জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কক্সবাজারে দেশের বৃহত্তম আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬০০ গৃহহীন পরিবারের মাঝে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ঝুপড়ি ও কুঁড়েঘরে বসবাস করা এসব মানুষের নামেমাত্র ১ হাজার ১ টাকার বিনিময়ে উদ্বাস্তু জীবনের অবসান ঘটল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। আশ্রয়ণ-২ নামে এ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবনে বসবাসের সুযোগ পাবে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার। তাদের আশ্রয়ণের এ ব্যবস্থাকে আমরা একটি মহতী উদ্যোগ বলে মনে করি, এজন্য সরকারকে স্বাগত জানাই। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বাস্তুহারা এসব মানুষ ফদনার ডেইল, কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতি পাড়ায় মানবেতর জীবন কাটিয়ে আসছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার কথা। কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে খুরুশকুল এলাকায় বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে এই বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এরইমধ্যে নির্মিত হয়েছে ২০টি ভবন।
বস্তুত এ ধরনের প্রকল্প বিশ্বে বিরল। সেখানে বসবাসকারীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কক্সবাজার শহর থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রশস্ত রাস্তা। প্রকল্পের ভেতরের রাস্তা নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য নদীর পাশে ৭ মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। প্রতিটি ভবনের উপর সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা হবে। সুপেয় পানির জন্য ১০টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। দুটি পুকুর খনন করা হয়েছে। স্কুল তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় থাকবে ফায়ার স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি। শুধু তাই নয়, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যারা ফ্ল্যাট পাবেন, তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা হবে। আমরা মনে করি, শুধু দেশে নয়, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য স্থায়ী বসতি তৈরি করে দেয়ার বিষয়টি বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পর জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আশ্রয়ণের এ উদ্যোগ মানবিকতার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের নজির হয়ে থাকবে।