স্বাধীনতা অর্জন ও মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদান অবিস্মরণীয়। তদোপরি মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, ইপিআর (বিজেবি), আনসার, সিভিল প্রশাসন, বিচার বিভাগ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী, সাংবাদিক, গণমাধ্যম, ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবি ও দেশের সর্বস্তরের মানুষের অবদানও চিরস্মরণীয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও লাল সবুজের পতাকা আমাদের গর্ব ও অহংকার। স্বাধীনতার মূল স্তম্ভ ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতান্ত্রিক অধিকার, অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থানের সমুন্নত মৌলিক অধিকার ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। হানাদার বাহিনীর বুলেটে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) প্রধান বিচারপতি বি.এ সিদ্দিকি কষাই টিক্কা খানকে সেদিন শপথ গ্রহণ করাননি। তবে এ কথা বলা চলে, স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার পর এবং দুদকের নিষ্ঠাবান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও দুর্নীতি বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ এর ন্যায় সামনে বেড়েই চলছে। দুর্নীতি যেন কারও রাখডাক কোনো কিছু মানছে না, সোনামির মতো এগিয়েই চলছে। দেশের এমন কোনো স্তর নেই যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে না। দিনের পর দিন দুর্নীতি নামক মহাদানব ও রাক্ষস সবকিছু যেন ক্ষত, বিক্ষত ও অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। দুর্নীতিকে আয়ত্বে আনতে না পারলে দেশের উন্নয়ন, প্রগতি, সমৃদ্ধি ও সকল অর্জন ব্যাহত হয়ে পড়লে হয়তো এক সময় করার কিছু নাও থাকতে পারে।
প্রতিদিন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দৃশ্যপটে অহরহ বেসামাল দুর্নীতির সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন প্রজেক্টে দুর্নীতির ফিরিস্থি দেখলে গা শিহরিয়ে ওঠে। এমনিভাবে একটা শ্রেণী দেশের সম্পদ পাচার করে আমেরিকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, আবুদাবীসহ বিভিন্ন দেশে হোমল্যান্ড ব্যবসা বাণিজ্য করতে দ্বিধা সংকোচ ও কোনো নির্দেশনা মানছে না। তথ্য ও সূত্রে জানা যায়, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অনেকেরই অপ্রদর্শিত ৫৪২৭ কোটি টাকা রয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগ, সাশ্রয়ী মূল্যে দরিদ্রদের মধ্যে চাউল বিতরণ, টি.আর, কাবিখা, জি.আর, কাবিটা, ভিজিডি, দরিদ্রদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত নগদ অর্থ বিতরণসহ সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি সোনামির মতো অপ্রতিরোধ গতিতে এগিয়েই চলছে। সম্প্রতি টিআইবি’র প্রতিবেদনে জানা যায়, ১০ জুন, ২০২০ ইং পর্যন্ত ২১৮টি দুর্নীতির ঘটনায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ কেজি ত্রাণের চাউল উদ্ধারসহ ৮৯ জন জনপ্রতিনিধিকে দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই মর্মে ১৬ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে টিআইবির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে থাকে। এই মর্মে ২৮ জুন দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক মুক্তখবরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ের ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার ৯৪ জন প্রতিনিধির দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধ্যান চালাচ্ছে। এরই মধ্যে দুদক দুর্নীতির অভিযোগে ২১টি মামলা করেছে। ২৮ জুন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অন্য একটি সংবাদে জানা যায়, সাতক্ষীরার গোয়েন্দা পুলিশ শুক্রবার কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর (কাবিখা) ৬৫৫ বস্তা গম পাচার
কালে জব্দ করা হয়ে থাকে। জব্দকৃত গমের মূল্য ১২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। মোদ্দা কথা দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়। এছাড়া উন্নয়ন কাজের ছোট বড় বিভিন্ন প্রজেক্টে সীমাহীন দুর্নীতির খবর প্রতিদিন ফলাও করে বেড়–চ্ছে। ব্যাংক, বীমায় চলছে হরিলুট। ঋণ খেলাপীদের তান্ডবে অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্যাংক ক্রাপসি চলছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য বিভাগে বেসামাল দুর্নীতির কথা এখন কারও অজানা নহে। সবকিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করলে যে কারও মনে হবে দেশে দুর্নীতি যেন সমুদ্রের ফেনার মতো (ঋষড়ড়ঃরহম জরনং) ভাসছে। এহেন দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে ৪৯ বছরে দেশে অনেক কিছু হয়ে গেলেও আজও দুর্নীতিবাজদের শিক্ষা হয়নি। এখনই তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন ও আয়ত্বে আনতে না পারলে এক সময় তা আফগানিস্তানের আফিম চাষ, হেরোইন, ইয়াবার মতো বৃদ্ধি ঘটলে করার কিছু নাও থাকতে পারে। দেশের অনেক অভিজ্ঞজনদের এই শংকা ও অভিমত।
আফিম, হেরোইন, গাঁজা ও ইয়াবা বিস্তারে যেমন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের কথা শুনা যায়, তেমনি দুর্নীতিবাজদেরও বড় সিন্ডিকেট, গডফাদার, নাটের গুরু ও পেটুয়া বাহিনী রয়েছে বলে কম শুনা যায়নি। যখনই দুদক বা অন্য কোনো সংস্থা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে মাঠে নামে, দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেয়, তখনই সিন্ডিকেটের কারণে তা বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পেটুয়া বাহিনী গডফাদারদের নির্দেশে মিছিল করে স্লোগান দেয়, লাডু ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে বাইরে। লাডু ভাই যেখানে আমরা আছি সেখানে। আমার ভাই তোমার ভাই, লাডু ভাই, লাডু ভাই। ক্যাসিনো অভিযানে র্যাব, পুলিশ, দুদক ও অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনী সবিশেষ ভূমিকা রাখলেও শুনা যায় ক্যাসিনোর গডফাদারদের কেহ কেহ নাকি জামিনে বেড়িয়ে আসছে। ক্যাসিনোর নাটের গুরুদের অনেকেই নাকি এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে বহাল তবিয়তে আছে। যদিও ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে গ্রেফতারকৃত গডফাদারদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নাটের গুরুদের নাম, ঠিকানা, পদবী ও পরিচয় বলে গেছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানাজানি হয়ে থাকে।
দেশের মানুষ সিরিজ নাটক ও সিনেমার মতো আর দুর্নীতির কাহিনী শুনতে চায় না। মানুষ চায় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং দুদক চেয়ারম্যানকে এ ব্যাপারে সাধুবাদ জানালেও দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে দেশের মানুষের প্রত্যাশা আরও অনেক বেশী।
করোনা প্রতিরোধে বেসামরিক বা সিভিল প্রশাসনের সমন্বয়ে সারা দেশে সেনাবাহিনী নিয়োগ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত। ইন্দোনেশিয়াসহ দুনিয়ার অনেক দেশে সিভিল প্রশাসনের সমন্বয়ে দেশের সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ইতোপূর্বে আইডি কার্ড প্রণয়ন, ভোটার লিস্ট থেকে শুরু করে ভিজিডি কার্ড, রাস্তঘাট, সেতু মেরামত, রাজধানী ঢাকাসহ ময়মনসিংহের চার লেনের রাস্তা, বিভিন্ন পর্ষদে উন্নয়নের কাজ, বন্যা, সাইক্লোন, ঢাকার ওয়াসার পানি বন্টন, ডেসার বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা ও ঢাকার যানজট নিরসনে কাজ করার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড় ধ্বস, রানা প্লাজার দুর্ঘটনাসহ ট্রেন, লঞ্চ ও জাহাজ দুর্ঘটনায় আহত নিহতদের উদ্ধারেও অসহায় মানুষের পাশে থেকে সেনাবাহিনী দেশবাসীর অফুরন্ত প্রশংসা অর্জন করেছে।
করোনা ভাইরাসে সিভিল প্রশাসনের সমন্বয়ে, পরামর্শে ও দেশের জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা ও পুলিশ সুপারদের সহযোগিতায় পুলিশ, র্যাব, বিজেবি ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে সেনাবাহিনী এক সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো অনীহা, প্রতিকুলতা, বৈষম্য বা ঘাটতির খবর জানা যায়নি। ১৯৭৪ সালে সেনাবিহনী, রক্ষিবাহিনী, পুলিশ, বিডিআর সমন্বয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কম্বাইন্ড অপারেশন বা যৌথ অভিযানকালে দেশের কালোবাজারি ও দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের ধরার দৃষ্টান্ত আজও অনেকেই স্মরণ করে থাকে। দেশের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে দুর্নীতি দমন এখন করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ এর মতো ভয়াবহ সমস্যা।
গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে করোনায় চিকিৎসারত ডাক্তাররা ১ মাসে ২০ কোটি টাকার খাবার খেয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি ব্যাখ্যা প্রদান করে। ২ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়ে থাকে। ১ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও ৩০ জুন রাতে বিভিন্ন মিডিয়াতে দেখা যায়, ৩০ জুলাই মঙ্গলবার ২০২০-২০২১ ইং সংসদের অর্থ বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরী দাবীর ওপর ছাটাই প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির এমপি পীর ফজলুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ডাক্তারদের খাবার বিল নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন। সেখানে একটি কলার দাম ২ হাজার টাকা, একটি ডিমের দাম ১ হাজার টাকা, একটি ব্রেডের এক স্লাইসের দাম ৩ হাজার টাকা, দুই স্লাইস ব্রেডের দাম ৬ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, করোনাকালেও স্বাস্থ্যখাতে এ অবস্থা বিদ্যমান। তিনি সংসদে স্মরণ করিয়া দিয়ে বলেন, জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে দেশের দুর্নীতি দমন বিভাগ তাকে করোনা কিট ও পিপিই দুর্নীতির অভিযোগে মামলা রুজু করেছে। করোনাকালে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এহেন দুরবস্থা দেখছি। মানুষ বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাকি মীনা কার্টুনে পরিণত হয়েছে। মীনা কার্টুনের টিয়াপাখি (মিঠু) দিয়ে চলছে এই মন্ত্রণালয়। তিনি আরও বলেন, এলাকায় গেলে মানুষ আমাকে বলে, আমি যেন সংসদে গিয়ে এ কথা বলি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে মানুষের এ কথাটা নিবেদন করলাম।
জানা যায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি ভবনের জন্য অস্বাভাবিক দামে আসবাবপত্র ক্রয় সংক্রান্ত মামলা হয়। এ ব্যাপারে দুর্নীতি বিভাগের দুটি মামলায় ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪২ হাজার ও ৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এখানে একটি বালিশের দাম নাকি ৬ হাজার টাকা ধরা হয়। এ দুর্নীতি বালিশ কান্ড নামে অভিহিত।
দেশের অনেকেরই অভিমত সেনাবাহিনী যেহেতু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সিভিল প্রশাসনের সহযোগিতা ও পরামর্শ অনুসারে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে কাজ করছে তেমনিভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে দুর্নীতি দমনে সেনাবাহিনী নিয়োগ করলে লাগামহীন দুর্নীতি, অনিয়ম কমে যেতে পারে। দুর্নীতি দমনে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা ও দুদক চেয়ারম্যানের অক্লান্ত শ্রম, সাধনার পরও দুর্নীতি দমন হচ্ছে না। দুর্নীতি দমনেও যেন ভূত ঢুকেছে। দুদকের অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও দেখা যায়। পুলিশের বরখাস্তকৃত ডিআইজি মিজানুর রহমানের দুর্নীতি তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির যেমন কারাগারে রয়েছে তেমনি আরও অনেকে বরখাস্ত ও বিভিন্ন অভিযোগে আইনের বেড়াজালে আটকা রয়েছে বলেও জানা যায়।
১৯৭৪ সালের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, কালোবাজারি দমন ও ৮৮ সালে বন্যায় ত্রাণকার্যে সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডের প্রশংসনীয় উদ্যোগের কথা নিবন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হল। ৭৪ সালে সারাদেশে যখন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, তখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকা ভুলে যাওয়ার নয়। সেই সময় কিশোরগঞ্জ মহকুমায় কম্বাইন্ড অপারেশনের দায়িত্বে ছিল সেনাবাহিনীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটের কমান্ড মেজর দেওয়ান, ক্যাপ্টেন আনোয়ার ও লেঃ বজলুর রহমান। সেই সময় তাদের কর্মতৎপরতায় ও প্রচেষ্টায় দুর্নীতির অনেক রাঘব বোয়াল ধরা পড়ে এবং ৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে (৭৪ ঝঢ়বপরধষ চড়বিৎ অপঃ) বিচারের সম্মুখীন করা হয়। সেই সময় কিশোরগঞ্জর মহকুমা প্রশাসক (ঝউঙ) ছিলেন আবদুস সাত্তার খান।
১৯৮৮ সালে সর্বনাশা বন্যায় সারাদেশ প্লাবিত হলে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ময়মনসিংহের ১৯ পদাধিক ডিভিশনের অধীন ২৫ বেঙ্গলের একটি সেনা কমান্ড লেঃ কর্ণেল আঃ খালেক ও সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর সাঈদের তত্ত্বাবধানে কিশোরগঞ্জ জেলার ভাটি এলাকাসহ জেলার অন্যান্য এলাকায় ত্রাণ কার্যে অংশগ্রহণ করে থাকে। দুর্গতদের পাশে থেকে সহানুভূতি ও সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে থাকে। যা আজও কারও ভুলে যাওয়ার নহে। তখন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ছিলেন সাইফুজ্জামান। আমি তখন একজন সাংবাদিক ও জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন সার্বিক সমন্বয় কমিটির সদস্য হিসেবে তাদের সাথে ভাটি এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা দেখার সুযোগ হয়েছিল। তখন দেখেছি, সেনাবাহিনী নাওয়া খাওয়া ত্যাগ করে কিভাবে ত্রাণ কার্য পরিচালনা করেছে। যা আজও ভুলার নয়।
বর্তমানে দেশে দুর্নীতির যে মহোৎসব চলছে, এই দুর্নীতি দমনে প্রধানমন্ত্রী যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন এবং দুর্নীতি দমনে দুদক চেয়ারম্যান যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও সোনামীর মতো দুর্নীতি সামনে এগিয়েই চলছে। অনেকের অভিমত ও প্রেক্ষাপট মনে করে একটা দেশ এমনিভাবে চলতে পারে না। তাছাড়া যে দুর্নীতি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় এবং প্রস্তাব আসে এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে।
অনেকেরই অভিমত সবকিছু বিবেচনা করে দুদক ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে এবং সিভিল প্রশাসনের সহযোগিতায় করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রনে সেনাবাহিনী যতদিন মাঠে আছে এই সময়টুকু দুদক ও সেনাবাহিনী সমন্বয়ে দুর্নীতি দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ দিকটা ভেবে দেখার জন্য দেশের বিজ্ঞজনরাও অভিমত প্রকাশ করে থাকে। সেনাবাহিনী এদেশেরই সন্তান। দেশের জন্য কারও চেয়ে তাদের ভালোবাসা, দরদ ও দেশপ্রেম কোনো অংশে কম নহে। পরিশেষে বলা যায়, দুর্নীতিবাজরা ঘাতক, দানব, রাক্ষস ও উন্নয়নের প্রতিবন্ধক। তাদের কোনো জাত নেই, দল নেই, দর্শন নেই। এখনই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মুখ্যম সময় বলে অনেকেরই অভিমত। দুদক সমন্বয়ে দুর্নীতি দমনে সেনাবাহিনী নিয়োগের এখনই সুযোগ। কারণ সেনাবাহিনী করোনা ভাইরাস কোভিড- ১৯ নিয়ন্ত্রণে এখন মাঠে রয়েছে। দেশের মানুষ রাষ্ট্র ও সরকারের নিকট প্রত্যাশা করে শান্তি, স্বস্থি, নিরাপত্তা ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট