চারিদিকে টিনের বেষ্টনি। ভেতরে কি হচ্ছে? বাহির থেকে দেখার কোন সুযোগ নেই। ফটকে তালা। কৌশলে মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়েই ইচ্ছেমত কাজে চলছে দূর্নীতি। এভাবেই সরাইলে চলছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রƒত অত্যাধুনিক মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্ধের এ কাজটি করছেন ‘মেসার্স বিজনেজ সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল’ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুরূ থেকেই যেনতেন ভাবে চলছে এ কাজ। আর বর্তমানে লোক চক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রি ব্যবহার করে কাজ করার অভিযোগ ওঠেছে। এখন জুন মাস। বিল উত্তোলন করতে হবে। এ লক্ষে নিয়মিত ভারী বর্ষণের মধ্যে কাঁদা পানিতে একাকার হয়েই চলছে বেইজ ঢালাইয়ের কাজ। কাজের শুরূতে ফাইলিং এর সময়ও ওঠেছিল অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নড়াচড়ায় সে যাত্রায় কিছুটা থমকে দাঁড়িয়েছিলেন ঠিকাদার। কিন্তু এখন কেন জানি কমে গেছে কর্মকর্তাদের নজরদারী। তাই অনিয়মও লাগামহীন। সরজমিনে দেখা যায়, টিনের বেষ্টনির মধ্যেই রয়েছে ফটক। ইচ্ছে করলেও যে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। ভেতরের কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করতে হয়। বেইজ ঢালাইয়ের জন্য ২-৩ ফুট গভীর গর্ত। গর্তের পানির উপরে ফাইলিং এর পিলারের রড দেখা যায়। রডের মান নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা। আর সেই পানির উপরই করা হচ্ছে বেইজ ঢালাই। ঢালাইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে নি¤œমানের শারফিন পাথর। ভিটি মাটির রং-এর বালু। মাটি মিশ্রিত ইটের খোঁয়া টানছে শ্রমিকরা। কেটে ফেলা ফাইলিং পিলারের ডাষ্ট ও বেইজ ঢালাইয়ে ব্যবহারের বিষয়টি চাউর হচ্ছে উপজেলা সদরে লোকজনের মুখে মুখে। ব্যবহার হচ্ছে পুরাতন রডও। সব মিলিয়ে এ মসজিদ নির্মাণের কাজটি এখন দূর্নীতির মডেল। এর আগে গত ডিসেম্বর/ জানুয়ারীর দিকে কাজের সূচনায় কর্র্তৃপক্ষকে না জানিয়ে পুরাতন মসজিদের বিদ্যুৎ ও পানির মটর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শুরূ হয় তাদের অনিয়ম। নিয়ম থাকলেও কাজের ধরণ, খাত ওয়ারি বাজেটের ও মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের তালিকাও লাগাননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ৪৫ ফুট লম্বা প্রিকাষ্ট ফাইলের মাত্র ২০-২৫ ফুট বসিয়েছেন মাটির নিচে। অবশিষ্টাংশের ঢালাই ভেঙ্গে পাউডার হয়ে পড়ছে মাটিতে। আর রড গুলো কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে ঠিকাদারের বিরূদ্ধে ওঠেছে নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ। উপজেলা প্রশাসন চত্বরের এ কাজে অনিয়ম ও অপচয় কোনটাই মানতে নারাজ স্থানীয় লোকজন। ফাইলিং-এর ফাইলের ১৫-২০ ফুট কেটে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। সূত্র জানায়, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ে সরাইল উপজেলা চত্বরে চলছে এ ভবন নির্মাণের কাজ। নিয়ম থাকলেও সোয়া ১২ কোটি টাকা বরাদ্ধের এ কাজের সময় সীমা, কাজের ধরণ, পরিমাপ, খাত ওয়ারি বরাদ্ধ, কবে নাগাদ শেষ করতে হবে এসব তথ্য সম্বলিত কোন চার্ট লাগাননি ঠিকাদার। কাজের পাশে নিয়মিত ছিলেন না সংশ্লিষ্ট দফতরের কোন প্রকৌশলী। ৪৫ ফুট লম্বা প্রিকাষ্ট ফাইল সাড়ে ৫ টন ওজনের হেমারিং -এর চাপে ভেঙ্গে পাউডার হয়ে যায় পিলারের ঢালাই। রূটির মত গোল হয়ে নিচের দিকে হেলে যায় পিলারের রড গুলো। শ্রমিকরা ওই রড মেশিন দ্বারা কেটে ফেলেন। আবার দাঁড়িয়ে থাকা পিলারেরও ১৫-২০ ফুট কেটে ফেলা হয়। সেই কাজেও ব্যবহৃত বালু ও পাথর ছিল নি¤œমানের। আর ১টা সিমেন্ট, দেড়টা বালু ও ৩টা পাথর-এ রেশিওতে ঢালাই কাষ্টিং করার কথা। রেশিও মানা হয়নি সেই কাজে। ল্যাব টেষ্ট করলে অনিয়ম ধরা পড়বে সহজেই। কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সাইফুল ও ফারূক বলেন, পুরো ফাইল মাটির নিচে বসানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রকৌশলীর পরামর্শেই কেটে ফেলা হচ্ছে। ঠিকাদার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, কোন অনিয়ম ও দূর্নীতি হচ্ছে না। এসডি স্যারের উপস্থিতিতে কাজ হচ্ছে। মানসম্মত মালামাল দিয়ে কাজ করছি। আর তালিকাটি পিডব্লিউডি অফিসে আছে। ভিটে মাটি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এক গাড়ি ভিটেমাটি নিয়ে রেখেছি বেইজ ঢালাইয়ের পর গর্ত ভরাট করতে। সয়েল সহ সকল নিরীক্ষা শেষে কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই কাজ করছি। মোট ফাইল ১৭৬ টি। একটি ফাইলের পর আর পুরো ফাইল বালুর লেয়ারের কারণে নিচে বসানো সম্ভব হয়নি। এ ফাউন্ডেশনেই একশত তলা করা যাবে। এমন সমস্যা আরো অনেক জায়গায় হয়েছে। ঢাকা অফিস সর্বক্ষণ সবকিছু মনিটরিং করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি’র) সাব-এ্যাসিসটেন্ট প্রকৌশলী মো. মামুন বলেন, আসলে লকডাউনের জন্য কাজের ব্যাখ্যার তালিকাটি তৈরী করতে পারিনি। মানসম্মত মালামাল দিয়েই কাজ হচ্ছে। ফাইলের ডাষ্ট ও ভিটে মাটি ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। বৃষ্টি ঢালাইয়ের জন্য সমস্যা এটা সঠিক। তবে যে সিমেন্ট ব্যবহার করি আধা ঘন্টা সময় পেলেই হার্ড হয়ে যায়। টেষ্টের সময় ৩ টি ফাইলের মধ্যে ১টি ফাইল পুরোপুরি মাটির নীচে গিয়েছিল। এখন পুরোটা যাচ্ছে না। কারণ মাটি হার্ড। এ নিয়ে চিন্তার কিছুই নেই।