চলমান বন্যার দ্বিতীয় দফা পানি বৃদ্ধিতে ফরিদপুরে ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে, এতে ক্ষতিগ্রস্থ ৬৩ হাজার কৃষক। যদিও স্থানীয় হিসেবে এর পরিমান আরো বেশী। এর মধ্যে ধান, সব্জি ও রবিশষ্যের জমির পরিমান বেশী, রয়েছে ফরিদপুরের অন্যতম ফসল পাটও।
সরেজমিনে জেলার কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম দফার বন্যাতেই তলিয়ে যায় ফরিদপুরের নিম্মাঞ্চল। সেমময় ক্ষতিগ্রস্থ হয় বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবিশষ্য। এর পরে দ্বীতিয় দফায় পানি বাড়লে বিনষ্ট হয় পাকা ধান, সব্জি ক্ষেত, কলা বাগান ও পাট।
কয়েকদিনের মধ্যেই ধান ও পাট কাঁটার কথা ছিল কৃষকদের। কিন্তু দ্রুত গতিতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধান ও পাট কেটে ঘরে তোলার সুযোগ হয়নি তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. হযরত আলী জানান, জেলায় আউশ, রোপা আমন, বোপা আমন, রিলে আমন, বীজতলা ও সব্জিক্ষেতসহ ১৪ হাজার ৬’শ ৫৮ হেক্টর জমির ফসল পানির তলিয়ে নস্ট হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্র¯ ’ হয়েছে জেলার ৬৩ হাজার ৪২৫ জন কৃষক। এর বাইরে চরাঞ্চলের কলা বাগানসমূহের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সরকারি ভাবে সহযোগিতা আসলে তাদের দেওয়া হবে।
সরকারী হিসেবে পাটের তথ্য উল্লেখ না থাকলেও কৃষকরা জানিয়েছে, তাদের সকলের পাট ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা কাটতে পারেনি। আর এতদিন পানিতে ডুবে থাকায় ওই পাট আর কোন কাজেও আসবেনা।
জেলার সদর উপজেলার অম্বিকাপুর এলাকার কৃষক বক্কার খান বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ক্ষতি হয়, কিন্তু এবারের ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি। আমার ২০ বিঘা আমন, দুই একর পাটের গত ২০দিন হলো পানির নিচে। এই ক্ষেত থেকে ফসল পাওয়ার কোনো আশা নেই।
একই ভাবে বন্যার পানিতে ক্ষতির কথা জানালেন, নর্থচ্যানেল ইউপির গোলডাঙ্গীর এলাকার চাষী হাফিজুর। তিনি বলেন, সংসার চালানোর চালের চাহিদা মেটানোর জন্য ৬ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলা। সব শেষ।
তিনি জানালেন, একদিকে করোনায় আয়-ইনকামের পথ বন্ধ, এখন বন্যায় ক্ষতি হলো। কি ভাবে চলবে, বুঝতে পারছিনা।
সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুস্তাকুজ্জামান জানান, আমার ইউপির ৯০ শতাংশ পানিতে প্লাবিত। ক্ষেত-খামার যা ছিলো সব নষ্ট হয়ে গেছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার জানান, সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল, ডিক্রীরচর, অম্বিকাপুর, চরমাধবদিয়া এবং আলীয়াবাদ ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় এখনো পানিতে নিমজ্জিত। এ সকল এলাকার চাষীদের আবাদকৃত ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা করে জেলা কৃষি বিভাগকে জানিয়েছি।