অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধরে ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল; দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরা। এডিবি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশকে উপমহাদেশের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে সর্বত্রই ডিজিটালাইজেশন, মানবিকতা, শিল্পায়ন, জীবনমানের উন্নয়ন, কৃষি আধুনিকায়নে সাফল্যের শিখরে উঠেছে দেশ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রেখে সামাজিক সমৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে পরিবেশ উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি সবক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে গত কয়েক বছরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাদুকরী নেতৃত্ব এবং একের পর এক সাহসী পদক্ষেপ কার্যত দেশকে এই অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছে।
দক্ষিণ এশিয়া তথা সার্কভুক্ত ৮ দেশের (আফগানিস্তানসহ) মধ্যে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত যা পারেনি; বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকদের জন্য শেখ হাসিনা হয়ে গেছেন একজন অনুকরণীয় নেতৃত্ব। তিনি দেশ-বিদেশের নেতাদের কাছে হয়ে গেছেন আস্থা ও ভরসাস্থল। তার একাগ্রতা, দৃঢ়তা ও চিন্তাশীল নেতৃত্ব দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি, সমুদ্র বিজয়, নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশ বিজয়, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি, স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা সমুজ্জ্বল হয়েছে।
এমনকি করোনা মোকাবিলায় শক্তিধর দেশগুলো নাকানিচুবানি খেলেও শক্ত হাতে শেখ হাসিনা অদৃশ্য ভাইরাস সামাল দিচ্ছেন। অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনো আক্রান্ত ও মৃতের হার কম। করোনায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের জন্যই করোনাকালে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮.২ ধরে সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট পাস করা হয়েছে। পররাষ্ট্র নীতিতে নিজ দেশের মর্যাদা সমুন্নত রেখে কী প্রতিবেশি, কী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেই বাংলাদেশ উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃত্বে এখন শেখ হাসিনার অবস্থান সবার শীর্ষে।
শেখ হাসিনার ডায়নামিক লিডারশিপ দেশকে অন্যন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নসহ অনেক বিষয়ে বিশ্বের বহু দেশের কাছে বাংলাদেশ এখন উদাহরণ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ঝড়-বন্যা-খরা সামাল দেয়ার ক্ষেত্রেও তাই। দেশের উন্নয়ন, বেসরকারি খাততে সহায়তা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিরোধপূর্ণ বিশ্ব রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বিদেশনীতিতে ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ এমন ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব খুব কম নেতাই দেখাতে পেরেছেন। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেরই প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ ওপেন সিক্রেট।
পাশের দেশ ভারত প্রায় সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে; ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার দৃরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বটা এখনো রয়ে গেছে। সুপার পাওয়ার চীন ও ভারতের অবস্থান মুখোমুখি। দুই দেশই বাংলাদেশকে অন্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার বিপক্ষে। কিন্তু কৌশলি নেতৃত্ব দিয়ে দুই বিরোধপূর্ণ দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলছে বাংলাদেশ।
শুধু কি তাই, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে তথাকথিত প্রগতিশীলদের অনেকেই উস্কে দিয়েছিল; কিন্তু শেখ হাসিনা সেই উস্কানিতে কান দেননি। পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলছেন। গার্মেন্টস পণ্যে আমেরিকার জিএসপি সুবিধা বন্ধ। কিন্তু বাংলাদেশ দমে যায়নি; এগিয়ে গেছে। ইউরোপ ছাড়াও তৈরি পোশাকের নতুন নতুন বাজার খুঁজে নিয়েছে।
শেখ হাসিনা ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় একক নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা কী দেখি? ভুটান ছোট দেশ, ছোট অর্থনীতি। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। দেশটির অর্থনীতি তেমন উল্লেখ করার মতো নয়। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুম রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছেন। এক সময়ের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্রটির অর্থনীতি এখন ভঙ্গুর। দেশটির ছোট অর্থনীতিতে চীন শতকরা ৭০ ভাগ সহায়তা করলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটছে না।
চীন ও ভারত দেশটির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা করায় যে কোনো সময় সরকার পড়ে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ভাল নেই। যুগের পর যুগ ধরে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের সঙ্গে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হানাহানি কমেনি। জাফনায় এখনো তামিলদের প্রাধান্য। ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশটিতে সব সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা। জাতিগত সংঙ্ঘাত দেশটির সামনে অগ্রসরের পথ আটকে দিয়েছে।
ভারতের খপ্পর থেকে নেপাল বের হয়ে এসে চীনের সহায়তায় অর্থনীতি সচল রেখেছে। কিন্তু ভারতের ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয়নি। নানাভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের নাগরিকদের উস্কানি দিচ্ছে ভারত। অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে। রাজনৈতিক সক্সঘাত বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে এখন ক্ষমতার টলটলায়মান অবস্থা। আফগানিস্তানে কার্যত মেরুদন্ডহীন সরকার। আমেরিকার অনুকম্পায় সরকার দেশ চলালেও নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। আমেরিকাও সেখানে বিপর্যয়ের মুখে। তালেবানদের সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে হচ্ছে। গোষ্ঠিগত সক্সঘাত তো পাহাড় পর্বতের দেশটিতে লেগেই রয়েছে। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে এগোতে পারছে না।
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ইমরান খান সুসম্পর্ক রক্ষা করলেও পাকিস্তানের সার্বিক অবস্থা ভাল নয়। জাতিগত সক্সঘাত ছাড়াও দেশটিতে ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দলগুলো বছরজুড়ে থাকে হানাহানিতে ব্যস্ত। জাতিগত বিরোধ তো রয়েছেই। পিপিপি ও মুসলিম লীগের মতো দল দেশের স্বার্থের বদলে নিজেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও এখনো সেনাবাহিনী সর্বেসর্বা। চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিলেও সাবেক ক্রিকেটার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কার্যত কঠিন সময় অতিক্রম করছেন। ক্রিকেট খেলার মতো পাকিস্তান এখনো অনিশ্চয়তার দেশ। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।
‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ - যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস’ সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
বাংলাদেশের অর্জনঃ
ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৩ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর মতে কিছুকিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম। দেশের খাত ওয়ারী চিত্র তুলে ধরা যাক,
শিক্ষাখাতে অর্জনঃ
শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে "শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট”।
স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্যঃ
শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১”। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি(১) কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি(২) উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ১৯৯০ সালে নবজাতক মৃত্যুর হার ১৪৯ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩তে(৩)। স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি(৪) মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারেও বেশি জনশক্তি।
নারী ও শিশু উন্নয়নে অর্জনঃ
নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১”। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও। “জাতীয় শিশু নীতি-২০১১” প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। দুঃস্থ্, এতিম, অসহায় পথ-শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ এওয়ার্ডে। মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স এগেইনস্ট ওমেন
নারীর ক্ষমতায়নে অর্জনঃ
নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০% এর উপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনঃ
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লক্ষ(১) এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লক্ষে(২) উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন
কৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে।প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭ টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ করেছেন ৩টা। তাঁর এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত।
প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে অর্জনঃ
বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বল্প সুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে এর শাখা স্থাপন করা হয়েছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত ২০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানি ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকগণ যেতে পেরেছে।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশঃ
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে।
বিদ্যুৎখাতে সাফল্যঃ
বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট(১) বিদ্যুৎ সংযোজন, যার ফলে বিদ্যুতের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে ৬২ শতাংশে(২) উন্নীত হয়েছে। একই সাথে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৩৪৮ কিলোওয়াট(৩) ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ৩৫ লক্ষ গ্রাহককে।নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ৬৫টি(৪) বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
শিল্প ও বাণিজ্য খাতে অর্জনঃ
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ঔষুধ, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য শিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ঔষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের আইটি শিল্প ১০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের অর্জন
হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ সালে এই খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বর্তমানে এ কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি(১) টাকা। খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০ এর সমীক্ষায় দেখা গেছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৫% সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হয়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় অর্জন
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত হয়েছে “কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১২ এর খসড়া”।
মন্দা মোকাবেলায় সাফল্যঃ
মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপয্ক্তু প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে।
অপর দিকে আয়তন-লোকসংখ্যায় বড় হলেও একরোখা নেতৃত্বের কারণে ভারত কার্যত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে। আরএসএসের ভাবশিশ্য নরেন্দ্র মোদি দেশকে রামরাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করায় এখন সর্বত্রই হানাহানি। গান্ধীর দেশ ভারতে সামাজিক বন্ধন ভেঙে গেছে এবং সর্বত্রই সামাজিক বিশৃঙ্খলা। ড. অমর্ত্য সেনসহ সে দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মোদি ভারতের অর্থনীতি এমন ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়েছেন যে, বিগত ৫০ বছরে দেশটির অর্থনীতি এত খারাপ হয়নি। মোদির আগ্রাসী নীতিতে বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে দেশটি। ছোটবড় প্রতিবেশী সব দেশের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ। ফলে ভুটান ও নেপালের মতো দেশ ভারতকে চোখ রাঙায়।
গোটা ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর নীলনকশায় দেশটির অন্যসব রাজনৈতিক দল মেনে নিতে পারছে না। তাদের শঙ্কা, রাশিয়ার পুতিনের মতো মোদি দীর্ঘদিন ভারতের ক্ষমতায় থাকতে গেরুয়া পোশাকধারীদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। দেশটির লেখক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ সকলেই হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। করোনায় নাস্তানাবুদ ভারত বড় অর্থনীতির দেশ হয়েও লাদাখে চীনের কাছে ধরাশায়ী (২৩ সেনা নিহত) হওয়ায় মোদি এখন চাপের মুখে। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আনপ্যারালাল। অর্থনৈতিকভাবে সবল এবং শক্ত নেতৃত্বের হাতে দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপ্রতিদ্বিদ্বী। দেশে নানা পথ-মতের মানুষের রাজনীতি থাকলেও শেখ হাসিনা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে দেশ। শেখ হাসিনার দূরদর্শী সাহসী সিদ্ধান্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সকলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার দৃঢ় সিদ্ধান্ত ও সাহসী পদক্ষেপে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এখন বাস্তব। মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অসংখ্য মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। দেশে এখন সবকিছুই ডিজিটাল।
ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে অনলাইনে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসার ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সর্বত্রই পণ্য কেনাবেচা হয় অনলাইনে। করোনায় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচার প্রস্তুতি চলছে। শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদার চেয়েও দেশে এখন বেশি উৎপাদন হয়। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কুঁড়েঘরে বিদ্যুতের আলোর ঝলকানি। গ্রামাঞ্চলেও এখন ইন্টারনেট-ডিশ লাইন।
ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে গভীর সমুদ্রের তলদেশে অপটিক্যাল ফাইবার, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মোবাইল ব্যাংকিং, উপজেলা শহরে ব্যাংকের এটিএম বুথ, সহজলভ্য ইন্টারনেট সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। তার ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি ও নাগরিকদের ‘আইডি কার্ড’ দেয়ার কর্মসূচি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
তিনি ৩০ বছরের গঙ্গা পানি চুক্তি, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতি, মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা বিজয়, ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি, ছিটমহল সঙ্কটের সমাধান করেছেন। তিনি মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যার পুরস্কার হিসেবে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সম্মান অর্জন করেছেন। শেখ হাসিনা শিল্পায়নের পাশাপাশি কৃষিতে সাফল্য দেখিয়েছেন। কৃষিতে আধুনিকায়ন এবং নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করায় ধান উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে উঠতে যাচ্ছে।
ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমারা সব সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত। ফলে ৯২ ভাগ মুসলমানের এই বাংলাদেশে ‘জঙ্গিবাদ’ তকমা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে অপপ্রচার হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। নানা ধরনের উস্কানি ছিল। জঙ্গিরা হলি আর্টিজান হত্যাকান্ডসহ বেশ কয়েকটি পৈচাশিক ঘটনাও ঘটিয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার শক্ত নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জঙ্গিদের মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে।
শুধু কি তাই, বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবিলায় শেখ হাসিনা আমলা, রাজনীতিক যাকে যেভাবে পারছেন ব্যবহার করছেন, কাজে লাগাচ্ছেন। করোনাকালে ৭ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। ২ কোটি পরিবারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন ডিজিটাল ব্যাংকিং চ্যানেলে। করোনায় ভারতের বেহাল অবস্থা। অথচ করোনা দুর্যোগে সবকিছু বন্ধের মধ্যেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। গত জুন মাসে ১৮৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কারণ শেখ হাসিনা রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়েছেন।
রেমিট্যান্সের মতোই নতুন মাইলফলক অতিক্রম করেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ এখন ৩৬ বিলিয়ন (৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার)। শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্বের পক্ষেই এমন সাফল্য সম্ভব। করোনার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলা করেছেন শক্তভাবেই। অথচ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এখনো আম্পানের ছোবলে কোমর সোজা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা হয়ে গেছেন মানুষের ভরসাস্থল। অনেকের কাছে অপ্রিয় হলেও সত্য, শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে ১৮ কোটি মানুষের দেশ এখন শান্তিপূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র।
এই সাফল্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা শেখ হাসিনাকে নানাভাবে সম্মানিত করেছে। তিনি জাতিসংঘের ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার’, ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কার, আবহাওয়া পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ পেয়েছেন।
এছাড়াও রাজনীতিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনে ‘পান ওম্যান ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড’, নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘শান্তি বৃক্ষ পদক’, ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’, জাতিসংঘের ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড’, ‘ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড’, ‘কালচারাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড’, ‘গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড’, ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক’, ‘ডক্টরস অব হিউম্যান লেটার্স’, ‘মাদার তেরেসা পদক’, ‘নেতাজি মেমোরিয়াল পদকসহ অর্ধশতাধিক পদক পেয়েছেন।
তিনি বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ডিগ্রি ও সম্মাননা পেয়েছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যা পেয়েছেন, বাংলাদেশ তো নয়ই; দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো নেতার পক্ষে অর্জন সম্ভব হয়নি। পুরস্কারের পাশাপাশি তিনি নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণে বিভিন্ন স্বীকৃতিও অর্জন করেন। বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের ক্ষমতাধর শত নারীর তালিকায় ৩৬তম এবং নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেন। নেতৃত্বের সাফল্যের জন্য তার আরো অনেক অর্জন রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দল ও সরকারে সফল নেতৃত্বের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার কার্যত আনপ্যারালাল-অপ্রতিদ্বিদ্বী। অধ্যবসায় আর কঠোর পরিশ্রমী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিদ্বিদ্বী দেশে নেই। সংসদে যে বিরোধী দল রয়েছে; সেই জাতীয় পার্টি তার অনুগ্রহে চলে। আর মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি হয়ে গেছে পথহারা পাখি। তাদের কার্যক্রম শুধু সংবাদ সম্মেলনের মাঝে সীমাবদ্ধ থকে। নেতৃত্বের ভুলে দলটি এখানে-সেখানে মুরুব্বি খুঁজতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশপ্রেমের সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে শেখ হাসিনার সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। তার নেতৃত্বে ২০২১ সালে দেশ এগিয়ে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে শেখ হাসিনার অবস্থান শীর্ষে এ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জনসংখ্যাÑ১৬ কোটি ৩৭ লাখ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারÑ১.৩৭ শতাংশ। পুরুষ ও মহিলার অনুপাতÑ১০০.২ : ১০০। জনসংখ্যার ঘনত্বÑ১১০৩ জন/বর্গকিমি। শিশু মৃত্যুহারÑপ্রতি হাজারে ২৪। গড় আয়ুÑগড়ে ৭২ বছর (পুরুষ ৭০.৬, মহিলা ৭৩.৫ বছর)।
ডাক্তার ও জনসংখ্যার অনুপাতÑ১ : ১৭২৪ সাক্ষরতার হারÑ৭২.৩ শতাংশ।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারÑ৮.১৩ শতাংশ। মাথাপিছু
আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার। মাথাপিছু জিডিপি ১৮২৭ মার্কিন ডলার। মোট শ্রমশক্তিÑ৬.৩৫ কোটি (পুরুষ ৪.৩৫ কোটি, নারী ২ কোটি)।
খাতভিত্তিক শ্রমশক্তিÑকৃষি ৪০.৬ শতাংশ, শিল্প ২০.৪ শতাংশ, সেবা ৩৯ শতাংশ। মোট সড়কÑ২১৫৯৬ কিমি। জাতীয় মহাসড়ক ৩৯০৬ কিমি, রেলপথ ২৯৫৬ কিমি। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থÑ১১৮৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মোট ব্যাংকÑ৫৯টি (রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬টি বিশেষায়িত ব্যাংক ৩টি, বেসরকারি ৪১টি, বৈদেশিক ব্যাংক ৯টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩৪টি)
রিজার্ভ মুদ্রাÑ২২৬৭৪৩ কোটি টাকা।
মূল্যস্ফীতিÑ৫.৪৪ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নাকানি চুবানী খাচ্ছে, অসাহায় হয়ে পড়েছে। আর বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। মানুষের সচেতনতা ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ, জনসাধাণকে সচেতন করতে পারায় সুস্থ্যতার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোটা বিশ্বের নিকট এটা অনুকরনীয় হয়ে থাকবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সর্বক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে উন্নয়ন করে যাচ্ছ, ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে ইনসাল্লাহ। শেখ হাসিনা বিকল্প শেখ হাসিনা। বিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল।