‘১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির এক বেদনাবিধুর দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাই আজকের এই দিনে জোর দাবি জানাচ্ছি, বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনি এখনো পলাতক আছে, তাদের দেশে ফিরে এনে দ্রুত বিচার কার্যকর করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এ দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। পরে দুপুরে মানবভোজ বিতরণ করা হয়।
এর আগে সকাল বেলা ১১টায় মহানগরীর কুমারপাড়া দলীয় কার্যালয়ের পাশে স্বাধীনতা চত্বরে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগ নেতা লিটনের নেতৃত্ব পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও দিনটি উপলক্ষ্যে শনিবার (১৫ আগস্ট) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী মহানগরীর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর থেকে রাজশাহীজুড়ে পালন করা হয় নানান কর্মসূচি। প্রতিটি কর্মসূচি থেকেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানানো হয়।
সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেনী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। আমাদের নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকিত বই বেশি বেশি পড়তে হবে।’
সভায় সাবেক সহ-সভাপতি মাহফুজুল আলম লোটন, মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নিঘাত পারভীন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক হোসেন ও রেজাউল ইসলাম বাবুল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আজাদ ও অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু, সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দোলন, সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহম্মেদ লিমন, সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফ.ম.আ জাহিদ, সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কামার উল্লাহ সরকার কামাল, সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য আহসানুল হক পিন্টু, ডা. তবিবুর রহমান শেখ, রবিউল ইসলাম, মকিদুজ্জামান জুরাত ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণাসহ মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতির জনকের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর খন্দকার, রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক একেএম হাফিজ আক্তার, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
শোকদিবস উপলক্ষে সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এ ছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ বিভিন্ন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে আলাদাভাবে জাতীয় শোকদিবস পালন করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এদিন সকাল ১০টায় ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টায় রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে ‘হে পিতা তোমায় নিয়ে কবিতা’ শিরোনামে আবৃত্তি অনুষ্ঠান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
অন্যদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিশু সদন ও সেফহোম, ছোটমনি নিবাস, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন স্কুল ও এতিমখানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা, হামদণ্ডনাত পরিবেশন, মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি উপলক্ষে বাদ জোহর মসজিদসমূহে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ ছাড়া নিজ নিজ আয়োজনে বিভিন্ন মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ দিন বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের রাজশাহী কার্যালয় বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। আর এদিন সন্ধ্যায় তথ্য ও গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়।