রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের কারণে ধূমপানের বিস্তার বা ব্যবহার কিছুটা কমেছে। করোনাকালের আগে অনেক ধূমপায়ীর দিনে যেখানে এক প্যাকেট সিগারেট লাগতো এখন তারা ৪-৫টাতেই দিন পার করছে। আবার কিছু ধূমপায়ী ইতোমধ্যেই ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই ধূমপান ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি ভাবছেন। গত এক সপ্তাহে রাজশাহীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫৪ জন ধূমপায়ীর সঙ্গে সাক্ষাতকারকালে এ তথ্য জানা গেছে। আর বর্তমান মহামারিতে ধূমপানের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়ে সংবাদ সংস্থা এফএনএস ছাড়াও প্রতিদিনের সংবাদ ও দৈনিক বার্তা পত্রিকা জনসচেতনতায় অনেক খবর ফলাও করে প্রকাশ করেছে। ফলে বলা যায়, ধূমপায়ী কমানোর ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছে। এ কারণে এসব পত্রিকার সাফল্য কামনা করে রোববার (১৬ আগস্ট) সকালে এসিডি’র পক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুল।
এদিকে তথ্য প্রদানকালে জানা যায়, করোনা সংক্রমণ আতঙ্কে ৪ জন ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। আর ৩৫ জন ধূমপান কমিয়ে দিয়েছেন। তবে এ ৩৫ জনের মধ্যে ১৩ জন ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বাকী ১৫ জন আগের মত ধূমপান করেছেন। তবে এ ১৫ জনের মধ্যে ৭ জন করোনায় আক্রান্তের ভয়ে সিগারেটের পুরো প্যাকেট ক্রয় করেন বলে জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে রাজশাহীর একটি বাটা শো-রুমে কাজ করেন সুজন আলী (২২)। তার কাছে ধূমপান বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘বন্ধুদের কাছে শুনেছি- সিগারেটে নাকি করোনায় আক্রান্তের ভয় থাকে। তাই এখন সিগারেট একেবারে কমিয়ে দিয়েছি। এখন ৩-৪ টিতেই দিন চলে যাচ্ছে।’
আব্দুস সবুর (৪৫) নামে একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা করোনাকালে ধূমপান পরিত্যাগের বিষয়ে বলেন, “মাঝেমধ্যেই ‘আইইসিডিআর’র নিয়মিত ব্রিফিংয়ে করোনাকালে ধূমপান পরিত্যাগের বিষয়ে বলতো। করোনায় ধূমপায়ীরা বেশি আক্রান্ত কিংবা তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বেশি বলে অবহিত করা হতো। এ ছাড়া আমাকে সব সময় এসিতেই থাকতে হয়। এজন্য সবকিছু বিবেচনা করে দেখলাম- ধূমপান ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকারে আসে না। এজন্য ধূমপানকে চিরতরে ‘না’ বলেছি।”
রাজশাহীর একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও ধূমপান কমাতে পারছি না। তবে আগে যখন সিগারেট সেবনের প্রয়োজন হতো তখন দোকানে গিয়ে একটি/দু্িট সিগারেট ক্রয় করে সেবন করতাম। তবে সেই অভ্যাসের পরিবর্তন হয়েছে। এখন পুরো সিগারেটের প্যাকেট ক্রয় করি। পাবলিক প্লেসে কিংবা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখন আর সিগারেট সেবন করি না। এ ছাড়া সিগারেট সেবনের আগে হাতে জীবাণু থাকার ভয়ে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধৌঁত করে সেবন করি।’
আব্দুল্লাহ আল-মামুন নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, “করোনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে- ধূমপান কতটা ক্ষতিকর। প্রতিদিন ‘ডাব্লিউএইচও’ কিংবা ‘আইইসিডিআর’র সতর্ক বার্তা শুনতে শুনতে ধূমপান ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব ও পাশের জনকেও ধূমপান ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করছি।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসর বলেন, ‘ধূমপান ক্ষতি করে বটে। কিন্তু করোনার কারণে এটি ছাড়া কিংবা কমিয়ে দেয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।’
উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘লক্ষ্য করছি- করোনার কারণে রাজশাহীতে ধূমপায়ীরা ধূমপান কমিয়ে দিয়েছে। আরেকটি ভালো দিক হলো- নগরীর পাবলিক প্লেসগুলোতেও ধূমপান অনেকটা কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এখন জেলা প্রশাসন যদি তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধে পদক্ষেপ নেন তাহলে নগরীতে ধূমপান আরও কমে আসবে বলে আশা করছি।’
রাজশাহীর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. মোহাইমেনুল হক বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বের হওয়া ড্রপলেট থেকে করোনা ছড়ায়। সেই ব্যক্তি যদি ধূমপায়ী হয়-তাহলে তার ত্যাগ করা ধূমপানের ধোঁয়া থেকেও করোনা ছড়াতে পারে। করোনা আক্রান্তের প্রধান ক্ষেত্র হলো শ্বাসযন্ত্র ও ফুঁসফুঁস। যা ধূমপায়ীদের আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তি ধূমপায়ী হলে তার মৃত্যুর সম্ভাবনাও অনেক বেশি। এজন্য উচিত- যারা ধূমপায়ী তাদের ধূমপান ত্যাগ করা।’