"বাংলাদেশের প্রখ্যাত ছড়াকার ও সাহিত্যিক সংগঠক কবি ও ছড়াকার একেএম শহীদুর রহমান বিশু ৯ আগস্ট ২০২০ রোববার ভোর ৫ টায় পাকপাড়া শহীদ রুমি রহমান এর ভাড়া বাসায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহ.......রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ৩ পুত্র সন্তান ও ২ কন্যাসহ বহু আত্মীয়স্বজন বন্ধবান্ধব শুভাকাঙ্খি ও ছড়াকার ও সাহিত্যিকগণকে রেখে গেছেন। কেরামতিয়া মসজিদ মাঠে মরহুমের নামাজের জানাযা শেষে মুন্সিপাড়া কবরস্থানে স্ত্রীর কবরে পাশে শায়িত করা হয়।
কবিও ছড়াকার গীতিকার নাট্যকার নাট্যশিল্পী ও সংগঠক একেএম শহীদুর রহমান বিশুর জন্ম রংপুরের মুন্সিপাড়ায় ১৯৪১ সালের ১৯ জানুয়ারী। পিতা-মরহুম নছিমুদ্দিন আহমেদ, মাতা-মরহুমা সাহেরা খাতুন। বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা। তাঁর বাবা ছিলেন সংস্কতি অনুরাগী মানুষ। সরকারী চাকুরীজীবী হয়েও তিনি সংগীত সাধনা করতেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায় এই পরিমন্ডলে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৫১ সালে তিনি ছিলেন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। বাবার চাকুরীসূত্রে তখন তাঁদের অবস্থান বগুড়ার নন্দীগ্রামে। তখন একদিন মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে তিনি হঠাৎ জীবনের প্রথম কবিতার লাইন লিখেন ‘হে ব্বিচালক তুমি হে মহান/তোমারই কাছে সকলে সমান’। ১৯৫৮ সালে একেএম শহীদুর রহমান বিশু’র প্রথম ছড়ার বই ‘অর্পন’ প্রকাশিত হয়। সত্তরের দশকের প্রথম দিকে দিনাজপুরে জেলা স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক কবি কাজী কাদের নেওয়াজ ও নাজিমুদ্দিন হলের প্রতিষ্ঠাতা হেমায়েত আলীর আহবানে নওরোজ সাহিত্য আসরে কবিতা পড়তে উপস্থিত হতেন। এরপর ১৯৬২ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রস্থ ‘অপেক্ষা’ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থের পান্ডুলিপি দেখে দিয়েছিলেন পল্লী কবি জসিমউদ্দিন এবং ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী কাদের নেওয়াজ। এই বই প্রকাশের পর কিছু অর্থ ও কবিখ্যাতি আসে। এছাড়াও কয়েকটি ছড়াগ্রন্থ, শিশুতোষ গল্প ও একটি স্পর্শ নামে উপন্যাশ রয়েছে।
১৯৬৪ সালে চিত্রনায়ক রহমানের ‘মিলন’ ছায়াছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে তিনি রেডিও পাকিস্তানের রাজশাহী কেন্দ্রের অনুমোদিত গীতিকার হন। ‘৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর রেডিওতে তাঁর প্রথম ঈদের গান প্রচারিত হয়। রংপুর ও রাজশাহী রেডিওর জন্য তিনি অসংখ্য ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, আধুনিক, বাউল, ইসলামী, ভাটিয়ালী, ঠুমরি, রাগ প্রধান ও গজলসহ নানা ধরনের গান ও গীতি-নকশা লেখেন। সুস্থ্য সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চার লক্ষে ১৯৭৮ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অভিযাত্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। প্রকাশনা ও সম্পাদনা ঃ ১৯৮৪-৮৬ তে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রচারিত হয় শহীদুর রহমান বিশু’র লেখা ও পরিচালনায় ‘রংপুরের জারী’ ও ‘নাইওরী’ গীতি অলেখ্য দু’টি। অভিযাত্রিক সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করেন, যৌথভাবে সম্পাদনা করেন রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা। ১৯৯০-৯৬ পর্যন্ত দৈনিক যুগের আলোর সাহিত্য পাতার দায়িত্বপালন করেন। বর্তমানে ‘উত্তরমেঘ’ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়াও নিয়মিত স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক ও ছোট কাগজে ছড়া কবিতা লিখে ছিলেন। প্রাপ্ত সম্মানা ঃ ভারতের শিলিগুড়ি, আসাম, গৌরীপুর, ঢাকা ও পাবনায় বিভিন্ন সংগঠক কর্তৃক পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন। ২০১১ সালে তিনি পান রংপুর পৌরসভার সিনিয়র সিটিজেন এওয়ার্ড এবং ২০১৫ সালে ‘রঙধনু ছড়াকার সম্মানা’ লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা ও তিন পুত্রের জনক। ২০১৬ পল্লী কবি জসীমউদ্দিন সাহিত্য পুরষ্কার ও ২০১৭ তে অভিযাত্রিকের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সম্মাননা, ছড়া সংসদ রংপুর কর্তৃক রফিকুল হক দাদু ভাই ছড়াকার সম্মাননা ২০১৯, সাহিত্য পত্রিকা মৌচাক কর্তৃক ছড়া সম্মাননা ২০১৮, রঙধনু ছড়া সম্মাননা ২০১৮সহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন।