কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুরসহ দু’ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। বন্যার পানি আবারও বৃদ্ধিতে মানুষের মাঝে চরম দূর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে আতংক। দুই উপজেলার প্রায়ই ৩০৫টি প্রাম এর মধ্যে ২৯০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে পানিবন্দী মানুষের মধ্যে।মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে হাহাকার। এছাড়াও দু’ উপজেলার ইউনিয়ন গুলোর সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা, চরশৌলমারী,শৈলমারী, বন্দবেড়, যাদুরচর ও রৌমারী সদর ইউনিয়নসহ ৬টি ইউনিয়নের ২০৩ টি গ্রামের মধ্যে প্রায় গ্রামগুলো পানিতে ডুবে গেছে। রাজিবপুর উপজেলার তিন ইউনিয়নের মধ্যে রাজিবপুর সদর ইউনিয়ন,কোদালকাটি ইউনিয়ন,মোহনগঞ্জ ইউনিয়নসহ তিন ইউনিয়নের ১৮২টি গ্রামের মধ্যে ৭২টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী। পানি বন্দি মানুষের রান্নার অভাবে শুকনো খাবারের হাহাকার দেখা দিয়েছে। রৌমারী উপজেলার খঞ্জন মারা বেঁড়িবাঁধের তিনটি, ঝগড়ারচর বেঁড়িবাঁধের দুইটি, সাহেবের আলগা বেঁড়িবাঁধের দুইটি স্থানে গত বছর বন্যা ভেঙে যায়। রাজিবপুরের কোদালকাটি নামক দু’টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্রায় ৩২টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি। দুই উপজেলার বাঁধের ভেতরে বসবাসকারী প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষের বাড়িতে বন্যার পানি ওঠে পড়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে। দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের, ডিগ্রিরচর, ইটালুকান্দা, গাছবাড়ী, আমবাড়ী, পালেরচর, গয়টাপাড়া, কাউনিয়ার, খেতারচর, ছাটকরাইবাড়ী, হরিনধরা, ধর্মপুর, কাউয়ারচর, ঝগড়ারচর, চরশৌলমারী ইউনিয়নের, চরইটালুকান্দা, কাজাইকাটা, চরকাজাইকাটা, শান্তির চর, ঘুঘুমারী, চর ঘুঘুমারী, চরশৌলমারী, পাখিউড়া, খেদাইমারী, জামাইপাড়া, খাসপাড়া, বন্দবেড় ইউনিয়নের বাইটকামারী, বাগুয়ারচর, বলদমারা, ঝুনকিরচর, ভেরামারা, তিন তেলী পাড়া, পশ্চিশ খঞ্জনমারা, বাইশপাড়া, কুটিরচর, ফলুয়ারচর, পালেরচর, চর বাঘমারা, যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর, ধনারচর নতুন গ্রাম, তিন তেলীরচর, খেওয়ারচর, বাওয়ার গ্রাম, বকবান্ধা নামাপাড়া, লালকুড়া, লাঠিয়াল ডাঙ্গা, রৌমারী ইউনিয়নের, চান্দারচর, ইছাকুড়ি, চুলিয়ারচর, বামনেরচর, চর বামুনেরচর, রতনপুর, বড়াইবাড়ী,বুন্দুরচর,রাজিবপুর উপজেলার রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের কেচোঁমারি, টাঙ্গালিয়া পাড়া, বদরপুর, মেম্বার পাড়া, মুন্সি পাড়া, আজগর দেওয়ানি পাড়া, টাঙ্গালিয়া পাড়া, কোদালকাটি ইউনিয়নের তেরো রশি পাড়, কোদালকাটি,সাজাই, চর সাজাই, মেম্বর পাড়া, মাষ্টার পাড়া, পাইকানটারি পাড়া, বাজার পাড়া, শংকর মাদবপুর, কারিগড় পাড়া, পাখিউড়ার, মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চরনেওয়াজি, ফকির পাড়া, নয়াচর বাজার পাড়া বল্লভ পাড়া, মাষ্টার পাড়া, সবুজপাড়া, নাওশালা, কীর্তনতারি, বড়বেড় চর। বন্যার পানি আবারো বৃদ্ধি হওয়ায় দিশাহাড়া হয়ে পড়েছে বানভাসীরা। এ ছাড়া নদী ভাঙনে রৌমারীর চরশৌলমারী, বন্দবেড় ও যাদুরচর ইউনিয়নের ৫২টি, রাজিবপুরের কোদালকাটি ও মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ২৮টি পরিবার বাস্তহারা হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত ও পানি বন্দি পরিবারগুলো সরকারি ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ায় তাদের দু’চোখে হতাশার ছাপ দেখা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডে দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৬.৭১ সে. মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১০৫ সে. মি উপর প্রবাহিত হচ্ছে। রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (রৌমারী ও রাজিবপুরসহ দুই উপজেলার দায়ীত্ব পালন করে যাচ্ছেন ) মো. আজিজুর রহমান বলেন, রৌমারী উপজেলায় দুই ধাপে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ৪৬টন জিআর চাউল, ৪ লক্ষ ষাট হাজার টাকার শুকনা খাবার, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দুইশত প্যাকেট শুকনা খাবার ও ১৬টন জিআর চাউল, ১লক্ষ পচিশ হাজার টাকার শুকনা খাবার, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে একশত প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এইসব ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আল ইমরান বলেন, বন্যায় পানিবন্দি পরিবারের মাঝে জিআর চাউল, শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ গত বছর বন্যা ভেঙ্গে যাওয়ায় বাঁধে’র ভেতর ও বাহিরে বসবাসকারী প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। রাজিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম বাদল জানান রাজিবপুর উপজেলার ১৮২টি গ্রামের মধ্যে ১৭২টি গ্রাম পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।