাইল প্রাত:বাজার থেকে চুন্টা হয়ে অরূয়াইল পর্যন্ত। মহাসড়কের পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা বাজার থেকে ভিটঘর পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে চলছে সরকারি খাল দখলের খেলা। এসব দখল কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট দফতরের কিছু অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। এ ভাবে সরাইলের প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ও গ্রামে সরকারি খাল দখল হয়ে গেছে। ফলে প্রত্যেক এলাকার পানি নিস্কাশন এখন হুমকির মধ্যে। ওই খাল গুলি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতাও নেই। তাই বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন জায়গায় সড়কে আটকে যাচ্ছে পানি। অনেক মার্কেটও তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। বন্যা ছাড়াই লোকজন হয়ে পড়ছেন পানিবন্দি।