অবশেষে ঠাঁই মিলল রাজশাহী মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ের ঐতিহ্যবাহী সেই যুদ্ধ বিমানটির। দীর্ঘদিন ধরে অযতেœ অবহেলার পর ঠাঁই হলো মহানগরীর আলিফ-লাম মিম ভাটার মোড়ের চৌ-রাস্তায়। এফ-৬ মডেলের এই বিমানটি’র সকল প্রকার সংস্কার কাজ শেষে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিমান বন্দর রোড সংলগ্ন স্থান আলিফ-লাম-মিম ভাটার মোড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি দলকে ক্রেনে করে বিমানটি স্ট্যান্ডের ওপর স্থাপন করেন। এ সময় সেখানে শত শত নারী-পুরুষের ভিড় দেখা যায়। ঝলমলে আলোক সজ্জায় শোভা পাচ্ছে বিমানের নতুন রুপ।
এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে এই যুদ্ধবিমানটি মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে নামিয়ে আলিফ-লাম-মীম ভাঁটা এলাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর দীর্ঘ আট মাসেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধবিমানটি নির্মাণাধীন সড়কের ওপর কাদা মাটিতে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে যুদ্ধবিমানটি রং করা এবং বিভিন্ন অংশ জোড়া দিয়ে বিমানটি প্রতি স্থাপনের কাজ শুরু করা হয় চারদিন আগে।
চট্টগ্রাম থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘বাবুই’ আর্কিটেকচারের ২১ সদস্যের দল যুদ্ধবিমানটি বসানোর কাজ করছেন। বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে এই কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। যুদ্ধবিমানটি প্রতিস্থাপনের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। যুদ্ধবিমানটি প্রতিস্থাপনসহ চত্বরটি বিউটিফিকেশন কাজটি গত জুলাইয়ের মধ্যেই শেষ করার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এজন্য রাজশাহী সিটি করপোরশনের (রাসিক) কাছে এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এ তথ্য নিশ্চিত করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘বাবুই’ আর্কিটেকচার ফার্মের ওনার এস এম কুতুব উদ্দিন বলেন, আলিফ-লাম-মীম ভাঁটা এলাকাস্থ মোড়ের স্ট্যান্ডের ওপর যুদ্ধবিমানটি সম্পূর্নভাবে তোলার কাজ শেষ করে তারা চলে যাবেন। এরপর রাজশাহী সিটি করপোরেশন কাজটির মেয়াদ বাড়ালেই আসবেন এবং আলিফ-লাম-মীম ভাঁটা এলাকার এই চত্বরের বিউটিফিকেশনের কাজ শুরু করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার খায়রুল বাশার বলেন, সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে এই কাজটি চলছে এটা ঠিক। তবে আমি এখানে নতুন দায়িত্বে কাজ শুরু করায় বিষয়টি পুরোপুরি জানা নেই। ঠিকাদার চিঠি দিয়ে থাকলে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নতুন স্থানে ঠাঁই হওয়া যুদ্ধ বিমানটি এখন সংযুক্ত হল চারটি রাস্তার প্রবেশমুখে। এখানে মহানগরীর 'রাজশাহী-নওগাঁ থেকে মোহনপুর, রাজশাহী-নাটোর সড়ক, পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ে ক্রসিংয়ের ওপর র্যামসহ ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ২০২.৫০ মিটারের ফ্লাইওভার এবং ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে র্যাম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩২ টাকা। এর সঙ্গে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলিফ-লাম-মীম ভাঁটা থেকে বিহাস পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ফোর লেন সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এর কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এ সড়কের প্রবেশ মুখেই বসানো হল যুদ্ধবিমানটি। আর এর মধ্যে দিয়েই দীর্ঘ দুই যুগ পর জায়গা বদল করে নতুন ঠিকানা পাচ্ছে এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি। বিমানবাহিনীর দেওয়া এ যুদ্ধবিমানটি গত টানা ২৫ বছর মহানগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ের ঐতিহ্য হয়ে ছিল। নতুন সড়কটি রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর সড়কে গিয়ে মিলিত হয়েছে। দুই সড়কের সংযোগস্থলে থেকে এফ-৬ মডেলের ‘যুদ্ধবিমান’ নির্দেশনা দেবে ‘বিমানবন্দরের’ দিকে। এটি হবে নতুন সড়কের মূল আকর্ষণ।
এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সকালে যুদ্ধবিমানটি সিঅ্যান্ডবি মোড়ের নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে নামানোর কাজ শুরু হয়। স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার কাজী শাহজাহান জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের আকাশসীমার সুরক্ষায় এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি কেনা হয়েছিল। বিমানটি ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সার্ভিস দিয়েছে। পরে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন একটি অব্যবহৃত বিমান সিঅ্যান্ডবি মোড়ে স্থাপনের আবেদন জানায়। অনুমোদনে পর ১৯৯৪ সালে রাজশাহী সিঅ্যান্ডবি মোড়ে কংক্রিটের তৈরি স্ট্যান্ডের ওপর এ বিমানটি স্থাপন করে সিটি করপোরেশন।
যুদ্ধবিমানটি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। এ মডেলের বিমানের ইঞ্জিন সাধারণত ভেতরেই থাকে। তবে এটিতে ইঞ্জিন নেই। কিন্তু এখনও দুই পাখার সঙ্গে ড্রপ ট্যাংক আছে। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিমানটি মডেল হিসেবে রূপ দেওয়া হলেও এর পাইলটের বসার স্থানটি ঠিক রাখা হয়।