শোবিজ অঙ্গনের তারকাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য অনুসারী থাকেন। এসব মাধ্যম ব্যবহার করে ভক্তদের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেন তারা। সেই সঙ্গে নিজের কাজের তথ্য জানিয়ে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এটি একটি ভালো দিক। অন্যদিকে এর খারাপ দিকও রয়েছে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ মাধ্যমে মন্তব্য করার অপশনটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। আর তাতে তৈরি হয় বিব্রতকর পরিস্থিতি। সাম্প্রতিক সময়ের ওয়েব সিরিজ বিতর্ক তা আরো একবার মনে করিয়ে দিয়েছে। কারণ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষ শিল্পী-নিমার্তদের উদ্দেশ্যে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। যদিও এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লিখেনÑঅনলাইনে বিভিন্ন পোস্টের নীচে যেসব কমেন্ট থাকে তার মধ্যে একটা বড় অংশই বলার অযোগ্য! গালি-গালাজ, মিসোজিনি আর ঘৃণার মচ্ছব বসে সেখানে! এটা নিয়ে ইদানীং বেশ কিছু প্রিয় মানুষের লেখালেখি দেখতে পাচ্ছি। সঙ্গত কারণেই ওঁরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন। নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেনÑযেহেতু ঘটনা চক্রে আমাদের কাজ জনতার সাথে, সেহেতু এই ধরনের মন্তব্যের সাথে আমাদেরও সংসার করতে হচ্ছে! আমার ক্ষেত্রে শুধু একদল না! পরস্পর বিরোধী দলের কাছে গালি, অশ্লীল ব্যক্তি আক্রমণ, হত্যার হুমকি শুনে আসছি। এমনো হয়েছে একই লেখার জন্য একদল বলেছে নাস্তিক, আরেকদল জামাতি, আরেকদল পশ্চিমা সংস্কৃতির দালাল, আরেকদল বলেছে ভারতের দালাল। একই লেখার জন্য! এগুলো কি ভালো লাগে? কার ভালো লাগে এই দুনিয়াতে অহেতুক গালাগাল আর অশালীন কথা শুনতে? একসময় মাথায় রক্ত উঠে যেত! তারকাদের সঙ্গে মানুষের এমন আচরণ কী শুধু বাংলাদেশের মানুষই করে থাকেন? এ প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন ফারুকী। তিনি লিখেনÑকথা হলো এই গালাগাল প্রক্রিয়া কি শুধু বাংলাদেশেরই ইউনিক ব্যাপার? তা কিন্তু না! এটা দেশ-সংস্কৃতি ভেদে কম বেশি হলেও দুনিয়া জোড়া আছে! সব সময়ই ছিল, আগে ফেসবুক ছিলো না বলে আমরা গালাগালগুলো শুনতে পেতাম না আর কি। এখন ফেসবুক সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সবাই এখন সবার ড্রইংরুমে বর্জ্যত্যাগ করার অধিকার রাখে। আগে সমাজে একটা কম্পার্টমেন্টালাইজেশন ছিলো। ফলে আমাদের কোরামের বাইরের মানুষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত ছাড়া কোনো ইন্টারেকশনের সুযোগ ছিল না। এর ভালো-খারাপ দুই দিকই ছিলো। কিন্তু এখন যেটা হইছে, সেটা হলো যে কেউ যে কোনো বিষয়ে মন্তব্য বা গালি দিতে পারে। যে লোকের হয়তো দুইজনম কেটে যাইতো ওই সেলেব্রেটির বিশ ফুটের মধ্যে যাইতে, এখন সে অবলীলায় তার অন্দরমহলে ঢুকে কমেন্ট করে আসতে পারেÑ‘তুদের মতো নাইকাদের জন্য গজব দিছে! মাতায় কাপড় দে, ******!’ (শেষের চিহ্নগুলো গালির পরিবর্তে ব্যবহৃত)। যেসব ব্যক্তি অশালীন মন্তব্য করে থাকেন তাদের শিক্ষা ও চিন্তা-চেতনা নিয়ে ফারুকী লিখেনÑযে লোক সারাজীবনে চৌকিদারপাড়া বাজারের বাইরের পা ফেলে নাই, দৈনিক পত্রিকার পাতা উল্টাইয়াও দেখে নাই অন্য পড়াশোনাতো দুরস্ত, সেও দিব্যি জিজেকের লেখার নীচে লিখে দিয়ে আসতে পারে ‘ওই শালা বা* লিখছো!’ যার সারাজীবন কাটছে ডিপজলের ছবি (ভালো-খারাপ বলছি না) দেখে, সেও তারকোভস্কির সিনেমার ক্লিপিংসের নীচে লিখে আসতে পারে ‘বা* বানায়!’ এরা সকল দলের মধ্যেই ছড়ায়ে আছে। এদের সংখ্যা হাজারে হাজার, কাতারে কাতার! এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায়ও জানিয়েছেন ফারুকী। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেনÑতাহলে করণীয় কী? স্রফে ইগনোর! কমেন্ট সেকশনটাকে জাস্ট ইগনোর করে যান! প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্ক্রিনশট নিয়ে ওগুলো শেয়ার করার মাধ্যমে ওরা যা চায় আপনি তা করে দিচ্ছেন! ওরা চায় এই গালি বা দুর্গন্ধটা ছড়ায়ে যাক চারিদিকে! আপনি বিনাপয়সায় তাদের হয়ে এই কাজটা কেন করবেন?