ইজিবাইক ছিনতাই ও অভিনব কায়দায় চুরির ঘটনায় মানুষ দিশেহারা। প্রতারকরা করোনাকালের দুঃসময়কে পুঁজি করে গ্রামে গ্রামে অভিনব ফাঁদ পেতে চুরি করছে। কখনো আত্মীয়তার পরিচয় দিয়ে দাওয়াত করতে এসে টাকা ও সোনাদানা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হলিধানী বাজারে আলামিন নামে এক চোর দামি মটরসাইকেল হাকিয়ে চুরি করতে এসে ধরা পড়ে। অভিজাত ওই চোর চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের ইলিয়াস আলীর ছেলে। একই চোর গোবিন্দপুর গ্রামের আত্তাপের ছেলে বকুলের বাড়িতে আত্মীয়তার পরিচয় দিয়ে দুই জোড়া কানের দুল, সোনার চেইন দুইটা, দুইটি আংটি, পায়ের নুপুর, কপালের টিকলি ও চারহাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। দিনমজুর বকুল এ সব হারিয়ে এখন দিশেহারা। সাধুহাটী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আক্কাচ আলীর ছেলে হাবিজুদ্দীনের বাড়িতেও ওই চোর হানা দিয়ে ব্যর্থ হয়। কাকিলদাড়ী মাঠে চাষ করতে যাওয়ার সময় জীবননগর-কালীগঞ্জ সড়কের কাটাখালি নামক স্থানে এক কৃষককে বেঁধে রেখে তার হালের গরু ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এই অভিনব ছিনতাইয়ে পথে বসে কৃষক কাকিলাদাড়ী গ্রামের কুড়োন মন্ডলের ছেলে আসাদুল ইসলাম। কালীগঞ্জে শিপন কম্পিউটারে চুরির ঘটনায় দুই আসামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে চোরাইকৃত মালামাল ও নগদ টাকা উদ্ধার হয়।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ইউনিলিভার ডিপো এ আর ট্রেডোর্সে আবারো দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরেরা অফিসের জানালার গ্রীল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে ৭ টি ট্যাব ও নগদ টাকা সহ প্রায় দু’লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শহরের ফুড গোডাউনের সামনে এ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে সকালেই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অফিস পরিদর্শন করেছেন। উলে¬খ্য, গত বছরের ৩ নভেস্বর রাতে ওই অফিসে এক দুঃসাহসিক ডাকাতি সংঘঠিত হয়েছিল। মাত্র ৯ মাসের মাথায় এক প্রতিষ্ঠানে ২ বার চুরির ঘটনা ঘটলো।
শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের দুলালপুর গ্রামের শামছুদ্দিন ও রেজাউলের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। একই উপজেলার সাতগাছি গ্রামে প্রবাসির বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামে সুলতান মিয়া নামের এক কৃষকের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ সময় কৃষকের ৮ টি গরু, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল, বিদেশী কম্বলসহ মালামাল লুট করে বলে ওই পরিবারটি জানায়। রাত আড়াই টার দিকে ট্রাক ও পিকআপ নিয়ে ডাকাতরা ডাকাতি করে চলে যায়। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান বংকিরা গ্রামের সুজন বিশ্বাসের সম্বল বলতে একটি ইজিবাইক ছিল। দায় দেনা করে ঝিনাইদহ শহরের পাগলাকানাই সড়কের অগ্রযাত্রা বাইক সেন্টার থেকে এই গাড়ি কিনে দেন তার ভগ্নিপতি বকুল জোয়ারদার। প্রতিদিন ভাড়া মেরে সংসার চালাতো সুজন। গত ১৩ জুন যাত্রিবেশে দুই ছিনতাইকারী তার ইজিবাইক ভাড়া নেয়। পরদিন ১৪ জুন বিএডিসির সাধুহাটী কৃষি ফার্ম এলাকা থেকে সুজনের নতুন ইজিবাইক সেই অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীরাই ভাড়া নিয়ে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়ে অজ্ঞানের ওষুধ খাইয়ে ছিনতাই করে। সুজনকে অচেনত অবস্থায় পাওয়া যায় সদর উপজেলার নাথকুন্ডু গ্রামের মাঠে। এ ঘটনায় সুজনের ভগ্নিপতি ঝিনাইদহ সদর থানায় গত ২৩ জুন একটি অভিযোগ করলে সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান খান ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের আইসি পুলিশের এসআই মখলেছুর রহমানকে নির্দেশ দেন। অভিযোগ পেয়ে সুজনকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীদের ডেরার সন্ধান পায় পুলিশ। ২৫ জুন মাগুরাপাড়া গ্রামের বদর উদ্দীন মিস্ত্রির ছেলে আশিকুর রহমানের বাড়ি থেকে সুজনের ইজিবাইকের চাবি, মানি ব্যাগ ও স্যান্ডেল উদ্ধার হয়। বাড়িটি একদিন আগেই ছিনতাইকারীরা উন্নয়ন কর্মী হিসেবে ভাড়া নেয় বদর উদ্দীন মিস্ত্রির কাছ থেকে। কিন্তু তাদের পরিচয়পত্র বা ছবি তিনি রাখেন নি। সুজনের ইজিবাইক ছিনতাই করেই এলাকা ছেড়েছে চক্রটি। তবে মোবাইলের কললিষ্টের সুত্র ধরে পুলিশ ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার বা সনাক্ত করতে পারে বলে এলাকাবাসি মনে করছে। এলাকাবাসি জানায়, সুজনের ইজিবাইক ছিনতাই হওয়ার একদিন পর চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ এলাকার এক ইজিবাইক চালককে সদর উপজেলার বোড়াই এনায়েতপুর গ্রামে অজ্ঞান করে রেখে তার ইজিবাইকটি নিয়ে যায়। ছিনতাইয়ের ধরণ দেখে এলাকাবাসি মনে করেন এটি একই চক্রের কাজ। সর্বশেষ শনিবার সকালে ঝিনাইদহের সীমান্ত চুয়াডাঙ্গার জীবনা-ভুলটিয়ার মাঠে পুকুরে মাছের খাবার দেবার সময় জীবনা গ্রামের মহসিন বিশ্বাসের ছেলে ওবাইদুর রহমান টুটুর নতুন মটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে গেছে। মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে এই চুরি সংঘটিত হয়। জীবনা গ্রামের জিয়া বিশ্বাস জানান, ওই মাঠ থেকে তাদের গ্রামের প্রায় ৩০/৪০টি বাইসাইকেল চুরি হয়েছে। এসব চোরের দল ঝিনাইদহ চুয়াডাঙ্গা এলাকায় থাকেন বলে তাদের ধারণা। সাধুহাটী ইউনিয়নের অনেকই অভিযোগ করেন, এনজিও কর্মী বা বেসরকারী চাকরীজীবী পরিচয় দিয়ে বাইরের জেলার অপরিচিত দুর্বৃত্তরা হলিধানী, নগরবাথান, বৈডাঙ্গা, ডাকবাংলা, সাধুহাটী মোড়, ডাকবাংলা ত্রীমোহনী, শরোৎগঞ্জ, খাড়াগোদা, হিজলগাড়ি ও দশমাইলসহ বিভিন্ন বাজার বা গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে চুরি ছিনতায়ে লিপ্ত। রাতে রাস্তাঘাটে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, তার ইউনিয়নে অপরিচিত মানুষ বসবাস করছে এমন তথ্য তিনি লোকমুখে শুনছেন।
বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ সব বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস জানান, অপরাধীরা তো সর সময় সুযোগ খোজে অপরাধ করার জন্য। তবে এ বিষয়ে পুলিশ বেশ সজাগ। অপরাধীদের দমন করতে তাৎক্ষনিক ভাবে নানা কৌশল কাজে লাগাচ্ছে। তিনি বলেন, অভিনব চুরি থেকে রক্ষা পেতে সর্ব প্রথম মানুষকেই সচেতন হতে হবে। অপরিচিত মানুষদের বাড়িতে আশ্রয় না দেওয়া বা সন্দেহ হলে পুলিশকে জানাতে পারে।