করোনায় দাম না পাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারও সব জমিতে সবজি, পাট ও বর্ষালী ইরি লাগিয়েছিলেন কৃষক। আবাদে অধিক সময় ও পরিশ্রম দুটোই হয়েছে। কিন্তু সব কিছুই এখন পন্ডশ্রম। বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে তাদের ফসল। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় কৃষকের মাঠের পর মাঠ পরে আছে পানিতে পঁচে যাওয়া ফসলের আবাদ। ধার দেনায় উৎপাদন খরচ করে এখন এ অবস্থায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার কৃষকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পরার উপক্রম।
উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের বুরুঙ্গী গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ আক্ষেপ করে বলেন, কষ্টের কথা বলে কি লাব হবে বাহে? কেডা নেয় হামারে খবর। ক্যাও এ্যানা আসে কোলো না তোমার ক্যাংকা ক্ষতি হচে।
প্রতিবারই বন্যায় লাখ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হলেও সরকারি ভাবে কোন সহায়তা কপালে জোটেনা বললেন, একই গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ। কৃষক আবদুর রশিদ জানান, এবার বর্ষায় তার জমিতে পানি আটকে প্রায় দুই লাখ টাকার পটল ও করলা গাছ পঁচে নষ্ট হয়েছে। সবজি চাষ করে পথে বসতে হয়েছে তাকে। সামনে সংসার চলবে কিভাবে-এ চিন্তায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে বলে জানালেন ওই কৃষক। উপজেলার চর এলাকা গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বন্যার পানিতে আবাদ তলিয়ে নষ্ট হওয়ায় সব আশা ভেঙে গেছে বলে জানালেন ওই কৃষক। ৪ বিঘা জমির পাট তলিয়ে পঁচে যাওয়ায় কোন কিছু ভাল লাগছে না বলে জানালেন, চর এলাকা নলছিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল হালিম। এছাড়াও ওই এলাকার কৃষক আলতাফ হোসেনের দুই বিঘা, আমজাদ হোসেনের আড়াই বিঘা ও নুরুল ইসলামের দুই বিঘা সহ প্রায় ৩০০ জন কৃষকের পাট তলিয়ে গেছে। পানি কমে যাওয়ায় জমির পর জমি পঁেচ নষ্ট হওয়া আবাদ চোখের সামনে দেখে প্রলাপ বকছেন অনেক কৃষক। কচুয়া এলাকার কৃষক বাবলু প্রধান জানান, লক্ষাধিক টাকা খরচ করে করলার আবাদ করেছি। যখন করলা তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসারের উন্নতি করবো, ঠিক তখনি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে তার ওঠা সম্ভব বলে জানালেন ওই কৃষক। কৃষকরা জানান, করোনায় করলা, মরিচ, লাউ, টমেটো, শশা সহ বিভিন্ন সবজির আবাদে লোকসান গুনতে হয়েছে। সে কারণে লাভের আশায় চরের অধিকাংশ কৃষকই পাট ও বর্ষালী ইরি ধানের চাষ করেন। অবশ্য প্রতিবছর এসব আবাদ করে লাভের মুখও দেখেছেন তারা। কিন্তু এবার সে আশা ধুলিসাৎ হয়েছে তাদের।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৩৭শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে পাট ও ৩ হাজার ২শ’ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল আবাদ হয়।
একই মাসে পর পর দুই দফা বন্যায় প্রায় ৭শ’ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। অন্তত ৫ হাজার কৃষকের ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান জানান, বীজতলা নষ্ট হওয়ায় কৃষি অফিস কর্তৃক ভাসমান বীজতলা তৈরি ছাড়াও কৃষকদের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে।