এক করোনাভাইরাসে প্রাণ যায় যায়, তার ওপর চেপে বসেছে পঙ্গপালের ঝাঁক। ভারতে সাধারণ মানুষের জীবন এখন জিভের আগায় এসে ঠেকেছে। পঙ্গপালের ঝাঁক হামলা চালিয়েছে রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবে। এবার উড়ে আসছে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রামে। শুক্রবার পঙ্গপালের হামলা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে গুরুগ্রাম প্রশাসন। খবর এনডিটিভি, এই সময়। মহেন্দ্রগড় জেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল পৌঁছে গেছে। শিগগিরই রেওয়ারি সীমানা ( জবধিৎর নড়ৎফবৎ) পেরিয়া গুরুগ্রামে ঢুকে পড়বে তারা। এই পরিস্থিতিতে দরজা-জানালা সব বন্ধ রাখার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। না হলে খোলা দরজা-জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরেও ঢুকে পড়তে পারে পঙ্গপালের দল। দরজা-জানালা বন্ধ রাখার পাশাপাশি বাসনপত্র-ঢাক-ঢোল পেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুব জোরে নানারকম আওয়াজ করলে পঙ্গপালের ঝাঁক ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। গুরুগ্রামের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল গুরুগ্রামে ঢুকে পড়তে চলেছে। এই অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। সব দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে বাসিন্দাদের। এর সঙ্গে নানারকম আওয়াজ করলে কোনও একটি জায়গায় থাকতে পারবে না পঙ্গপালের ঝাঁক।' পঙ্গপালের গ্রাস থেকে শস্য রক্ষা করতে কৃষকদের কীটনাশক স্প্রে তৈরি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিরায় ১১টি কনট্রোল রুম খুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আফ্রিকা থেকে এই পঙ্গপালের ঝাঁক ইরান, পাকিস্তান হয়ে ভারতে ঢুকেছে। বিপুল পরিমাণ খাবার খেতে সক্ষম এই পতঙ্গ শস্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। তবে এই পঙ্গপাল পশ্চিম বঙ্গে ঢুকবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সিনিয়র লোকাস্ট ফোরকাস্টিং কর্মকর্তা কিথ ক্রেসম্যান জানিয়েছেন, ‘জুনে পশ্চিম বঙ্গে পঙ্গপাল ঢোকার সম্ভাবনা কম। মাস যত শেষের দিকে যাবে, সম্ভাবনা আরও কমবে। গ্রীষ্মে উত্তর ভারত থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে বায়ুপ্রবাহ থাকে। বর্ষা চলে এলে উল্টোটা হবে। বলা যায়, পশ্চিম বঙ্গের রক্ষাকর্তা হবে মৌসুমি বাতাস।’
ভারতে একদিনে বজ্রাঘাতে শতাধিক মৃত্যু
এফএনএস বিদেশ: ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশে বজ্রাঘাতে একদিনে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বিহারে ৮৩ জন ও উত্তর প্রদেশে ২০ জন বজ্রাঘাতে মারা গেছেন। গুরুতর আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর বিবিসি। বিহারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী লক্ষ্মীশ্বর রায় জানান, বজ্রাঘাতে একদিনে সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা এবারই প্রথম। বিহারের উত্তর-পূর্ব রাজ্যে ৮৩ জন এবং প্রতিবেশি রাজ্য উত্তর প্রদেশে অন্তত ২০ জন মারা গেছেন। বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, আরও কয়েকজনের মৃত্যুর খবর হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে মৃত ব্যক্তিদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে বিহারে বজ্রাঘাতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের পর প্রতিবছর ভারতে অন্তত ২ হাজার মানুষ বজ্রাঘাতে মারা গেছে। ২০১৮ সালে দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যে মাত্র ১৩ ঘন্টায় ৩৬ হাজার ৭৮৯টি বজ্রাঘাত হয়েছিল। আর সেই বছরই দেশটিতে ২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বজ্রাঘাতে।
করোনাভাইরাস: ‘সুরক্ষামূলক ব্যবস্থায় সবার শেষে বাংলাদেশ’
এফএনএস বিদেশ: নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন নাগরিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষাদানের ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৮ দেশের মধ্যে তলানীতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টাইমলাইনে আটটি সূচকে দেশগুলোর নেওয়া সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার তুলনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিস্ট নেটওয়ার্ক এর তত্ত্বাবধায়নে। প্রতিবেদনের আট সূচকগুলো হলো - সুলভ স্বাস্থ্যসেবার পরিসর, অসুস্থতাকালীন ছুটিতে পর্যাপ্ত ভাতা ও সুবিধার ব্যবস্থা, চাকরিচ্যুতির হার, বয়স্ক-বেঁচে ফেরা-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান, নাগরিকদের আয়-সহায়তার ব্যবস্থা, পারিবারিক প্রয়োজনে ছুটি ও অন্যান্য সুবিধার নীতি, কর এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতের প্রদেয় মেটানোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা প্রদান। প্রতিবেদনের অনুযায়ী, এই আট সূচকে সবচেয়ে বেশি পদক্ষেপ নিয়েছে ফিলিপাইন, ইরান ও থাইল্যান্ড। এরপর রয়েছে চীন, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া। তারপর অবস্থান করছে জাপান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারত। এছাড়াও শ্রীলংকা, নেপাল এবং পাকিস্তান সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আট সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার শুধুমাত্র বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ শ্রমশক্তির জোগান দিচ্ছে। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় রাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সামর্থ্য অপেক্ষাকৃত বেশি।
তবে বাংলাদেশ, নেপাল ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর মাথাপিছু আয় তুলনামূলকভাবে কম। কোভিড-১৯-এর স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করার সামর্থ্যও তাদের কম। ইউএনডিপি জানিয়েছে, নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ইতোমধ্যেই ভিয়েতনামে বিরাট সংখ্যক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। একই কারণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে তৈরি পোশাকের বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলে তারা হুঁশিয়ার করেছে। তাতে বহু নারী শ্রমিক কাজ হারাবেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন অনানুষ্ঠানিক খাতের ভাসমান শ্রমিক ও উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী। এছাড়াও, রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকেরা নূন্যতম যে স্বাস্থ্যসুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা পায়, তারা তা থেকে বঞ্চিত। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ করেছে।
কোভিড-১৯: ভারতে ৬ দিনে ১ লাখ - মোট আক্রান্ত ৫ লাখ
এফএনএস বিদেশ: ভারতে নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা সর্বশেষ ছয় দিনে এক লাখ হয়েছে। এর আগে, মোট কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ হতে সময় লেগেছিল ১১০ দিন। সব মিলিয়ে, দেশটিতে এখন সরকারি হিসাবেই কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ আট হাজার ৯৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৬৮৫ এ। এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানাচ্ছে, শনাক্তের সংখ্যা এক থেকে দুই লাখে পৌঁছায় ১৫ দিনে। দুই থেকে তিন লাখে ১০ দিনে; তিন থেকে চার লাখে পৌঁছায় আট দিনে। আর শেষ এক লাখ যোগ হতে লাগল মাত্র ছয় দিন। শুক্রবার থেকে শনিবার স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত আরও ১৮ হাজার ৫৫২ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ২৯৬। কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজারপত্রিকা জানাচ্ছে - ৩০ জানুয়ারি ভারতের কেরালায় প্রথম চীনের উহানফেরত এক ব্যক্তির দেহে কোভিড-১৯ এর বাহক নভেল করোনাভাইরাস মেলে। এরপরশনাক্তের সংখ্যা এক লাখে পৌঁছাতে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগে। অন্যদিকে, মার্চের শেষে মোদির সরকারের আরোপিত কঠোর লকডাউনের কারণে সংক্রমণের গতি কিছুটা শ্লথ হলেও, লকডাউন শিথিলের পর থেকেই দেশটিতে দৈনিকই শনাক্তের সংখ্যা আগের দিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রাজ্যগুলোর মধ্যে করোনা শনাক্তের ও মৃতের সংখ্যায় সবার উপরে আছে মহারাষ্ট্র। পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ১০০, আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। রাজধানী দিল্লির অবস্থাও তথৈবচ। গুজরাটে মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৪৯২ জনের। আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তামিল নাডু, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও মধ্যপ্রদেশেও। পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ১৯০ এবং মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৬১৬ জনে - বলে জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও অর্ধেকেরও বেশি আক্রান্ত চিকিৎসা নিয়ে নিয়মিত জীবনে ফিরে গেছেন বিষয়টি তাদের স্বস্তি দিচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন আরও ১০ হাজার ২৪৪ কোভিড-১৯ রোগী সুস্থ্ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। আনন্দবাজারপত্রিকা'র সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসাবেই সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৯৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ায় সেনা মোতায়েন
এফএনএস বিদেশ: নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক হাজার সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দেশটির সেনাবাহিনীর এক ঘোষণায় এ কথা জানানো হয়েছে। খবর এএফপি। এদিকে, মেলবোর্নে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হয়েছে। রোগীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। এক সপ্তাহে মেলবোর্নে ১৫০ নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিন্ডা রেনল্ডস বলেছেন, খুব দ্রুতই ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে এক হাজার সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায় ৮৫০ জন সৈন্য বিদেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীদের হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকা নিশ্চিত করবে। বাকি প্রায় ২০০ সৈন্য অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি ও মেডিকেল সহায়তা দেবে। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ায় আড়াই কোটি জনসংখ্যার মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১০৩ জন। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া খুব সাফল্য দেখাচ্ছিল। কিন্তু নতুন সংক্রমণ দেশটিকে উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে। দেশটিতে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় যথেষ্ট কম হলেও তা মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেনা মোতায়েনকে নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে।