সুদীর্ঘ ৭২ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর সন্ত্রাসীদের এত টার্গেট কেন? এটি এদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। কারন বাংলাদেশে আর কোন রাজনৈতিক দলকে এ রকম চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়নি। বাঙ্গালি জাতির প্রথম স্বাধীন দেশ, স্বাধীন ভাষা আর সমগ্র বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বপ্ন বাস্তবে রুপান্তরিত করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর সেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক ও তাঁর সপরিবারকে বুলেটের আঘাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। রাজনীতির সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা না থাকা বঙ্গবন্ধু পরিবারের নারী-শিশুরাও রেহাই পায়নি। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ পরিবারের ১৬জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশের বাইরে থাকায় ওই চক্রের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির গভীর ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এদেশে রাজনীতিতে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার।
ক্রমাগত রাজনৈতিক অস্থিরতা আর স্বৈরশাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্তি পাওয়ার জনপ্রত্যাশার চাপে দেশে ছুটে আসেন শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্যে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এদেশের সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে অব্যাহত সংগ্রাম করে যান। রাজনীতির ময়দানে তাঁকে দমাতে থেমে থাকেনি স্বাধীনতাবিরোধী এ পরাজিত শক্তি। শুরু হয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর একের পর এক সশস্ত্র হামলা। মৃত্যুর হাত থেকে বহুবার অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেছেন। ঘাতক চক্র কোনভাবেই যখন তাদের লক্ষ্যে সফল হচ্ছিল না তখন তারা তাদের মনস্কামনা পূর্ণ করতে এবং শেখ হাসিনাকে এ পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। এ প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বকে সমূলে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র সমাবেশে চালানো হয় স্মরণকালের ভয়াবহ নির্মম গ্রেনেড হামলা। তাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম আইভী রহমান মৃত্যুবরণ করেন। তাছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহত হয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও নিহত হন ২৪ জন নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মী। আর তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়ে এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের অনেকেই শরীরে স্পিøন্টার বহন করে দুর্বিষহ যন্ত্রণায় ভুগছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পরদিন মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। বিএনপি-জামাত সরকার আমলে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। তাই বিচার কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে ২১ আগস্ট মামলার নতুন করে তদন্তের উদ্যোগ নেয়। এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে অনেক অজানা তথ্য। ২০০৮ সালের ১১ জুন দেয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। তখন জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হামলার ছক করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে এসেছিল হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২।
১৬ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত, রায়সহ বই) বিজি প্রেস থেকে সুপ্রিমকোর্টে পৌঁছে। এ হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়সহ ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথিপত্র ২৭ নভেম্বর ২০১৮ সালে হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
গত বছরের ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলটির নেতা হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড দেন আদালত। যাবজ্জীবন দন্ড পাওয়া এই ১৯ আসামির মধ্যে ১৩ জনই পলাতক রয়েছে।
শেখ হাসিনা ও নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা
১৯৮৮’ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের মিছিলে পুলিশ ও বিডিআর এর গুলিবর্ষনে ৭ জন নিহত, আহত ৩ শতাধিক, ১১ সেপ্টেম্বর ’৯১-এ গ্রীন রোডে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় গুলিবর্ষন, ২৩ সেপ্টেম্বর’৯৪ সালে ঈশ্বরদী ও নাটোর রেলস্টেশনে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ, ৮ ডিসেম্বর’ ৯৫ সালে রাসেল স্কয়ারের কাছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভাষণ-দানরত অবস্থায় সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষনের শিকার হন। ৮ মার্চ’ ৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সভাস্থলে মাইক্রোবাস থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি ও বোমা বর্ষন করে। এতে ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়। ৪ মার্চ’ ৯৬ সালে টঙ্গি বিশ্ব এস্তেমা থেকে ফেরার পথে অস্ত্রধারীর হামলায় ১ জন গ্রেফতার হয়, ৫ জানুয়ারি’ ৯৭ সালে রমনা বটমূলে শেখ হাসিনা সভাস্থলে প্রবেশ কালে ২৩ রাউন্ড গুলিসহ ১ জন গ্রেফতার, ১১ আগস্ট’ ৯৯ সালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গুলি বর্ষন ও বোমা হামলা করা হয়। ২৬ এপ্রিল ৯৭’ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বোমা নিক্ষেপ করে গাড়ীসহ পালিয়ে যাবার প্রাক্কালে ১০ জন আটক হয়। ২০০০ সালের ২১ জুলাই কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থলে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বোমা উদ্ধার হয়। এতে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে জনসভায় বোমা বিস্ফোরনে ২ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালের ৮ মার্চ নওগাঁয় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা হয়। একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা করা হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনার ভাষণ শেষ হওয়া মাত্রই হামলাকারীরা গ্রেনেড চার্জ করতে থাকে। মুহূর্তেই নেমে আসে মৃত্যুর বিভীষিকা। বয়ে যায় রক্তের বন্যা। আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটাতে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেড মেরেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা। তাঁকে হত্যার বিকল্প পন্থা হিসেবে ওইদিন তাঁর বুলেট প্রুফ গাড়িতে ঘাতকরা ছুঁড়েছিল বৃষ্টির মতো গুলি। তিন স্তর বিশিষ্ট বুলেট নিরোধক ব্যবস্থা সম্পন্ন মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটিই শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়েছিল। সর্বশেষে গাড়ির চাকায় গুলি করে থামানোর চেষ্টা করা হয়। গুলির আঘাতে গাড়ির বাম দিকের সামনের ও পেছনের দুটি চাকা পুরোপুরি পাংচার হয়ে যায়। গাড়ির জানালার কাঁচ আধা ইঞ্চি পরিমান ঢেবে যায়। পেছনের কাঁচ ৬/৭ইঞ্চি গর্ত হয়ে যায়। গুলির আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন তাঁর নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব:) মাহবুবুর রশিদ। এছাড়াও স্পিøন্টারবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন আওয়ামী লীগের প্রথমসারির নেতারা। সেদিন বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ? বিশেষ মহলের নির্দেশে রক্ষকেরা ভক্ষকের ভূমিকা পালনে ব্যস্ত ছিলো। বরং আহতদের উদ্ধার করতে আসা নেতা-কর্মী ও সাধারন মানুষের ওপর চালানো হয় গুলি ও টিয়ার শেল। নৃশংস এ ঘটনায় মুহূর্তেই বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ধিক্কার ওঠে এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে। এরকম বিভৎসতা আর নির্দয়তা দেখে বিষ্মিত হয় বিশ্ববাসী। শুরুতেই বিচার কার্যক্রম নিয়ে শুরু হয় নাটক। এর অংশ হিসেবে পার্থ সাহা নামে এক যুবককে শেখ হাসিনার হত্যার হুমকিদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে ৪/৫ দিন চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এরপর নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশরপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামের টেন্ডলবাড়ির এক ভবঘুরে যুবক জজ মিয়াকে ধরে এনে সাজানো হয় নাটকের পর্ব। তিনি হয়ে পড়েন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসামি। পরে সব গোমড় ফাঁস হয়ে যায়। সেদিন যে ট্রাকের ওপর (ঢাকা-মেট্রো-ট-১১-৩০৯৮) যে মঞ্চ বানানো হয়েছিল সেটি ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় সিআইডির কর্মকর্তা এসএস রুহুল আমিন ওই স্থান থেকে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠিয়ে দেন। সিআইডি পরিদর্শন শেষে ট্রাকটিতে ১৩টি গুলি ও ২৬টি স্পিøন্টারের চিহ্ন পান। তদন্তের সময় ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাব ও এসবির সদস্যরা ছিল। ওই ৫টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাকটি প্রথমে আটক করা হলেও সিআইডি পরে তা ছেড়ে দেয়। ট্রাকের মালিক কে তাও সিআইডি জানে না। অন্যদিকে আলামত হিসেবে উদ্ধার করা নিহত ও আহতদের জুতা এবং স্যান্ডেল, ভ্যানেটি ব্যাগ সংরক্ষণ করা হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা গ্রেনেডের স্পিøন্টারও নষ্ট হয়ে গেছে। নিহতদের রক্তমাখা মাটি, কাপড় ও ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত সংরক্ষণ করা হয়নি। ২২ আগস্ট পার্শ্ববর্তী রেলওয়ে সুপার মার্কেটের ২য় তলার পশ্চিম দিকের পাবলিক টয়লেটের পাশে একটি লাল রংয়ের ঝুড়ি থেকে এবং ২১ আগস্ট রাতে একই মার্কেটের সামনে থেকে দুটি অবিস্ফোরিত আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। ২২ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ২৬ ও ৯০ সেলের মাঝামাঝি নর্দমার পাশ থেকে আরো একটি আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। গ্রেনেডের গায়ে এসপি এইচজিআর-৮৪, জিআর ইন এআরজিএসএইচ-৭-৯৩-০০২ লিখা ছিল। সবক'টি গ্রেনেড উদ্ধারের পরপরই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। যা ছিল উদ্দেশ্যমূলক। এভাবে মামলার আলামত নষ্ট করায় মামলাটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলায় ২০০৮ সালে চার্জশিটের সঙ্গে আলামত দেয়া হয়েছে ৭৯টি। অবাক করা বিষয়Ñগ্রেনেডের একটি লিভার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রশীদের কাছ থেকে গায়েব হয়ে গেছে। কারণ সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে সে আলামত তিনি বুঝিয়ে দিতে পারেননি (চার্জশিটের ১৭ ও ১৮ পৃষ্ঠায় এ ব্যাপারে বর্ণনা করা হয়েছে)। লন্ডনের জেনস ইন্টিলিজেন্স রিভিউয়ের ২০০৪ সালের আগস্ট সংখ্যায় বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যে ২৫ হাজার গ্রেনেড উদ্ধার করা হয় তাও আর্জেস গ্রেনেড। সুপ্রিম কোর্ট আইন সমিতির তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর ছোঁড়া গ্রেনেডও একই ধরনের আর্জেস গ্রেনেড। এসব গ্রেনেডের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ছোঁড়া আর্জেস গ্রেনেডের হুবহু মিল রয়েছে।
২১ মে’ ২০০৪ সালে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী সিলেট হযরত শাহজালাল (রাঃ) মাজার জিয়ারতের সময় এক ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই ৩ জন মারা যায়। আর আহত হয় ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে বহনকারী গাড়ীবহরের লোকজনসহ প্রায় ৫০ জন। গ্রেনেড হামলায় হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে জানা যায়, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) কমান্ডার মুফ্তি হান্নান ও আরো দু’জন যোদ্ধা এ গ্রেনেড হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারী হবিগঞ্জে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এমএস কিবরিয়াসহ ৫জন নেতাকর্মী নিহত হন।
এই আগস্ট মাসেই বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে অসংখ্য বোমা হামলা হয়। এমনকি জঙ্গিরা দেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে ৬৩ টি জেলার ৩শ’টি স্থানে সিরিজ বোমা হামলা চালায়। তাদের এ হামলার হাত থেকে মসজিদ-মাজারও রেহাই পায়নি। তৎকালীন সময়ে হাওয়া ভবন ও জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জেএমবি, হুজি, হিজবুত তাহরির, বাংলা ভাই এবং শায়খ আব্দুর রহমানসহ শীর্ষ জঙ্গিরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। এদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল ঘাতকচক্র।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হলেও অধিকাংশ হামলা মামলার ঘটনার বিচার এখনো প্রক্রিয়াধীন। অনেক অপরাধী পলাতক রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে পৌছে। যা উচ্চ আদালতের বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।
স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের কালো থাবা বারবার আঘাত হানলেও মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় প্রকৃত অপরাধীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। স্বজনহারা পরিবার ও ভূক্তভোগীরা তাকিয়ে আছেন এ সরকারের আমলেই অপরাধীদের বিচার হবে। স্বদেশ সন্ত্রাসমুক্ত ও কলঙ্কমুক্ত হবে।
লেখক, ২১ আগস্ট ট্র্যাজেডি ॥ রক্তাক্ত বাংলাদেশ