কয়েক দিনের বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তি নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার।
শনিবার(২০ জুন) দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০সেঃমি) বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার(১৯ জুন) রাতে হঠাৎ বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ৩ঘন্টা পরে কিছুটা কমে সকাল ৯টার পর আবারও বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা আবারো ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রুপ। হেঁটে পাড়ি দেয়া তিস্তায় চলতে শুরু করেছে নৌকা। হাকডাক বেড়েছে মাঝি মাল্লাদের। কর্মব্যস্থতা দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবারে।
অপর দিকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তি জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এ দিকে হঠাৎ তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি দেখে তিস্তাপাড়ের মানুষ বড় কোন বন্যার শ্বঙ্কা করলেও বন্যা সতর্কীকরন কেন্দ্রের দাবি তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। উজানে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাবে বলে দাবি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখা। পলি ও বালু জমে তিস্তা ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই তিস্তার পানি প্রবাহ লোকালয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। তবে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ বন্যা সতর্কীকরন কেন্দ্রের।
তবে হঠাৎ তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ঠ বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেকের ফসলের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানীর শ্বঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন পাসাইটারী তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, রাতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে তারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মাচাং বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাবন করছেন। তাদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারী ভাবে তাদের কাছে ত্রান পৌছে নি বলেও দাবি তার।
হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের চর হলদিবাড়ি গ্রামের আবদুর রহমান ও আনেচ আলী জানান, গত দুই দিন ধরে একটু একটু করে বৃদ্ধি পেয়ে আবার কমে গেলেও শুক্রবার রাতে প্রচন্ডগতিতে পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে তারা পনিবন্দি হয়ে পড়েন। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন তিস্তার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে বরাদ্ধ নিয়ে ত্রাণ বিতরন করা হবে।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ শুক্রবার রাতে থেকে বাড়তে থাকে। শনিবার(২০ জুন) সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টার পরে কমে গিয়ে বিপদসীমার ১৮সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ভারতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় শনিবার বিকেলের মধ্যে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।