বৈশ্বিক মহামারি কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাসের ক্ষত না শুকাতেই বন্যা আতঙ্কে এখন সরাইল। গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে প্লাবিত হয়েছে সরাইল। ঈদণ্ডউল-আযহার আনন্দ হারিয়ে গেছে সহস্রাধিক পরিবারের। বানের পানির সাথে যুদ্ধ করে বাঁচার চিন্তায় কাবু তারা। সোমবার পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে গোটা উপজেলায় ৩ শতাধিক বসতবাড়ি। ডুবু ডুবুু অবস্থায় রয়েছে আরো ৪-৫ শতাধিক বাড়ি। অরূয়াইলে খোলা হয়েছে একটি আশ্রয় কেন্দ্র। সরাইল-অরূয়াইল সড়কটির উপর এখন একফুট পানি। মলাইশ-শাহজাদাপুর সড়কটিও আছে ঝুঁকিতে। উভয় সড়কেই বিচ্ছিন্ন এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরজমিনে ঘুরে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজন সূত্র জানায়, সরাইলের ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে অরূয়াইল, পাকশিমুল, শাহজাদাপুর ও চুন্টা ইউনিয়নের অনেক বসতবাড়ি এখন পানির নিচে। এ ছাড়া সরাইল সদর, নোয়াগাঁও, কালিকচ্ছ, শাহবাজপুর ও পানিশ্বর ইউনিয়নের কিছু বাড়িতে উঠেছে বন্যার পানি। ফলে বাড়ি থেকে গরূ ছাগল, হাঁস মোরগ সহ অন্যান্য মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। কেউ আশ্রয় নিচ্ছে স্বজনদের বাড়িতে। আবার অনেকে কষ্ট করে নিজ বাড়িতেই খাট চকি উঁচু করে বসবাস করছেন। অরূয়াইলের ষোলাকান্দি মাহিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবারই খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। সেখানে বর্তমানে বসবাস করছে ১০টি পরিবার। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা না হওয়ায় আরো ১৪টি পরিবারকে আশপাশের উঁচু বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওই আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার দিচ্ছেন। এ ছাড়া রানিদিয়া, রাজাপুর, কাকরিয়া, ষোলাকান্দি, ধামাউড়ার আদিরচড়, মিরহারবন সহ গোটা ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক বসতবাড়িতে পানি ওঠেছে। বানের পানির সাথে যুদ্ধ করেই বসবাস করছেন তারা। পাকশিমুল ইউনিয়নের লম্বাহাটি গ্রামে ২০-২২ টি বাড়িতে পানি ওঠেছে অনেক আগে। সম্প্রতি গোটা ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িতেই পানি। শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া, গাজিপুর, মলাইশ, শাহজাদাপুর ও নিয়ামতপুর গ্রামের ৬৬টি বাড়িতে এখন পানি। আর ধাউরিয়া গ্রামের ২ শতাধিক বাড়ি ডুবুডুবু অবস্থায়। আর সামান্য পানি বৃদ্ধি পেলেই তলিয়ে যাবে ওই বাড়ি গুলো। চুন্টা ইউনিয়নের চুন্টা বড়বুল্লা সড়কের পাশে ২০-২২টি বসত ঘরের মেঝেতে পানি। এছাড়াও অন্যান্য গ্রাম গুলো তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরাইল সদর ইউনিয়নের নোয়াহাটি এলাকার বেশ কিছু বসতবাড়িতে এখন পানি রয়েছে। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ঢাকাণ্ডসিলেট মহাসড়কের পাশে বাড়িউড়া নামক স্থানে ২০-২৫টি বসতবাড়িতে হাঁটু পানি। বাড়িঘর ছেলে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। কালিকচ্ছের চানপুর, গলানিয়ার অবস্থা ভয়াবহ। অন্যন্য নিচু গ্রামসহ ৫০-৬০ টি বসত বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। শাহবাজপুর ও পানিশ্বরের বেশ কিছু বাড়িও পানিতে তলিয়ে গেছে। অরূয়াইল, পাকশিমুল ও শাহাজাদাপুরের অনেক গ্রাম এখন যাতায়তের জন্য নৌকা ও কলা গাছের তৈরী ভেলা (ভুরা) নির্ভর হয়ে পড়েছে। করোনার প্রভাবে গত চার মাস ধরে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বেহাল। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের জীবন চলছে খুবই কষ্টে। এরমধ্যে আকস্বিক এ বন্যা মরার উপর খাড়ার গা। সীমাহীন দু:খ কষ্টের মধ্যে পড়েছে উপজেলার অনেক পরিবার। সোমবার দুপুরের পর অরূয়াইল আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে হাজির হন নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা। তিনি নৌকায় ঘুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রি পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি সকলকে বন্যার সময়ে করোনার কথা ভুলে যেতে নিষেধ করেছেন। স্বস্ব অবস্থানে যথাযথ ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় চলার পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা করোনার আতঙ্কের মধ্যেই বন্যার থাবার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। বিপদ থাকবে না। আমরা আপনাদের পাশে আছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিপদগ্রস্ত মানুষ গুলোর দিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও।