মহানগরীর উপশহর এলাকায় প্রায় তিন কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। এ অর্থে এলাকায় রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু এ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আটটি বাড়ি। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ আছে আর দুই মাসের কিছু বেশি সময়। বার বার মাইকিং করা হলেও রহস্যজনক কারণে বাড়িগুলোর অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়া হয়নি। ফলে প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই উন্নয়ন কাজ অসমাপ্ত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। ‘রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী অক্টোবর পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের উপশহর ১ নম্বর সেক্টরের অনেকেই রাস্তা সংলগ্ন সরকারি জমি দখলে নিয়ে স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন। সিটি করপোরেশন উন্নয়ন কাজ শুরুর আগে ১১টি রাস্তার দুই পাশে দখল করা জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। মাপজোখ করে লাল চিহ্ন দিয়ে সীমানাও নির্ধারণ করেও দেয়া হয়। এরপর ১০টি রাস্তার পাশের ১৩০টি বাড়ির বাসিন্দারা তাদের স্থাপনা ভেঙে নেন। সেসব এলাকায় দ্রুতই উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে। শুধু বি-৫৯০ থেকে বি-৫৯৭ নম্বর পর্যন্ত আটটি বাড়ির মালিক রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) এ নির্দেশনা মানেনি। তারা স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় শুরু হয়নি কাজ। ফলে রাস্তাটি প্রশস্ত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, আমরা সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে থাকতে চাই। যার কারণে আমরা এলাকার ১৩০টি বাড়ির প্রাচীরসহ অন্যান্য স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছি। কিন্তু আটটি বাড়ি এখনও কিছুই সরায়নি। তাদেরও সরিয়ে নেয়া উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বি-৫৯০ নম্বর বাড়িটি রাসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকাম্মেল আলীর। পৈত্রিক সূত্রে তিনি বাড়ির অংশ পেয়েছেন। বিএনপিপন্থী এই প্রকৌশলী বিএনপির সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের মেয়াদকালে বাড়িটির সামনের সরকারী জায়গা দখলে নিয়ে চারতলা ভিতসহ দুটি দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন। বি-৫৯০ নম্বর বাড়িটি রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) থেকে তিনতলার নকশা অনুমোদন করা। কিন্তু সেটি এখন চারতলা। অবৈধ এ ভবন সম্প্রসারণের সময় এলাকাবাসী আরডিএতে অভিযোগ করেছিলেন। আরডিএ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাতের অন্ধকারে কাজ শেষ করা হয়েছে।
ভবন না ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী মোকাম্মেল আলী বলেন, বাড়িটি আমার বাবার। ভাইয়েরা বাসায় বসবাস করেন। তাদের সাথে কথা বলুন। তারা যদি সরকারি জায়গায় ঘর নির্মাণ করে থাকে তাহলে তা অপসারন করে নেবে।
বি-৫৯৭ নম্বর বাড়ির মালিক রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তত্বাবধায়ক ডা. আবদুল মতিন খোকনের। তিনি সরকারি জায়গায় ঘর তৈরি করে মেস হিসেবে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। আর সিটি করপোরেশনের ড্রেনের ওপর ঘর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
ওই এলাকার বি-৫৯০/২ নম্বর প্লটের মালিক রফিকুল আলম নামের এক ব্যক্তি। সরকারি জায়গা দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষার জন্যই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তার প্রয়োজনে আমি নিজ উদ্যোগে প্রাচীর ভেঙে দেব।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এই আটটি বাড়ির লাল দাগ চিহ্নিত অংশ থেকে অবৈধ স্থাপনা নিজ উদ্যোগে ৯ আগস্টের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার জন্য গত ৪ আগস্ট তৃতীয়বারের মতো মাইকিং করা হয়। তখন বলা হয়, এটিই শেষ মাইকিং। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নিলে রাসিক নিজেই অপসারণ করবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। কিন্তু এখনও অপসারণের কাজ শুরু হয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার এবং রাসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোকাম্মেল আলীর অনিচ্ছার কারণেই অপসারণের কাজ শুরু হয়নি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর আনার বলেছেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ থেমে যাওয়ার কোন কারণ নেই। একটু বিলম্ব হচ্ছে মাত্র।
এ বিষয়ে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী খায়রুল বাশার বলেন, উচেছদ কার্যক্রম থেমে যায়নি। যে কোন মূল্যে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রাস্তা প্রশস্ত করা হবে।