নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর চিহ্নিত বিশেষ এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের বরাদ্দকৃত অর্থে নির্মিত সরকারী ঘর নির্মাণে অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানমে’র বিরুদ্ধে। একক সিদ্ধান্ত ও নিজের ইচ্ছামাফিক ঐ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গত ৯ আগস্ট উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন’র নির্বাচিত সভাপতি মি.বংকিম মানখিন এ অনিয়মের বিরুদ্ধে জেলা প্রসাশকের বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ আরো ৫টি জায়গায় এর অনুলিপি বা কপি দেন ঐ আবেদনকারী।
অভিযোগ ও প্রকল্প এলাকা ঘুরে জানা যায়, সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলায় বিশেষ অঞ্চল হিসেবে এখানে বিভিন্ন জাঁতি ও গোষ্ঠীর আবাসস্থল রয়েছে। গারো, হাজং, কুচ,হদি,বানাই সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করছে। স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৩৯ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। এ বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে ঐ সম্প্রদায়ের দরিদ্র,হতদরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারের গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সরকারী ১৯৭৭ সালে স্বীকৃতি প্রাপ্ত মাতৃ সংগঠন টি.ডব্লিউ.এ উপজেলা সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের সাথে সমন্বয় করে উপকারভোগীদের প্রাথমিক তালিকা বাচাই ও মাস্টার রোল তৈরী করেন। পরবর্তীতে টি.ডব্লিউ.এ এর অগোচের মনগড়া ঠিকাদার নিয়োগ করে ঐ প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করে আসছেন ইউএনও ফারজানা খানম। প্রস্তুত তালিকাটি রদবদল করে ঐ কর্মকর্তার যোগসাজসে ঠিকাদার বিপ্লব কৃষ্ণ রায় দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের একই সম্প্রদায়ের মাঝে চারটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে টি.ডব্লিউ.এ নেতৃবৃন্দের। ঐ বরাদ্দ পাওয়া চারটি ঘরের উপকারভোগীরা ঠিকাদারের নিজস্ব বাড়িতে কাজ করতো বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্বজনপ্রীতি আর নি¤œমানের সামগ্রি দিয়ে সরকারী ঐসব ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের অনুলিপি দিয়েছে ট্রাইবাল ওয়েফেয়ার এর চেয়াম্যান বংকিম মানখিন। অপরদিকে ৫টি ঘর নির্মানকারী ঠিকাদার গোপাল সেনের সাথে যোযোগের চেস্টা করেও তার মন্তব্য নেওয়া যায়নি।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ক্রীড়া উপকরণ সামগ্রির জন্য বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকা এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি। ঐ অর্থ বছরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদেয় উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণের জন্য বরাদ্ধকৃত ১০লক্ষ টাকা বিতরনে গড়িমসি করেন। এ টাকার সমুদয় অর্থ ফেরৎ গিয়েছে বলে ট্রাইবাল নেতাদের জানালে তাৎক্ষনিক বিষযয়টি জেলা প্রসাশককে অবহিত করা হয়। পরে ঐ জেলা প্রসাশকের নির্দেশে গত ৮(জুন) শিক্ষার্থীদের মাঝে এ টাকা বিতরণ করা হয়। ঐ ঘর নির্মাণ প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি ও নি¤œমানের সামগ্রি দিয়ে ঘর নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার বিপ্লব রায় প্রতিবেদককে মুঠোফানে জানান, আমি কাউকে ঘর পাইয়েদিতে কোন ভুমিকা রাখিনি। ঠিকাদার হিসেবে ১০টি ঘর আমি নির্মাণ করেছি,গোপাল সেন ৫টি ঘর নির্মান করেছে। ঘর নির্মাণে আমি কোন অনিয়ম করিনি।
এবিষয়ে ইউএনও ফারজানা খানম’র কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন,আমি চ্যালেঞ্জকরে বলতে পারি এ প্রকল্পে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা মতেই প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করছি। টি.ডব্লিউ.এ এর কতপিয় ব্যক্তিকে প্রকল্প কমিটির সদস্য না রাখায় ক্ষোভে আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগটি দাড়করিয়েছে, সরকারী ফরমেট মতে ঐ সম্প্রদায়ের বা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন’র কোন লোক প্রকল্প কমিটিতে রাখতে হবে এমন কোন নির্দেশনা নেই, ২০১৮-২০১৯ এর যে বিষয়টি উথ্যাপন করা হয়েছে সে সময়তো আমি ছিলামনা অন্য ইউএনও ছিল তো সেটি উল্লেখ করার কি কারণ থাকতে পারে। আমি সরকারী নির্দেশনা ব্যতিরেকে কোন কাজ করিনি বা করার কোন সুযোগ নেই। সেই প্রেক্ষিতে আমি বলতে পারি অভিযোগকারীদের অভিযোগের কোন ভিত্তি বা সত্যতা নেই।