প্রকৌশলীর ওপর হামলাকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে গণপূর্ত অধিদফতরে কার্যালয়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন থেকে হামলাকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও তার অনিয়মকৃত সকল কাজ বাতিলসহ হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ পিডব্লিউডি ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির আয়োজনে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি মো. ছাইদুজ্জামান। সংগঠনটির রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আয়াতুল্লাহর পরিচালনায় মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ গণপূর্ত অধিপ্তর শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের জেলা শাখার সভাপতি মো. বাবর আলী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর স্বপন, ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইডিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল নোমান, জেলা কমিটির সহসভাপতি মেরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মেরাজুল আলম, কাউন্সিলর মোখলেসুর রহমান প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বর্তমান করোনাকালীন সময়ে গণপূর্তের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন নিজের ও পরিবারের জীবনের তোয়াক্কা না করে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল সমূহের চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র চালু রাখতে দৈনন্দিন রক্ষণামূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন স্বাধীনতাবিরোধী চক্র শোকের মাস আগস্টে এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। অনৈতিক সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করে প্রকৌশলীরা যখনই নিম্নমানের কাজ বন্ধ করে দেন তখনই প্রভাবশালী ঠিকাদাররা তাদের ওপর চড়াও হয়। এ রকম অনেক ঘটনা রয়েছে। প্রকৌশলীরা সেসব ঘটনা চেপে যান। কিন্তু এ রকম অবস্থা চলতে পারে না। এখন থেকে যে ঠিকাদারই প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করবেন তার লাইসেন্স বাতিলসহ তাকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে তারা প্রকৌশলী দেলওয়ার হোসেনের ওপর হামলাকারী ঠিকাদার শাহাবুল মঞ্জু লিটনের ‘সাফির ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড বিল্ডার্সের’ লাইসেন্স বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানটির চলমান সকল কাজের কার্যাদেশ বাতিল করারও দাবি জানান।
প্রসজ্ঞত, নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করায় রাজশাহী গণপূর্ত কার্যালয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের (২৮) ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছেন ঠিকাদার এবং তার সহযোগী। এ সময় ওই প্রকৌশলীর কক্ষের ল্যাপটপ এবং প্রিন্টারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। সোমবার (১৭ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এ হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে আহত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারী লিটন এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী রাজশাহী মহানগরীর সাধুর মোড় এলাকার বাসিন্দা শাহাবুল মঞ্জুর লিটন (৩১) ও তার ম্যানেজার মহানগরীর উপকণ্ঠ চক কাপাসিয়ার বাসিন্দা আতিকুর রহমানকে (৩২) গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইফতেখার আলম বাদী হয়ে মামলা করলে গ্রেফতারকৃত ওই দুইজনকে মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। পরে মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রিমান্ড আবেদনসহ গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়। হামলার ঘটনায় গণপূর্ত কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
হামলার শিকার গণপূর্ত বিভাগ-২ কার্যালয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত দেলোয়ার হোসেন জানান, কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় ভূমি অফিস নির্মাণ কাজ চলছে। রোববার বিকালে তিনি এ নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে ঢালাই কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কাজের সিডিউলে চার ইঞ্চি ঢালাই দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও দেয়া হচ্চিল আড়াই ইঞ্চি। এ সময় তিনি কাজটি বন্ধ ঘোষণা করে ঘটনাস্থল থেকে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।
এ ঘটনার জের ধরে ঠিকাদার লিটন এবং তার ম্যানেজার আতিক সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার অফিস কক্ষে আসেন। এসয় লিটন ঘটনাস্থল থেকে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে লিটন এবং তার সহযোগী তার ওপর হামলা চালান। এ সময় লিটন কাঠের চেয়ার দিয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে বেধড়ক পেটান। ফলে তার ডান চোখের উপরের অংশে আঘাত লেগে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাত রয়েছে। হামলার পর লিটন এবং তার সহযোগী আতিক ব্যাপক ভাঙচুর চািলান। তার কক্ষের চেয়ার, টেবিল, ল্যাপটপ ও প্রিন্টার ভেঙে ফেলেন।