বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় অক্সিজেন থেরাপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উপনীত হন। সাধারণত এ সমস্যার প্রাথমিক সমাধান হল, এ সময় চাহিদা অনুযায়ী রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা। নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। সমস্যা হল, দেশে চাহিদার তুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা খুবই কম। সারা দেশে ১৪শ’ লিটারের মাত্র ৭শ’ সিলিন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক সিলিন্ডারই বাসাবাড়িতে কিনে রেখেছেন রোগীর স্বজনরা। প্রয়োজনের সময় অক্সিজেন পাওয়া যাবে না, এ আশঙ্কায় অনেকে মরিয়া হয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করছেন। অনেকে মজুদ করে রেখেছেন একাধিক সিলিন্ডারও। ফলে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট আরও বেড়েছে। বলা যায়, অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হল, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন বা বাজারজাতকারী কিছু প্রতিষ্ঠান ভেজাল অক্সিজেন বিক্রি শুরু করেছে। এগুলো মূলত গ্যাসীয় অক্সিজেন। এতে কার্বন-মনোঅক্সাইডসহ আরও কিছু গ্যাস ও জলীয় বাষ্প মিশ্রিত থাকে, যা সেবনযোগ্য বলে স্বীকৃত নয়।
এসব ব্যবহারে রোগীর শ্বাসকষ্ট দূর হওয়ার বদলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এ অক্সিজেন দিয়ে করোনা রোগীর শ্বাসকষ্টের নিরাময় সম্ভব নয়। করোনা রোগীর জন্য প্রয়োজন হাইফ্লো অক্সিজেন। কিন্তু এসব সিলিন্ডারে হাইফ্লো অক্সিজেন পাওয়া সম্ভব নয়। বস্তুত হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাতেই করোনা আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে হাইফ্লো অক্সিজেন ব্যবহার সম্ভব, বাসাবাড়িতে নয়। এ কারণে হাসপাতালগুলোতে এ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।
দুর্ভাগ্যজনক, দেশের সিংহভাগ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের সরঞ্জাম নেই। গত মে মাসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের অন্তত ৮৯ শতাংশ হাসপাতালে নেই ‘অক্সিজেন কনসেনট্রেটর’। ৯৫ ভাগ হাসপাতালে নেই ‘বিপাপ’ ও ‘সিপাপ’ (চাপ দিয়ে ফুসফুসে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের যন্ত্র)। ৯০ শতাংশ জেলা হাসপাতালে নেই এবিজি (আর্টারিয়াল ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইজার) মেশিন। এমনকি অক্সিজেন মাস্কের ঘাটতি রয়েছে ৩০ শতাংশ হাসপাতালে। অক্সিজেন সরবরাহ সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততার পাশাপাশি করোনার চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর সুবিধারও অভাব রয়েছে। আমরা মনে করি, মানুষকে যাতে বাসাবাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রাখতে না হয় সেজন্য সরকারের উচিত দেশের হাসপাতালগুলোতে, বিশেষ করে যেখানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেসব হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের সরঞ্জামসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুল দূর করা। সরকার দ্রুত এ সংকট নিরসনের পথ খুঁজে বের করবে, এটাই কাম্য। সেই সঙ্গে যেসব ব্যক্তি মরিয়া হয়ে বাসাবাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করছেন, তাদেরও এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত। আর বাজারে ভেজাল অক্সিজেন বিক্রি বন্ধেও নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।