করোনার কারণে ক্রেতাকম থাকায় শেষসময়েও জমে উঠেনি লক্ষ্মীপুরে কোরবানির পশুর হাট। প্রতিবছর এই দিনে প্রতিটি বাজারে থাকতো জমজমাট, ভিড় থাকতো দূরদুরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এবার গরু নিয়ে খামারিররা আসলেও নেই আগের মতো ক্রেতা। যার কারণে গরুর দামও অনেক কমে গেছে।
বুধবার দুপুরে হায়দরগঞ্জ পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক। হাটগুলোয় মানুষের গাদাগাদি। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। কেউ দরদাম করছেন, কেউ পশু কিনে গাড়িতে তুলছেন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। কারও কারও মাস্ক থাকলেও তা নামানো থুতনিতে, কারওবা কানে ঝোলানো।
জেলার অধিকাংশ হাট গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। নেই প্রশাসনের কোন নজরদারী।খামারিরা বলছেন,গরু বিক্রিতে লাভ তো দূরের কথা’’হাটে ক্রেতা কম হওয়ায়সহ বিক্রিত গরুর মূল্য লালন পালনের খরচই উঠছে না।
হায়দরগঞ্জ পশুর হাটে গবাদিপশু কিনতে আসা মোকলেছ মিয়া, কামাল হোসেন বলেন,‘হাটে গরু-ছাগলের দাম বেশ কম হলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছে না কেউই। হাটে কাউকে তদারকি করতে দেখা যায়নি। যে কারণে আমরা বেশ আতঙ্ক বোধ করছি।’
ইজারাদারা বলেন,‘আমরা করব কী? পশুর হাটে অনেক লোক। আমরা বললেও শুনছেন না। মনে হচ্ছে পুরোনো পশুর হাটের রূপ ফিরে আসছে। পশু নয়, এ যেন করোনা ছড়ানোর হাট।’অপরদিকে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর,রামগতি,কমলনগর,রামগঞ্জ ও সদরসহ ৫ টি উপজেলার অধিকাংশ এখনো জমে উঠেনি। করোনা মহামারীর কারণে পশুর বাজার দর কম হওয়ায় গত হাট গুলোতে নেই ভারতীয় গরু। কোরবানির দেশীয় গরু নিয়ে খামারিররা আসলেও নেই আগের মতো ক্রেতা। বিক্রেতার চাইতে ক্রেতা কমহওয়ায় পুরোধমে জমে উঠেনি গরুর বাজার। গতবারের চেয়ে এবার লক্ষ্মীপুরের চরম বিপাকে রয়েছে পশু বিক্রেতারা। একই অবস্থা ছাগলের বেলায়ও।
গরু বিক্রি করতে আসা তাজল ইসলাম জানান,করোনা পরিস্থিতি ও বৃষ্টিপাত মানুষের হাতে টাকা পয়সা না থাকায় সে তুলনায় অধিক পরিমান দেশীয় গরু উঠায় গত বছরের চেয়ে প্রতি গরুর দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কমে গেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে,বিগত সময়ে ৬০ টি হাট বসলেও এ বছর লক্ষ্মীপুর জেলায় পশু বেচাকেনা হচ্ছে ছোট-বড় ২৫টি হাটে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ টি,রায়পুরে ৫ টি, রামগতিতে ৪ টি ,কমলনগরে ৫ টি,রামগঞ্জে ৬ টিসহ ২৫ টি হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন আবদুল গফফার বলেন, পশুর হাটের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা অনুসরণ না করলে করোনা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। মাস্ক পরা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্রপাল বলেন,পশুর হাটের ইজারাদারদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটরা হাটগুলোয় নিয়মিত নজরদারি করছেন। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেছেন,দালাল চক্র,অজ্ঞান পাটি,পকেটমার যাতে করে গরু ব্যবসায়ী নাজেহাল করতে না পারে এবং ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ যেন নির্বিগ্নে ও নিরাপদে গরু আনা-নেয়া করতে পারে, সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।