পুলিশ পরিদর্শক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয় আর সরকারী কর্মকমিশন সচিবালয়ে (পিএসসি) চিঠি চালাচালির মধ্যে আটকে রয়েছে। এতে অনেক পরিদর্শকের মধ্যে হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সারাদেশে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পাঁচ শতাধিক পদ শূন্য রয়েছে। পদোন্নতি না হওয়ায় অনেকেরই পরিদর্শক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন থানায় সততা,দক্ষ,পরিশ্রমী,মেধাবী,কৌঁশলি ও বিচক্ষণতার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করা ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ওসি, ইন্সপেক্টরসহ (তদন্ত) পুলিশের বিভিন্ন সংস্থায় দায়িত্বরত ইন্সপেক্টরদের দৈনন্দিন কাজেও এর ছাপ পড়ছে। বিশেষ করে এ পদোন্নতি না পাওয়ার আশ্বাসে অনেকের পরিবারেও দেখা গেছে হতাশার চাপ।
১৯৯০ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত এসআই গন মাত্র ১ টা প্রমোশন পেয়েছে অথচ এ কী সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এএসপি গন ৫টা প্রমোশন পেয়েছে। অথচ তারা একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একই সময়ে চাকরিতে ভর্তি হয়েছে। অধিকাংশ পরিদর্শক যাদের মধ্যে অনেকেরই চাকরির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যেই অনেকেই কস্টকে বুকে ধারণ করে অবসরে চলে গেছেন। নিয়মানুযায়ী অনেকেই যাচ্ছেন। কারো কারো মৃত্যুও হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের তিন হাজারের বেশি পুলিশ পরিদর্শক পদের বিপরীতে পদোন্নতি যোগ্য এসপি পদের সংখ্যা মাত্র ৪৪১টি। এই এএসপি পদের মোট ১৩২২ টি পদের বিপরীতে ৮৮১ পদকে পূর্ণ করা হয় সরাসরি বিসিএস ক্যাডার থেকে এবং ৪৪১ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে। এই ৪৪১ টি পদের ৭২ দশমিক ১০ শতাংশ পদ পূরণ করা হয় নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক হতে ১৪.২৫ শতাংশ পূরণ করা হয় শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক হতে এবং ১৩.৬ শতাংশ সশস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক হতে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে পুলিশের সশস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক হতে এএসপি পদে পদোন্নতি যোগ্য কোনো প্রার্থী না পাওয়ায় এই কোটায় ১৮ টি পদ শূন্য রয়েছে। যা নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শকদের হাজার হাজার যোগ্যপ্রার্থীর মধ্য হতে পূরণ করা যেত। কিন্তু কোনো বাস্তব ভিত্তিক আন্তরিক পদক্ষেপের অভাবে সেটা এখানো আলোর মুখ দেখছে না। যা চাকরি ক্ষেত্রে শুধু বৈষম্য নয় মানসিক অশান্তি এবং চরম হতাশা থেকে দুর্নীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের এমন কোন সংস্থা সম্ভবত আর দ্বিতীয়টি নেই যেখানে ৩০ বছরে মাত্র একবার পদোন্নতি পেয়ে চাকরি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সমস্ত হতাশাগ্রস্থ হতোদ্যম পুলিশ সদস্যগণ যদিও তাদের বর্তমান যে স্কেলে বেতন পাচ্ছেন সেটা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
তাঁদেরকে পদোন্নতি দিলে সরকারের অতিরিক্ত কোন ব্যয়ের সম্ভাবনা নেই বরং তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকারের মানবিক পুলিশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারতো। সরকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার পদকে সুপারনিউমারি মাধ্যমে প্রদান করছেন, যার ফলে এখন এএসপিদের তুলনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং পুলিশ সুপারদের তুলনামূলক পদ সংখ্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যেটা অনেকটা মাথাভারী প্রশাসনের আকার ধারণ করেছে, পুলিশ বাহিনীর এই অসামঞ্জস্যতা সমাধানকল্পে অতিদ্রুত এএসপি পদসংখ্যা বৃদ্ধি এবং পুলিশ পরিদর্শক হতে এএসপি পদে পদোন্নতি সংখ্যা প্রয়োজনে সুপারনিউমারি না করলে এই বাহিনীর মধ্যে চরম অসন্তোষ এবং নানাবিধ হতাশার আশঙ্কা থাকবে। দেশের প্রতিটি থানায় সহকারি পুলিশ সুপার এর পদ সৃষ্টি করত: অথবা উপজেলা পুলিশ কর্মকর্তা পদ সৃষ্টির মাধ্যমে ও এই পদোন্নতি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
পদোন্নতি আটকে থাকাদের দাবি হলো নিয়মানুযায়ী ১০ থেকে ১২ বছর ধরে ইন্সপেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মক্ষেত্রে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তাদের অনেকেই রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) ও বাংলাদেশ পুলিশ পদকসহ (বিপিএম) বিভিন্ন ধরনের পদক পেয়েছেন। ৫০ভাগ ডিপার্টমেন্টাল পদোন্নতি দেয়ার দাবীও জানান তারা। সংশ্লিস্ট সূত্র বলছে, কোটা অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশ এএসপি পদ পাওয়ার কথা নিরস্ত্র পরিদর্শকদের। প্রতি বছরই বিসিএস থেকে এএসপি পদে নিয়োগও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পদোন্নতি হচ্ছে না শুধু চাকরিরত ইন্সপেক্টরদের। নব্বইয়ের দশকে বিসিএস থেকে চাকরি নিয়ে অনেকে ছয় ধাপ পদোন্নতি পেয়েছেন। ৯৪ সালে কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক হয়ে তিন দফা পদোন্নতি পেয়েছেন। মাত্র ১০ থেকে ১২ বছর আগে বিসিএস ক্যাডারে যোগদান করে তিন দফা পদোন্নতিরও নজির রয়েছে। পদোন্নতি আটকে থাকা ইন্সপেক্টররা দাবী করছেন যে, নিয়মানুযায়ী ১০ থেকে ১২ বছর ধরে ইন্সপেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মক্ষেত্রে সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তাদের অনেকেই রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) ও পুলিশে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ইন্সপেক্টর দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে পুলিশ ইন্সপেক্টরদের (পরিদর্শক) পদোন্নতি। সারাদেশে এএসপি পদে পাঁচ শতাধিক পদ শূন্য রয়েছে। কিন্তু ইন্সপেক্টর(পরিদর্শক নিরস্ত্র)থেকে পদোন্নতি না হওয়ায় ঐ পদে যুক্ত হতে পারছেন না দায়িত্বরত শতাধিক কর্মকর্তা। বর্তমানে এএসপি পদবঞ্চিত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ইন্সপেক্টর। যার মধ্যে অনেকেরই চাকরির মেয়াদ শেষ প্রান্তে। উপর্যুক্ত বুক্তিযুক্ত বিষয়টি নজরে নেওয়া এবং দাবী মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ঐ সকল পুলিশ অফিসাররা।