সমাজে বেনিফিসিয়ারি ও স্বার্থপর বলে একটি সুবিধাভোগী চরিত্রের শ্রেণী রয়েছে। যেদিকে স্বার্থ ও সুবিধার পাল্লা ভারী সেদিকেই যেন ওদের বিচরন। তাদের কোনো দল, জাত, দর্শন ও ধর্ম নেই। স্বার্থ ও সুবিধাই ওদের পুঁজি। যাদেরকে অনেকেই মাখাল ফলের সাথে তুলনা করে থাকে। স্বার্থের জন্য পারেনা তাদের মধ্যে এমন কিছুর অভাব পরিলক্ষিত হয়নি। স্বার্থের জন্য এ শ্রেণীটা যেমন কারও পায়ে ধরতে সংকোচবোধ করেনা, তেমনি স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে ঘাড়ে ধরতেও দ্বিধাবোধ করেনি। ইহাই হয়তো স্বার্থপর ও বেনিফিসিয়ারিদের মর্ম কথা ও প্রতিচ্ছবি। অন্য কথায় অনেকেই এ সংস্কৃতি প্রবনতাকে Mirror of the Benifisiary বা সুবিধাবাদীদের দর্পন বা আয়না হিসেবে অভিহিত করে থাকে।
এ নিবন্ধটি কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা কাহাকেও উদ্দেশ্য করে নয়। ইহা গতানুগতিক সমাজের প্রতিচ্ছবি, দিকদর্শন ও দর্পন হিসেবে মনে করা যেতে পারে। এ নিবন্ধে করোনায় দানব, হাতীর পিঠে গাধা ও শিয়ালের বনভোজনের মধ্য দিয়ে জাতির এহেন দুঃসময়ে স্বার্থপর বেনিফিসিয়ারি মানব নামক দানবের চরিত্রেরই বহি প্রকাশ উন্মোচিত হয়েছে। যাতে রয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনা রোগীদের নাজেহালের সচিত্র দৃশ্যপট। এন- ৯৫ মাস্ক, পিপিই দুর্নীতি, সাবান, এন্টিবায়োটিক লোশনের দাম বৃদ্ধি, করোনার সুযোগে নিত্যপণ্য জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যসহ আরও অনেক যাতনার ইতিকথা।
অনেক কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও উপন্যাসিক তাদের বিভিন্ন কবিতা, সাহিত্য, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া ও উপন্যাসে শিয়ালকে ধূর্ত প্রাণী, শিয়ালের সাতছালা বুদ্ধি ও সাতকাহন বর্ণনা করতে কম দেখা যায়নি। একদিন হাতীর পিঠে গাধা সিংহের পিঠে ভেড়া ও বাঘের পিঠে ছাগল চড়তে দেখে শিয়ালের আনন্দ, উল্লাসের আর শেষ থাকেনি। এ অদ্ভুত দৃশ্য দেখে শিয়াল বনের অন্যান্য নিরীহ প্রাণী ও শিয়ালের অপরাপর সঙ্গিসাথীদের নিকট এ দৃশ্যপট ও ঘটনা বর্ণনা করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকে। যেন রোদ হচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে খেঁকশিয়ালীর বিয়ে হচ্ছে। এছাড়া এ ঘটনার পর বনে শিয়ালের আস্তানায় যেমনি উল্লাস চলে, তেমনি বিয়ের বাদ্যবাজনা, নাচগানের মতো অফুরন্ত আনন্দের কমতি থাকেনি। তারপর শিয়াল বনে এক বিশাল বনভোজনের আয়োজনও করে থাকে।
বনভোজনের আমন্ত্রিত দীর্ঘদিন যাবৎ নিষ্পেষিত, অত্যাচারিত বনের নিরীহ প্রাণীদের নিকট হাতীর পিঠে গাধা সিংহের পিঠে ভেড়া ও বাঘের পিঠে ছাগল চড়ার কথা শুনে বনের সাধারণ ও নিরীহ প্রাণীরা আনন্দে উল্লসিত ও অনেকেই হতভম্ব ও আশ্চর্য হয়ে পড়ে। বন্য প্রাণীদের মধ্যে আবার অনেকে মনে করে, বনে হয়তোবা কোনো বিপ্লব বা পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। তা না হলে হাতীর পিঠে গাধা চড়লেও বনের রাজা সিংহের পিঠে ভেড়া ও বাঘের পিঠে ছাগল চড়ার কথা নয়। যেই কথা সেই কাজ। তখন দেখা গেছে বনে এমন মহামারী দেখা দিয়েছে যে সংক্রমক থেকে বনের রাজা সিংহ থেকে শুরু করে বাঘ, ভাল্লুক,
হাতী কারও রক্ষা নেই। করোনার ভয়ে যেভাবে ৯৯ জন পরিবার পরিজনসহ থাইল্যান্ডের রাজা সম্প্রতি বিশেষ বিমানে করে দেশ ছেড়ে অন্য দেশের দ্বীপে নির্বাসনে গিয়েছে এমনিভাবে বনের সিংহ, বাঘ, ভাল্লুক ও হাতী বন ছেড়ে বাহিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এই সুযোগে হাতীর পিঠে গাধা, সিংহের পিঠে ভেড়া ও বাঘের পিঠে ছাগল চড়ে বসার সুযোগকে শিয়াল হাতছাড়া করেনি। এমনিভাবে করোনা ভাইরাস মহামারীর সময়ে এক শ্রেণীর অসাধু, সুযোগ সন্ধ্যানী ব্যবসায়ী, ক্লিনিক, সরকারী ও বেসরকরী হাসপাতালের সেবকরা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। তদোপরি সরকারের নির্দেশনা না মেনে এক শ্রেণীর মানুষ নামীয় দানব, রাক্ষস ও নরপশু নামধারী সুযোগ সন্ধ্যানীরা যা করছে তা যেমন হৃদয় বিদারক, অমানবিক, দুঃখজনক ও স্বর্শকাতর বিষয় বলা চলে।
গণমাধ্যম, ফেসবুক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার দৃশ্যপট দেখলে শরীর শিহড়িয়ে ওঠার মতো। এরই মধ্যে সচিত্র প্রতিবেদনে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ দেশের আরও সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ঘুরে করোনা রোগীসহ সাধারণ রোগীরা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। কোলের শিশুরাও চিকিৎসার সুবিধা না পেয়ে পিতা, মাতা, ভাইবোন ও স্বজনদের কোলে মৃত্যু মুখে পতিত হওয়ার অসংখ্য ঘটনার দৃশ্যপট ভুলে যাওয়ার নয়। এর মধ্যে ভূক্তভোগীদের অনেকেই গণমাধ্যম ও মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে বলেছে এমন অমানবিক ঘটনা যেন কারও ভাগ্যে আর না ঘটে।
গণমাধ্যমে এমনও সংবাদ বেড়িয়েছে তাতে দেখা যায়, অনেকেই কষ্ট করে ক্লিনিক বা বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি হলেও তাদের কাছ থেকে গলাকাটা ফি আদায় করা হয়ে থাকে। যা স্বাভাবিক ফির চেয়ে ৮০ ও ১০০ পার্সেন্ট বেশী রাখা হয়ে থাকে। মোদ্দা কথা করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ কে কেন্দ্র করে ইহা যেন রোগীর প্রতি গলাকাটা বাণিজ্য। এ বিষয়টি যেহেতু দেশের মানুষের জানা এবং প্রতিদিন গণমাধ্যম ও মিডিয়াতে সচিত্র প্রতিবেদনসহ করোনা কালে দানবদের চিত্র বেড়িয়ে আসছে তাই এ নিয়ে আর সামনে এগুনোর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে যারা অকাতরে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মৃত্যুতে সমবেদনা ও দুঃখ জানানোর ভাষা নেই। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা থাকার পরও বারবার ভূক্তভোগী ও দেশের মানুষের কাছে প্রশ্ন জাগে করোনাকে কেন্দ্র করে যারা অহরহ এমন অমানবিক কাজ করে যাচ্ছে তাদের যোগানদার এবং এত সাহসের শক্তিই বা কোথায় ?
এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসের সময় দফায় দফায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সাবান, ডেটল, স্যাভনলসহ এন্টিবায়োটিক লোশনের মূল্য বৃদ্ধি, এন- ৯৫ মাস্ক, পিপিই নিয়ে কারসাজি, চাউলের মূল্য বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিসহ কোনো কোনো ব্র্যান্ডের ঔষধের হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধি নিয়েও রয়েছে জনগণের বিশোদাগার ও প্রতিক্রিয়া।
২০ জুন গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনা প্রতিরোধে সুরক্ষা সামগ্রী পিপিই, এন- ৯৫ মাস্ক ও গ্লাভস কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। জানা যায়, দাম নির্ধারণ না করেই মৌখিক আদেশে ২০ হাজার পিস এন- ৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে জেএমআই। এ মাস্ক কেহ ব্যবহার করেনি। যা সরকারি ঔষধাগার থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। একটি কোম্পানীর মাধ্যমে কত টাকা লোপাট হয়েছে তার অনুসন্ধ্যান করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ওঠে এসেছে। সেই প্রতিষ্ঠান কিভাবে কাজ পেল, কিভাবে এ কাজে সম্পৃক্ত হলো আরও কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনিয়মে জড়িত আছে কি না তা নিয়েও রয়েছে অনেক সন্দেহ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগার নিয়ে রয়েছে অনেকের অনেক প্রশ্ন ও অভিমত। আরও জানা যায়, করোনা সামগ্রী এন- ৯৫ মাস্ক কেনার আগে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) পক্ষ থেকে কোনো ধরণের দরপত্র আহবান করা হয়নি। এমনকি পণ্যের দামও নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। প্রতি পিস মাস্কের মূল্য ২২ টাকা হিসেবে ওই মাস্কের মূল্য আসে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু বিল তোলার আগেই এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার বিষয়টি তদন্ত পর্যন্ত গড়ায়। প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, দেশে করোনা ভাইরাস দেখা দিলে করোনা সামগ্রী কেনার জন্য ৯০০ কোটি টাকার বরাদ্দ পায় কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার। এর মধ্যে ১৪ কোটি টাকার কাজ পায় জেএমআই। এ নিয়ে রয়েছে প্রতিবেদনটিতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ। বিষয়টির আদ্যোপান্ত জেনে এ কথা বলা চলে, সার্বিক বিষয়টি অনিয়ম, দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত। এ ব্যাপারে হয়তো সামনে আরও কিছু বেড়িয়ে আসতে পারে বলে অনেকেরই ধারণা। এখানেও ক্যাসিনো কেলেংকারীর মতো গডফাদার ও নাটের গুরু যে নেই তাও বলার উপেক্ষা রাখে না। হয়তো সময়ই তা বলে দিলে ওপেন সিক্রেট অনেক কিছু জানার সুযোগ করে দিবে।
করোনা মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওবাদিয়াহ মোয়োকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৯/৬/২০ ইং ওবাদিয়াহ মোয়োকে গ্রেফতার করে হারারের একটি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে ২১/৬/২০ ইং গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়। এদিকে ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দরজায় লাল রং ছুড়েছে বিক্ষোভকারীরা। সরকারি স্বাস্থ্যখাতে নি¤œমানের কর্মপরিবেশের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা ২০/৬/২০ ইং শনিবার এ কাজ করেছে বলে জানায় আলজাজিরা। জন ম্যাকামুর নামে জিম্বাবুয়ের দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখপাত্র ওবাদিয়াহ মোয়োকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আরও জানা যায়, জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্য ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে করোনা কোভিট- ১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সামগ্রী সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে করোনা ভাইরাস রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহে ২০ লাখ ডলারের দুর্নীতির অভিযোগ আনে সে দেশের প্রধান বিরোধী দল। যদিও বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি হলেও এতদিন পরও কাহাকেও দোষী সাব্যস্থ করে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানা যায়।
১৬/৬/২০ ইং মঙ্গলবার গণমাধ্যমে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি অব বাংলাদেশের (টিআইবি) ১৫/৬/২০ ইং সোমবার বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শুরুর ১০০ দিন উপলক্ষে এক সেমিনারে বলা হয় সরকারের কার্যক্রমে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতায় করোনা ভাইরাস সংকট প্রকট হচ্ছে। পরিস্থিতির শুরু থেকে লকডাউনসহ সব পদক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে আমলা নির্ভরতার জটিলতা বেড়েই চলছে। টিআইবি প্রতিবেদনে অনিয়ম অব্যবস্থাপনা এবং সুশাসনের ঘাটতি নিয়ে ১০টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। এ সময় সংস্থাটি প্রশ্ন তোলে দুর্নীতিবাজরা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ক্ষমতাধর কি না ? টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ আরও অনেকেই সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। প্রতিদেনটিতে অনিয়ম এবং দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে সংক্রমন প্রতিরোধের ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে অসহায় বা দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রভাব পড়েছে। এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দামে মানহীন মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। যেজন্য এসব কেনাকাটায় নিয়ন্ত্রণ একটি সিন্ডিকেটের হাতে থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গবেষনায় আরও উল্লেখ করা হয় ৫৯ শতাংশ হাসপাতালে নি¤œমানের সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৩ শতাংশ হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ঘাটতি রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষার অনুমোদন পাওয়া অধিকাংশ বেসরকারি পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ফি অপেক্ষা অতিরিক্ত ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে পরীক্ষাগারের সংখ্যা কম থাকায় অনেক ক্ষেত্রে দালালরা ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় সিরিয়াল বিক্রী করছে। এমনকি করোনা আক্রান্ত নয় এমন সার্টিফিকেট বিক্রী করা হচ্ছে। এলাকার শতকরা ৮২ ভাগ স্থানে সুবিধাভোগীর তালিকা প্রনয়নে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ৪২ ভাগ এলাকায় ত্রাণ বিতরণে কোনো তালিকা অনুসরণ করা হয়নি। অতিদরিদ্রদের ২ হাজার ৫শত টাকা নগদ সহায়তার ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয় ১০ জুন পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণে ২১৮টি দুর্নীতির ঘটনায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ কেজি ত্রাণের চাল উদ্ধারসহ ৮৯ জন জনপ্রতিনিধিকে দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রতিদিন গণমাধ্যমে এমন আত্মসাৎ ও দুর্নীতির সংবাদ ফলাও করে প্রকাশিত হচ্ছে। এসব দুর্নীতির ক্ষেত্রে মাত্র ৪ শতাংশ এলাকায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এন- ৯৫ মাস্ক ক্রয়ে দুর্নীতি, নি¤œমানের পিসিআর মেশিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে দায়ী ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো সরবরাহকৃত মাস্ক ও সুরক্ষা পোশাকের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ৪ জন ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তথ্য প্রকাশে বিধি নিষেধ আরোপের মাধ্যমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে আড়াল করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের বদলে তথ্য প্রকাশকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতিকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এ সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণে চুরিচামারি ও আত্মসাতের সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের বাধা, হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা দেখা গেছে। সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর আওতায় ৬৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময় ৩৭ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত গুজব ছড়ানোর অভিযোগে কার্টুনিস্ট, সাংবাদিকসহ ৭৯টি ঘটনায় ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো ম্যাজিক বুলেটের প্রয়োজন নেই। যারা দুর্নীতি করে ওরা কর্তৃপক্ষের জানা শোনার বাইরে নয়। তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহীতা নিশ্চিত করলেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রন করে সরকারের ঘোষণা বাস্তবায়ন সম্ভব। এছাড়া উক্ত গবেষনায় আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পায়।
জাতির এ দুঃসময়ে করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে যারা বাণিজ্য করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই প্রনিধান যোগ্য। এদেরকে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে গণ্য না করে নররাক্ষস, মানুষ খেকো আজব জীব হিসেবে আখ্যায়িত করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে বলে ভূক্তভোগীসহ দেশের মানুষ তা মনে করেনি। যদি এসব দেখে কেহ হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ ও এসব দেখি কানার হাটবাজার বলে মন্তব্য করে তাতে দোষের কিছু থাকার কথা নয়।
পরিশেষে বলব, করোনায় দানব, হাতীর পিঠে গাধা, সিংহের পিঠে ভেড়া ও বাঘের পিঠে ছাগল দেখে শিয়াল যে বনভোজন করেছে তেমনিভাবে করোনা ভাইরাসের সময় যারা বাণিজ্য করছে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর সম্যক প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা না হলে এক সময় করোনার দানবরা শিয়ালের মতো উল্লাস, আনন্দ ও বনভোজন করলে নির্বাক চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু হয়তো করার কিছু নাও থাকতে পারে। নরপিশাচ, রাক্ষস ও করোনার দানবদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই জনপ্রত্যাশা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট